× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

মহাকাশ সম্ভাবনায় পৃষ্ঠপোষকতা দিন

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ১২ মার্চ ২০২৪ ১০:৩০ এএম

মহাকাশ সম্ভাবনায় পৃষ্ঠপোষকতা দিন

মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়- এই বাক্যটি আমাদের সমাজে বহুল চর্চিত। আমরাও বিশ্বাস করি, স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়েই একজন সৃজনশীল-সৃষ্টিশীল মেধাবী পৌঁছে যেতে পারেন নির্দিষ্ট লক্ষ্যে এবং এর দ্যুতি রাষ্ট্র-সমাজকে আলোকিত করার পাশাপাশি নিয়ে যেতে পারে নতুন উচ্চতায়। ১১ মার্চ ‘মহাকাশে নতুন স্বপ্নের ডানা’ শিরোনামে প্রতিদিনের বাংলাদেশের শীর্ষ প্রতিবেদনে রকেট গবেষণায় দুজন গবেষকের দৃঢ় উচ্চারণের মধ্য দিয়ে স্বপ্ন বাস্তবায়নের যে দিগন্ত উন্মোচন হলো তা আমাদের শুধু আশার ক্ষেত্রই বিস্তৃত করেনি, একই সঙ্গে সক্ষমতার পাশাপাশি দেশের মেধাবীদের উৎকর্ষতার সাক্ষ্যও দিয়েছে। কৃতিমান উদ্ভাবক ও মহাকাশবিজ্ঞানী আজাদুল হক এবং ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী-গবেষক নাহিয়ান আল রহমান অলির উদ্যোগ এবং প্রত্যয়ের জন্য আমরা তাদের অভিনন্দন জানাই। প্রত্যাশা করি, তাদের হাত ধরে বাংলাদেশ প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এগিয়ে যাবে।


প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিলম্বে হলেও মহাকাশবিজ্ঞানে নিজেদের দক্ষ করে তোলার প্রশিক্ষণে পা রেখেছে দেশ। ক্ষেত্রও প্রস্তুত। দেশে বৃহৎ পরিসরে নিজস্ব প্রযুক্তির মাধ্যমে রকেট তৈরির প্রশিক্ষণ শুরু হওয়ার যে প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে এর ফলে মহাকাশ ঘিরে নতুন স্বপ্ন ডানা মেলতে শুরু করেছে। স্বপ্ন মানুষের এগিয়ে যাওয়ার কত বড় শক্তি সঞ্চারক এর বিস্তর নজির আমাদের সামনে আছে। স্বপ্নবাজ মানুষদের নিয়ে মনীষীদের অনেক অনুসরণীয় উক্তিও আছে। আমেরিকার মানবাধিকারকর্মী নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র সেই কবে বলেছেন, ‘স্বপ্ন পূরণের জন্য তোমার সবগুলো সিঁড়ি দেখতে পাওয়ার দরকার নেই, শুধু প্রথম সিঁড়িটা দেখতে পেলেই হবে।’ আমরা স্মরণ করছি খ্যাতিমান জার্মান কবি ও দার্শনিক জোহান গোথেকে। তিনি বলেছিলেন, ‘যদি কাল কিছু অর্জন করতে চাও তবে আজ থেকেই স্বপ্ন দেখা শুরু করো’।

উদ্ভাবক-গবেষক-বিজ্ঞানী আজাদুল হক এবং নাহিয়ান আল রহমান অলি ওই মনীষীদের উক্তির সমান্তরালে যেন তাদের স্বপ্ন-প্রত্যয় দাঁড় করিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার সাবেক গবেষক ও বর্তমানে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ম্যাক্স গ্রুপের সিইও আজাদুর রহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন এবং অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে দেশে একটি রকেট ইকোসিস্টেম তৈরির লক্ষ্যে সহসাই কাজ শুরুর কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘একটি রকেট বানানো কঠিন কিছু নয়। আমরা এক হাজার রকেট বানাতে চাই। আমাদের ছেলেমেয়েরাই এগুলো বানাবে। আমরা অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যে রকেট বানাতে যাাচ্ছি তার সেল থেকে শুরু করে নজেল পর্যন্ত সবই বাংলাদেশে তৈরি।’ নাহিয়ান আল রহমান অলি বলছেন, ‘এখন টেকনোলজি খুব ফাস্ট। বাংলাদেশি যে গবেষকরা এখন যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া-ভারত-চীনে রয়েছেন তাদের নিয়ে একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছি। সরকারি নীতি ও আর্থিক সহায়তা পলে ২০২৬-২৭ সাল নাগাদ বাংলাদেশ থেকেই ন্যানো স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে একটি ভেহিকল টেস্ট করব। সেটি আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের নামে হবে। নজরুল-১ রকেট ২৬০ কেজি পালোট নিয়ে লো-অরবিটে যেতে সক্ষম হবে। এভাবে একদিন আমরা নিজেরাই বঙ্গবন্ধু-৫ বা ৬ উৎক্ষেপণ করতে পারব।’

উদ্ভাবক-গবেষক দুজনের লালিত স্বপ্নের সাফল্যের পাশাপাশি সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই, সম্ভাবনার জমিন আরও উর্বর করতে তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়ানোর। বিজ্ঞানের উৎকর্ষের কালে মহাকাশ প্রযুক্তি একটি অফুরন্ত সম্ভাবনার খাত হিসেবে চিহ্নিত। প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের অভিমত, আগামী দশকের মধ্যেই মহাকাশ বিজ্ঞান হয়ে উঠবে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, বিশ্ব বাণিজ্য ও অগ্রগতির অন্যতম মূল নিয়ামক। এই প্রেক্ষাপটে আমরা মনে করি, আমাদের সম্ভাবনার ক্ষেত্র যাতে বিকশিত হয় এর জন্য সর্বোত প্রয়াস জরুরি। বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান (স্পারসো) প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর কয়েক দশক অতিক্রান্ত হলেও এর কার্যক্রম বিবর্ণ। বিজ্ঞানী সংকটের পাশাপাশি গবেষণায় মনোযোগ না বাড়িয়ে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রতিষ্ঠানটিকে বিকশিত করার তেমন কোনো প্রচেষ্টার কথা জানা যায় না। আমরা জানি, আমাদের অনেক সম্ভাবনাময় তরুণ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানা ক্ষেত্রে বিশেষ করে বিজ্ঞান-প্রযুক্তির খাতে কাজ করছেন। একই সঙ্গে এ-ও অজানা নয়, এমন অনেক মেধাবী দেশের বাইরে চলে যেতে চান এখানে তাদের কাজের উপযুক্ত প্রেক্ষাপট না থাকার কারণে। এমন বার্তা কোনোভাবেই সুখকর তো নয়ই বরং লালিত স্বপ্নের ওপর বড় ধরনের অভিঘাত।

আজাদুল হক কিংবা নাহিয়ান আল রহমান অলিদের তো বটেই, যারা এ ধরনের সম্ভাবনার আলো ছড়ানোর সক্ষমতা রাখেন তাদের পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার পাশাপাশি কাজের উপযুক্ত ক্ষেত্র তৈরি করে দিলে তা দেশ-জাতির জন্য কতটা হিতকর হতে পারে এর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ নতুন করে নিষ্প্রয়োজন। আমাদের অনেক ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা আছে তা সত্য। কিন্তু সীমাবদ্ধতা ডিঙিয়েও অনেক কিছু করার সক্ষমতা রয়েছে, তাও অসত্য নয়। দরকার শুধু যথাযথ সহযোাগিতা, দূরদর্শিতা ও প্রেরণা দেওয়ার পাশাপাশি গুরুত্ব অনুধাবনে মনোযোগ গভীর করা। মহাকাশ প্রযুক্তির উন্নয়ন দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অন্যান্য ক্ষেত্রও বিকাশের জন্য একটি গুরুত্বপূণ অনুঘটক হিসেবে কাজ করবে তা যেন দায়িত্বশীলরা ভুলে না যান। দুজন উদ্ভাবক-গবেষক সম্ভাবনার যে বার্তা দিয়েছেন রাষ্ট্রশ্রক্তিকে তা যথাযথভাবে অনুধাবন করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক দূরদর্শী কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ণ ও বাস্তবায়নে মনোযোগ বাড়ানো বাঞ্ছনীয়।

যোগ্য মানুষকে যথাযথ মূল্যায়নের পাশাপাশি তাদের কাজের ক্ষেত্র মসৃণ করাও অত্যন্ত জরুরি। যোগ্য ব্যক্তিকে যথাস্থানে বসানোর বিষয়টিও সমভাবেই গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বের অবিসংবাদিত বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা যথার্থই বলেছেন, ‘বড় স্বপ্ন পূরণ হওয়ার পথে ছোট ছোট অর্জনগুলোকে মূল্য দাও।’ আমরা জানি, সব বড় স্বপ্নই শুরু হয় এক একজন স্বপ্নদ্রষ্টার হাত ধরে। আমরা বিশ্বাস করি, প্রেক্ষাপট বদলে দেওয়ার শক্তি আমাদের নানা স্তরে অনেকেরই আছে। কিন্তু তাদের সেভাবে কাজে লাগানোর ব্যাপারে অপ্রীতিকর প্রশ্নও আছে। স্বপ্নের কারণেই মানুষ দুঃস্বপ্নকে পরাজিত করে সাফল্যের দ্বার উন্মোচন করতে পারে। প্রতিদিনের বাংলাদেশের আশাব্যঞ্জক বার্তা ‘মহাকাশে নতুন স্বপ্নের ডানা’ যে প্রেক্ষাপটে তৈরি হয়েছে সেক্ষেত্রে গভীর দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা