× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

দরিদ্রের গ্রাসে লোভাতুরদের থাবার প্রতিকার চাই

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ১০ মার্চ ২০২৪ ১৩:০৮ পিএম

দরিদ্রের গ্রাসে লোভাতুরদের থাবার প্রতিকার চাই

রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতায় যথার্থই বলেছেন, ‘এ জগতে হায় সেই বেশি চায় আছে যার ভূরি ভূরি,/রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি’। বিদ্যমান সমাজবাস্তবতায় এ কাব্যপঙ্‌ক্তি আরও কত বেশি প্রাসঙ্গিক এরই উৎকট নজির মিলেছে ৯ মার্চ প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর শীর্ষ প্রতিবেদনে। আমরা জানি, দেশের মোট জনগোষ্ঠীর একটি উল্লেখযোগ্য অংশের জীবনযাপন কঠিন পরিস্থিতিতে পড়ায় সরকার খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিসহ সামাজিক নিরাপত্তামূলক বহুমুখী কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু আমরা দেখছি, এই কর্মসূচিগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল পক্ষগুলোর অসাধুদের লোভাতুর থাবায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর প্রতিবেদনে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির নানা স্তরে অনিয়ম-দুর্নীতি-স্বেচ্ছাচারিতার যে চিত্র উঠে এসেছে তা আমাদের উদ্বিগ্ন না করে পারে না। প্রশ্ন হচ্ছে, সরকারের মহৎ উদ্যোগ বাস্তবায়নের পথে যারা নিজেদের হীনস্বার্থ চরিতার্থকরণে ফিরে ফিরে কদাচারের সৃষ্টি করছে তাদের শক্তির উৎস কোথায়।


টিসিবির পণ্য বিক্রি ও ওএমএস কর্মসূচি কেন্দ্র করে অনিয়ম-দুর্নীতি নতুন নয়। ইতঃপূর্বে প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ কাবিটা, কাবিখা, বয়স্ক ভাতা ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে অনিয়মের চিত্র উঠে এসেছিল। দরিদ্র বা নিম্ন আয়ের মানুষ যাতে সহজে খাদ্যপণ্য সংগ্রহ করতে পারে, এই লক্ষ্যে সরকার খোলাবাজারে খাদ্যপণ্য বিক্রির কর্মসূচি চালু করে। একই উদ্দেশ্যে ট্রেডিং করপোরেশন বাংলাদেশ বা টিসিবিও সাশ্রয়ী দামে খাদ্যপণ্য বিক্রি করছে। এই উভয় কর্মসূচিই পরিচালিত হচ্ছে ডিলারদের মাধ্যমে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চাল-আটা দুই পণ্য বিক্রির সিদ্ধান্ত থাকলেও ডিলাররা একসঙ্গে তা দিতে চান না। তা ছাড়া ওজনে কম দেওয়ার পাশাপাশি অসাধু জনপ্রতিনিধিদের যোগসাজশে আত্মসাৎ হচ্ছে গরিবের হক। অনেকেই দীর্ঘসময় লাইনে দাঁড়িয়েও পণ্য পাচ্ছেন না, আবার অসাধুদের সঙ্গে সখ্য থাকলে লাইন ছাড়াই সহজে সচ্ছলরাও পণ্য কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। অসাধু জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে কার্ড বিতরণের ক্ষেত্রেও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। তারা টাকার বিনিময়ে নয়-ছয় তো করছেনই, একই সঙ্গে যাদের এই কর্মসূচির আওতাভুক্ত হওয়ার কথা নয় তারাও সুযোগ নিচ্ছেন। আরও অভিযোগ আছে, দুস্থদের কার্ড না দিয়ে ওই জনপ্রতিনিধিদের সচ্ছল আত্মীয়-স্বজনকে কার্ড দেওয়া হয়েছে। আমরা জানি, শুধু খাদ্যশস্য বিক্রেতাদের ডিলার হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু অভিযোগ আছে, এর ব্যত্যয় ঘটিয়ে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় বলবান নেতাকর্মীরা এ কর্মসূচি পরিচালনা করছেন। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ডিলার ও জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের দুর্নীতিবাজদের যোগসাজশে যে চক্র গড়ে উঠেছে তাতে একদিকে দরিদ্ররা সরকারের প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, অন্যদিকে ক্ষমতাবানরা নিজেদের আখের গোছাচ্ছেন।

