কেসুই সোদর্ন
প্রকাশ : ১১ মার্চ ২০২৪ ১৩:০৮ পিএম
২০২৩ সালের ১০ মার্চ মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও সৌদি আরবের
মধ্যকার দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বিতার অবসান ঘটার সম্ভাবনা দেখা দেয়। ২০১৬ সাল-পরবর্তী
সময়ে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক ওই সময়ে থিতু হয়। ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তো বটেই কূটনৈতিক
আঙ্গিকেও এ বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ। দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কোন্নয়নের ক্ষেত্রে ইউরোপীয়
ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং আঞ্চলিক শক্তি ওমান ও ইরান মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা
পালন করতে পারেনি। এক্ষেত্রে চীনই বড় ভূমিকা পালন করেছে। মধ্যপ্রাচ্যে চীন সুকৌশলে
নিজেদের প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যকার সম্পর্কোন্নয়নে চীনের
ভূমিকার বিষয়টি সাক্ষ্য দেয়, এই অঞ্চলে তারা চীনের কর্মতৎপরতাকে সাদরে বরণ করছে। তবে
মধ্যপ্রাচ্যে চীনের প্রভাব বিস্তারের কাজ সম্প্রতি শুরু হয়েছে এমনটি ভাবার কারণ নেই।
রিয়াদ ও তেহরানে এক দশক আগে চীনের প্রভাব বিস্তার শুরু হয়। মধ্যপ্রাচ্যে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হেজেমনি এড়ানোর জন্যই কি সৌদি আরব চীনের দিকে ঝুঁকে পড়ছে?
বিষয়টির পক্ষে-বিপক্ষে নানা মতামত রয়েছে। আপাতত সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যকার সম্পর্ক
স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে এটিই সর্বাধিক গুরুত্বের দাবি রাখে।
এক বছর পর দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক স্থিতিশীল রয়েছে।
২০২৩ সালের গ্রীষ্মে দুই দেশে নিজেদের দূতাবাস আবার চালু হয়। চলমান হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ
এবং লোহিত সাগরে হুতিদের উত্থানের বিষয়কে কেন্দ্র করেও দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কের
অবনতি ঘটেনি। ফলে মধ্যপ্রাচ্যে চীনের ভূরাজনৈতিক প্রভাবের বিষয়টি নতুন করে আলোচনায়।
তারপরও চীন মধ্যপ্রাচ্যে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। সৌদি আরব-ইরানের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কোন্নয়নের
পরও দেশটি নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকের ভূমিকা পালন করছে। চীন ভালোমতোই জানে, আন্তর্জাতিক
সম্পর্কে কৌশলী কূটনৈতিক সম্পর্ক যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লব
এবং ১৯৮০-৮৮ সাল পর্যন্ত আরব-ইরাক যুদ্ধের সময়েও চীন নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যে
ছিল। তারা কোনো একটি পক্ষে ঝুঁকে যায়নি বলে কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বেইজিংকে বড়
সংকটের মুখে পড়তে হয়নি। সৌদি-ইরান সম্পর্ক কিছুটা উন্নতির আলো দেখলেও বেইজিং এই অঞ্চলে
কিছুটা নড়বড়ে অবস্থানে রয়েছে। তবে প্রদর্শনীর আওতায় তারা ইরানের একাংশকেও রাখে। এভাবে
দুই দেশের প্রতি সমান গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টি তারা নিশ্চিত করে। মধ্যপ্রাচ্যে চীনের
সতর্ক অবস্থানকে দুটো আঙ্গিকে বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। প্রথমত, বিগত কয়েক বছরে ইরান
ও সৌদি আরবের নীতিনির্ধারকদের অনেকেই চীনের কাছে বিভিন্ন সময় অভিযোগ করে জানিয়েছে,
চীন কোনো একটি পক্ষে বেশি ঝুঁকে পড়ছে। ইরান-সৌদি আরবের অস্থিতিশীল সম্পর্কোন্নয়নের
পর ইরানের সংসদের কয়েকজন সদস্য প্রথা ভেঙে চীনের জিনজিয়াং ও তাইওয়ান পলিসির সমালোচনা
করেন। দ্বিতীয়ত, মধ্যস্থতা করায় চীনের ভাবমূর্তি কিছুটা উজ্জ্বল হয়েছে বটে কিন্তু বেইজিং
ভালোমতোই জানে এ সম্পর্ক তাসের গড়া প্রাসাদের মতোই ভঙ্গুর। এই মুহূর্তে ইরান ও সৌদি
আরব গাজা পরিস্থিতিতে গভীর মনোযোগ রেখেছে। পাশাপাশি লোহিত সাগরে হুতিদের বাণিজ্যতরিতে
আক্রমণের বিষয়টিও রয়েছে। তবে ইয়েমেনের বিদ্রোহের বিষয়ে দুই দেশ ভিন্ন মেরুতে অবস্থান
করছে। দুই দেশের মধ্যকার স্থিতাবস্থা ইয়েমেনের বিদ্রোহ থেকেই জটিলতার মুখে পড়তে পারে।
লক্ষণীয় অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণেও দুই
দেশের অবস্থান মধ্যপ্রাচ্যে নতুন মোড়ক পায়। সামাজিক সংকটকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করিয়ে
অতীতেও দুই দেশ ভূরাজনৈতিক সংকটে নিজেদের অবস্থানকে স্থির করাতে চেয়েছে। ভবিষ্যতেও
যে এমন কোনো অজুহাতে দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি ঘটবে না এমনটি নিশ্চিত বলা ভার। চীন
তো বটেই, বিশ্ব সম্প্রদায়ও মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতাবস্থা প্রত্যাশা করে। সৌদি আরব-ইরান
সম্পর্কের মাধ্যমে স্থিতিশীলতা গড়ে তোলার সুযোগ গড়ে উঠেছে। যেমনটি বলেছি, এই স্থিতাবস্থা
যেকোনো সময় সংকটের মুখে পড়তে পারে। মধ্যপ্রাচ্যের এ দুই আঞ্চলিক শক্তির সঙ্গে কৌশলী
সম্পর্ক ধরে রাখার জন্য চীন তাই সতর্ক অবস্থানেই রয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের আল মনিটর পত্রিকা থেকে অনুবাদ : আমিরুল আবেদিন