প্রেক্ষাপট
প্রকাশ ঘোষ বিধান
প্রকাশ : ১৩ মার্চ ২০২৪ ১০:৪৫ এএম
আপডেট : ১৩ মার্চ ২০২৪ ১০:৫২ এএম
বাংলা সাহিত্যে প্রায়ই ঘুমের প্রসঙ্গ আসে নানা নামের মোড়কে। ভাতঘুম, রাতঘুম,
ঘন ঘুম, আলগা ঘুম, সময়ের এবং অসময়ের ঘুমÑকতই না তার রকমফের। সাসপেন্স থ্রিলারের মতো
টানটান ঘুমও রয়েছে। সব ঘুমের আলাদা আমেজ। আড্ডা, ভূরিভোজের আগে যদি বাঙালিকে কিছু বেছে
নিতে বলা হয়, নিঃসন্দেহে তা হবে ঘুম। শুধু বাঙালি নয়, গোটা মনুষ্যজাতির সংস্কৃতিতেই
একেবারে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রয়েছে ঘুম। আপাতদৃষ্টে ঘুমকে মনে হতে পারে জীবনের অতি সাধারণ
বিষয়। তবে যারা ঘুমের সমস্যায় ভোগেন তারাই কেবল বুঝতে পারেন ঘুমের মর্ম। ঠিকমতো ঘুম
না হলে কোনো কিছুই ঠিকঠাক চলে না। গবেষকরা বলছেন, বিশ্বের অন্তত ১০০ মিলিয়ন মানুষের
পর্যাপ্ত ঘুম হয় না। এ ছাড়া ২২ মিলিয়ন মার্কিনি নিদ্রাহীনতায় ভোগে। গবেষণায় আরও দেখা
যায়, ছুটির দিনে দুই ঘণ্টা বেশি ঘুমালে শরীর ৪৫ মিনিট বিলম্বিত হয়ে পড়ে। ফলে ছুটির
দিনের রাতে ঘুম কম হয়। পর দিন শরীর ও মন কাজের উপযোগী থাকে না।
আধুনিক গবেষণা বলছে, বিশ্বজুড়েই পর্যাপ্ত ঘুমের সংকটে শারীরিক এবং মানসিক সমস্যা
গুরুতর আকার ধারণ করছে। হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যা, অবসাদ, মাত্রাতিরিক্ত উদ্বেগ
ক্রমে বেড়েই চলেছে সমাজে। চিকিৎসক এবং গবেষকরা এর পেছনে অনেকাংশেই দায়ী করছেন ঘুমের
অভাবকে। রাতের ঘুম ঠিক না হলে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, বাচ্চারা স্মৃতি হারায়,
মেধা কমে যায়। বড়রা হৃৎপিণ্ড ও স্নায়ুর সমস্যায় পড়ে। ওবেসিটি, ডায়াবেটিস, অ্যালঝাইমারের
আশঙ্কা বাড়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) তাই এ স্লিপ লসের সমস্যাকে এখন এপিডেমিক
ঘোষণা করেছে। ডব্লিউএইচও বলছে, ক্রনিক স্লিপ ডিপ্রাইভেশন ক্যানসারের আশঙ্কা বাড়াচ্ছে
কম ঘুম। নিদ্রাহীনতার ফলে স্বাস্থ্যহানির হুমকিতে আছে বিশ্বের জনসংখ্যার ৪৫ শতাংশ।
চিকিৎসকরা বলেন, ভালো ঘুমের সঙ্গে স্মৃতিশক্তির বেশ নিবিড় যোগসূত্র রয়েছে। সাধারণত
বৃদ্ধবয়সে স্বাভাবিকভাবেই স্মৃতিশক্তি লোপ পায়, মানসিক দুর্বলতাও তৈরি হয়। তাই শেষ
বয়সে অনেকেরই অনিদ্রা সমস্যা দেখা দেয়। মধ্যবয়সে একজন মানুষ নিয়ম মেনে ঘুমালে তার সুফল
বৃদ্ধবয়সেও পেতে পারে।
পর্যাপ্ত ঘুম হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখে ও নিয়ন্ত্রণে রাখে ওজন। অতিরিক্ত অথবা খুব
কম ঘুমালে তার প্রভাব পড়বে আপনার আয়ুষ্কালের ওপর। ২০১০-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৫০
থেকে ৭৯ বছর বয়সে মৃত মহিলার বেশিরভাগেরই মৃত্যু হয়েছে কম বা বেশি ঘুমানোর জন্য। হার্টের
অসুখ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, অকালবার্ধক্যের থেকে শরীরে জ্বলুনি অনুভূত হয়। গবেষণা বলছে,
যারা রাতে ছয় ঘণ্টা বা তার কম ঘুমায়, তারাই বেশিরভাগ এ ধরনের সমস্যায় ভোগে। কারণ তাদের
রক্তে ইনফ্লামেটরি প্রোটিনের পরিমাণ বেড়ে যায়। ২০১০-এর গবেষণায় দেখা গেছে, যারা কম
ঘুমায়, তাদের শরীরে বেশি পরিমাণে দেখা দেয় সি-রিঅ্যাকটিভ প্রোটিন, যার ফলে হার্ট অ্যাটাকের
ঝুঁকি বাড়ে।
সুস্থতার জন্য সুনিদ্রার প্রয়োজনীয়তা এবং নিদ্রাহীনতা ও এর চিকিৎসা, নিবারণ ও মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলা জরুরি। ঘুম মানুষের একটি অত্যাবশ্যকীয় শারীরতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। পরিমিত ঘুম সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে। হৃদরোগসহ নানা রোগের ঝুঁকিও কমায়। প্রতিদিন ছয় থেকে সাত ঘণ্টা ঘুমানো দরকার। নির্দিষ্ট এ ঘুম হলে প্রতিদিন সকালে আমরা সুস্থ অনুভূতি দিয়ে দিন শুরু করতে পারি। নয়তো অনিদ্রায় বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। মেজাজ খারাপ থাকে। বিশ্ব ঘুম দিবসের মাধ্যমে প্রতি বছর ঘুমের প্রয়োজনীয়তা এবং সমাজে এর প্রভাবের ব্যাপারে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা হয়।