সরকার বিপুল ভর্তুকি দিয়ে অতিদরিদ্রদের জন্য খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, সামাজিক নিরাপত্তাসহ আরও কিছু কার্যক্রম চালালেও প্রকৃতপক্ষে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা যে ভেস্তে যাচ্ছে এরই ফের নজির মিলেছে প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর অনুসন্ধানে। উপকারভোগী যাচাই-বাছাইয়ে গলদ দূর করতে জেলা কিংবা উপজেলাভিত্তিক বিশেষ কর্মপরিকল্পনা নেওয়ার তাগিদ ইতঃপূর্বে এই সম্পাদকীয় স্তম্ভেই আমরা দিয়েছিলাম। এও বলেছিলাম, দুস্থদের হক নিয়ে যারা অনিয়ম-দুর্নীতি করে নিজেদের উদরপূর্তি করছেন তাদের প্রতি কোনো অনুকম্পা দেখানোর সুযোগ নেই। কিন্তু আমরা দেখছি, সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে এসব ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার নির্দেশ সত্ত্বেও অনিয়মের ছায়া সরছে না। প্রশ্ন হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর দায়িত্বশীলরা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ক্ষমতা পেয়ে যা খুশি তা-ই করার অপপ্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে কীভাবে। গরিবের হক যদি সচ্ছল কিংবা বলবানদের পেটেই যায় তাহলে সরকারের গণমুখী উদ্যোগের সুফল দৃশ্যমান হবে কীভাবে? মহানগর-নগরসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় খাদ্যবান্ধব ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি কেন্দ্র করে অসাধুদের চক্রান্তের জাল কতটা বিস্তৃত এবং কীভাবে লুটপাট চলছে তা উঠে এসেছে ওই প্রতিবেদনে ভুক্তভোগীদের জবানিতে। ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটি, তদারকি-নজরদারির অভাব এবং দায়িত্বহীনতার বিরূপ প্রভাবে সরকারের এত বড় জনকল্যাণমূলক কর্মসূচির সুফল থেকে ভুক্তভোগীরা বঞ্চিত হচ্ছেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি উক্তি প্রায়ই নানা মহলে উচ্চারিত হয়। বঙ্গবন্ধু প্রশ্ন রেখেছিলেন, সাড়ে সাত কোটি বাঙালির প্রত্যেকের জন্য ত্রাণ হিসেবে কম্বল এসেছে। জনপ্রতি একটি করে কম্বল এলে তারও একটি থাকার কথা। কিন্তু সেটি কই? আমাদের স্মরণে আছে, দুর্নীতিবাজদের লক্ষ করে বঙ্গবন্ধু আরও বলেছিলেন, ‘সবাই পেল তেলের খনি, সোনার খনি আর আমি পেলাম চোরে খনি।’ বায়ান্ন বছর অতিক্রান্তে সামাজিক-অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন-অগ্রগতি তো বটেই, নানা সূচকে দেশ অনেক এগিয়েছে; এও সত্য। সরকারের দৃঢ়প্রত্যয় সত্ত্বেও সংবাদমাধ্যমে প্রায়ই দুর্নীতির যে চিত্র উঠে আসে এমনটি না ঘটলে দেশ আজ কোথায় যেত এও সহজেই অনুমেয়। আমরা এই সম্পাদকীয় স্তম্ভেই এ প্রশ্ন রেখেছিলাম, একজন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সদিচ্ছাই কি যথেষ্ট? প্রতি বছর সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাজেটে বড় অঙ্ক বরাদ্দ রাখা হয়। কিন্তু যাদের দায়দায়িত্ব এই বরাদ্দের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করা, তারা কতটা নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন; এর জবাবদিহি নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যারা অনাচার-দুরাচারের হোতা তাদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া চলবে না।

ওপার বাংলার খ্যাতিমান কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তার ‘জাগরণ হেমবর্ণ’ কাব্যগ্রন্থে ‘বঞ্চনা’ কবিতায় লিখেছেন, ‘…সিংহদ্বার খুলে গেছে ভেতরে দেখি শুধুই শূন্যতা/হা হা করছে অন্ধকার/কেউ নেই, কোনো রহস্যও নয়/…আমার তীব্র অভিমান হয়/এ কি এক ধরনের বঞ্চনা নয়?’ কবির এই জিজ্ঞাসাও যেন আমাদের বিদ্যমান সমাজব্যবস্থারই অনুষঙ্গ। আমরা আশা করব, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বাস্তবায়ন ও টিসিবির পণ্য খোলাবাজারে বিক্রির ক্ষেত্রে অসাধুদের যূথবদ্ধতায় দুরাচারের যে চারণভূমির সৃষ্টি হয়েছে সরকার এর কঠোর প্রতিকার নিশ্চিত করবে। আমরা বৃক্ষের পরিচয় ফলে তা-ই দেখতে চাই। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা