× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

কৃষিপণ্যেও বিষের ছড়াছড়ি!

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ১১ মার্চ ২০২৪ ১৩:১৮ পিএম

কৃষিপণ্যেও বিষের ছড়াছড়ি!

নিরাপদ খাদ্যপণ্য কিংবা স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ঝুঁকিমুক্ত খাবার প্রাপ্তির নিশ্চয়তা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। খাদ্যপণ্যে ভেজাল দিয়ে কিংবা অতিরিক্ত বালাইনাশক ব্যবহার করে অধিক হারে কৃষিপণ্য উৎপাদনের অপপ্রক্রিয়া ক্রমেই বেড়ে চলেছে, যা আত্মঘাতীর নামান্তর বলা যায়। এরই প্রতিফলন দেখা গেছে ১০ মার্চ প্রতিদিনের বাংলাদেশে প্রকাশিত প্রতিবেদনে। ‘সবজি ও গ্রীষ্মকালীন ফসলে বাড়ছে কীটনাশক ব্যবহার’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জনস্বাস্থ্যের জন্য বিষয়টি হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ৯ মার্চ রাজধানীর ফার্মগেটে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) অডিটোরিয়ামে ‘পাঁচ দশকে কীটতাত্ত্বিক গবেষণা ও উন্নয়ন এবং উদ্ভূত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যে তথ্য উঠে এসেছে তাতে আমরা উদ্বিগ্ন না হয়ে পারি না। সম্মেলনের আয়োজক বাংলাদেশ কীটতত্ত্ব সমিতির গবেষকরা উপস্থাপন করেছেন কী হারে সবজি ও গ্রীষ্মকালীন ফসলে বেড়েছে কীটনাশকের ব্যবহার। কীটনাশকের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে ক্ষতিকর প্রভাব দূর করতে যতটা সময় দরকার ততটা অপেক্ষা না করেই উৎপাদকরা সেগুলো বাজারে আনছেন এবং এক্ষেত্রে কৃষি বিভাগের যে নিয়মনীতি রয়েছে তা অমান্যের ফলে জনস্বাস্থ্য পড়েছে হুমকির মুখে। আমরা জানি, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ফসলবিনাশী কীটপতঙ্গের ‍উৎপাত বেড়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে আমরা এও জানি, কীট বালাইনাশক ব্যবহারে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে। নীতিমালা মানলে জনস্বাস্থ্য ঝুঁকিমুক্ত থাকতে পারে।


সবজি বা দানাদার শস্য উৎপাদনে বালাইনাশকের প্রয়োজন রয়েছে বটে, কিন্তু এর সঠিক কিংবা নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার সম্পর্কেও কৃষি বিভাগের নির্দেশনা রয়েছে। আমরা জানি, আধুনিক উৎপাদন ব্যবস্থায় বালাইনাশকে এমন কিছু উপাদান যুক্ত হয়েছে যেগুলো শুধু কীটপতঙ্গই নাশ করে না অধিকফলন, উৎপাদিত পণ্যের চাকচিক্যও বাড়িয়ে তোলে। ‘চকচক করিলেই সোনা হয় না’ এই বহুল প্রচলিত প্রবাদটি এক্ষেত্রে যেন প্রাসঙ্গিকভাবেই যথোপযুক্ত। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগে উৎপাদিত সবজি, ফল কিংবা শস্যদানা ক্যানসার, উচ্চ রক্তচাপ, লিভার, কিডনি, ফুসফুস ও হৃদযন্ত্রজনিত জটিল রোগ সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। কীটনাশক ব্যবহারে সচেতনতার তাগিদ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল মহলগুলোর তরফে দেওয়া হলেও এ ব্যাপারে যেকোনো ইতিবাচক প্রভাব পড়েনি। কীটতত্ত্ববিদদের অভিমত, পোকামাকড় ধ্বংস করতে কীট বা বালাইনাশকের পরিবর্তে প্রাকৃতিক বালাইনাশকে জোর দেওয়া বাঞ্ছনীয়। একই সঙ্গে এও বলা হয়েছে, সরকারিভাবে বালাইনাশকের অনুমোদন দিলেই শুধু হবে না, বরং তা সহজলভ্য করে কৃষকের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। আমরা জানি, কৃষি খাতে এখন বেসরকারি বেশ কিছু উন্নয়ন সংস্থার কাজের পরিধি বিস্তৃত হয়েছে। নিরাপদ কৃষিপণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারিভাবে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।

কারখানায় উৎপাদিত, হাতে উৎপাদিত কৃষিজ কিংবা আমিষজাতীয় খাদ্যদ্রব্য কোনো কিছুই অসাধুদের অতি মুনাফা লালসার বাইরে নয়। সেই কবে ডিএল রায় (দিজেন্দ্রলাল রায়) লিখেছেন, ‘কত কিছু খাই, ভস্ম আর ছাই’। তার বিখ্যাত গানের এ পঙ্‌ক্তির সঙ্গে আমাদের বিদ্যমান বাস্তবতার অমিল খুঁজে পাওয়া ভার। খ্যাতিমান কবি ভারতচন্দ্র রায় গুণাকরও বলেছেন, ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে’। কিন্তু অনাকাঙ্ক্ষিত হলেও সত্য, প্রযুক্তিগত প্রক্রিয়ার উৎকর্ষের কারণে এখন দুধের উৎপাদন ও সরবরাহে সনাতন ব্যবস্থা পাল্টে আধুনিকায়নের ছোঁয়া লাগার পাশাপাশি বেড়েছে ভেজালের দৌরাত্ম্যও।

জীবনধারণ কিংবা স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য নিরাপদ খাদ্যপণের বিকল্প নেই। কিন্তু খাদপণ্যের বদলে আমরা বিষ খাচ্ছি, এরও সাক্ষ্য মেলে ফিরে ফিরে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করা কিংবা অতি মুনাফার লোভে প্রাণঘাতী কর্মকাণ্ডে অনেকেই যুক্ত। কীট বা বালাইনাশকের আবির্ভাবের ইতিহাস খুব দীর্ঘ নয়। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, উনিশ শতকের ষাটের দশকে আমেরিকার মিসিসিপিতে আলুক্ষেতে এক ধরনের ভয়াবহ কীট আক্রান্ত হলে প্রথম কীটনাশকের সাধারণ ব্যবহার শুরু হয়। বিংশ শতাব্দীতে কৃষি খাতে কীটনাশক ব্যবহারের বিস্তৃতি ঘটে। কীটনাশক জৈব কিংবা অজৈব পদার্থ হতে পারে এবং সাধারণত তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত। যেমনÑ খাদ্যবিষ, স্পর্শবিষ ও ধোঁয়াবিষ। ঘরবাড়ি, শস্যগুদাম বা গ্রিন হাউসের মতো আবদ্ধ স্থানে সংরক্ষিত পণ্যের ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে সাধারণত ধোঁয়াবিষ বা বিষগ্যাস সর্বাধিক ব্যবহৃত। অধিকাংশ জৈব কীটনাশক উদ্ভিদজাত এবং স্পর্শবিষ। রাসায়নিক সংযুক্তির ভিত্তিতে কৃত্রিম জৈব কীট বা বালাইনাশক বিভিন্নভাবে শ্রেণিবদ্ধও। আর এজন্যই এগুলোর ক্ষতিকর প্রভাব গবেষণায় নির্ণয় করে ব্যবহারের মাত্রাও নির্ধারণ করেছেন গবেষকরা। কিন্তু তা অনুসৃত হচ্ছে না বিধায়ই জনস্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে।

কিছুদিন আগে বাংলাদেশ ‍কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা শাকসবজি কিংবা অন্যান্য ফসলে কীটনাশকজনিত দূষণের মাত্রা ও স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে গবেষণা করে জানিয়েছেন, দেশে গত এক দশকে সবজিসহ কৃষিপণ্যের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৩৮ শতাংশ। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলোÑ সেই সঙ্গে বেড়েছে কীটনাশকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারও। শাকসবজি কিংবা ফল কেনার পর তা খাওয়ার জন্য তৈরি করার আগে কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেকাংশেই নিরসনের অবকাশ থাকে। যেমনÑ অনেকক্ষণ এগুলো পানিতে ডুবিয়ে রাখার পাশাপাশি যেগুলো রান্না করে খেতে হয় সেগুলো ভালো করে ফুটিয়ে নেওয়া এবং ডুবন্ত শাকসবজি কিংবা ফল আরও কয়েক দফা ধুয়ে নেওয়া ইত্যাদি। কিন্তু আমরা দেখছি, এ ব্যাপারে সচেতনতার ঘাটতি রয়েছে। স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং জীবনঝুঁকি নিরসনে উৎপাদক-ভোক্তা সব পক্ষেরই সর্বাগ্রে জরুরি সচেতনতা। একই সঙ্গে উৎপাদক কিংবা ব্যবসায়ীদের শুধু লাভ বা বাণিজ্যের জন্য এমন কিছু করা উচিত নয়Ñ যা জনস্বাস্থ্যের জন্য অভিঘাতের বড় কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

আমরা মনে করি, উৎপাদক থেকে ভোক্তা পর্যন্ত কীটনাশকের যথেচ্ছ ব্যবহারের কুফল সম্পর্কে সচেতন করতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের যূথবদ্ধ প্রয়াস জরুরি। কৃষিবিজ্ঞানীদের সঙ্গে নিয়ে সমন্বিত বালাইনাশক পদ্ধতি ব্যবহারের পরামর্শ কার্যক্রম জোরদার করা গুরুত্বপূর্ণ। তা ছাড়া কীটনাশক কেনাবেচা ও প্রয়োগে নজরদারি-তদারকির ব্যাপারেও জোর দিতে হবে। খাদ্য জীবন বাঁচায়, কাজেই খাদ্যপণ্য স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ যাতে না হয় তা নিশ্চিত করার দায় কমবেশি সবারই। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা