× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

কূটনীতি

ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অংশীদারিত্বমূলক সম্পর্ক

ড. মো. শামছুল আলম

প্রকাশ : ০৯ মার্চ ২০২৪ ১৩:১২ পিএম

ড. মো. শামছুল আলম

ড. মো. শামছুল আলম

নিকট অতীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তার পাঠানো সেই চিঠির জবাবও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের উচ্চাভিলাষী অর্থনৈতিক লক্ষ্য সমর্থন করতে এবং উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য যৌথ ভিশনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের নতুন দিগন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। বাইডেন তার চিঠিতে বলেন, বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদারির পরবর্তী অধ্যায় শুরুর এ সময়ে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং জ্বালানি ও বৈশ্বিক বিষয়ে কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রশাসনের আন্তরিক ইচ্ছার আদানপ্রদান আমাদের ভৌগোলিক গুরুত্ব বাড়ার বিষয়টি স্পষ্ট করে তোলে। জো বাইডেন ও শেখ হাসিনার চিঠি আদানপ্রদানের বিষয়টি দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের প্রক্রিয়া হিসেবে চিহ্নিত করছেন রাজনীতি-বিশ্লেষকরা। দুর্মুখেরা অবশ্য এ বিষয়টি নিয়েও জল ঘোলা করছেন। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক একরৈখিক বিষয় নয়, এ বিষয়টি অনেকেরই বোধগম্য হচ্ছে না। কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে প্রশাসনিক মহলে এমন চিঠি আদানপ্রদান হওয়া স্বাভাবিক। যদি মার্কিন প্রশাসনের তরফে কোনো চিঠি না আসত তাহলে কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার ব্যত্যয় ঘটত। আমরা জানি, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এক বিবৃতিতে নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করলেও তা প্রত্যাখ্যান করেনি। ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার বিষয়টি শুরু থেকেই আর অস্পষ্ট থাকেনি।


আমরা দেখেছি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেসব দেশের নির্বাচনপ্রক্রিয়া নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেছে সেসব দেশের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক নয়। এ ক্ষেত্রে বেলারুশ ও ভেনেজুয়েলার উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। যদিও বলা হচ্ছে, দুই দেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের পরবর্তী অধ্যায়ের সূচনা হিসেবে এ চিঠি আদানপ্রদান তাৎপর্যপূর্ণ কিন্তু এ চিঠির ভাষাগত দিকটিও অগ্রাহ্য করার সুযোগ নেই। জো বাইডেন তার চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, ‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অগ্রগতি এবং অব্যাহত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধির মধ্যে জোরালো যোগসূত্র রয়েছে। আমার প্রত্যাশা, আপনি বাংলাদেশের সম্প্রসারণশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে দৃষ্টি রাখবেন, যার মধ্যে ন্যায্য ও পরিপূরক বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের প্রসার ঘটানোর লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণও অন্তর্ভুক্ত এবং মানবাধিকার, ব্যক্তির মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আপনার অঙ্গীকার নবায়ন করবেন।’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম বড় শক্তি। দেশটির রাষ্ট্রপ্রধানের চিঠিতে যে উচ্ছ্বাস প্রকাশিত হয়েছে তা বাংলাদেশের অর্থনীতি ও ভৌগোলিক গুরুত্ব বাড়ার দিকটিও ইঙ্গিত করে। আজ থেকে চার দশক আগেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারপ্রধানের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে। তবে এ ধরনের উচ্ছ্বাস বা বিশদ ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি বললে অত্যুক্তি হবে না। জো বাইডেনের চিঠিতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিষয়ে কাজ করার আশ্বাসও রয়েছে। যদিও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে এখনও বড় শক্তিগুলোর ভূমিকা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় দৃশ্যমান হয়নি। তার পরও জো বাইডেনের আশ্বাসের বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ। আমাদের প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে গৃহদাহের পরিপ্রেক্ষিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে নতুন করে কূটনৈতিক কার্যক্রম চালু করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এ অঞ্চলের ভৌগোলিক স্থিতিশীলতা নিয়ে যে সংকট তৈরি হয়েছে তা নিয়ে আঞ্চলিক শক্তি চীন ও ভারতও উদ্বেগান্বিত। ফলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে নতুন করে কাজ করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রেক্ষাপটের নিরিখে আমাদের কূটনৈতিক কার্যক্রম চালাতে হবে। যেহেতু বাংলাদেশ মিয়ানমার প্রসঙ্গে নিরপেক্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে সেহেতু কূটনৈতিক সমাধানের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে।

গত ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দল, সরকারবিরোধী আন্দোলন ও নেতাদের নিয়ে ক্ষমতাসীনরা অপপ্রচার করছে বলে মনে করছে বিএনপি। আমরা জানি, নির্দলীয় সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না বলে প্রথম থেকেই জোরালো অবস্থান রেখেছে। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী মে মাসে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন স্তরের নির্বাচনেও দলটি অংশ নিচ্ছে না, এমনটি স্পষ্ট। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ সরকারি দলের ‘অপপ্রচার রোধে’ নানা কর্মপরিকল্পনা নিয়েছে। প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর ওই প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে, অপতথ্য রোধের পাশাপাশি দেশের নানা সংকটের সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে ১০ কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে বাংলাদেশে সফররত যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আখতার রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন। আলোচনার বিস্তারিত কোনো তথ্য আমরা পাইনি। তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপি নতুন করে কূটনৈতিক লবিংয়ের কার্যক্রম শুরু করেছে। দেশে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির সংকট প্রসঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলো সংলাপের বিষয়টিকে এখনও গুরুত্ব দিতে পারছে না। আমাদের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংকট নিরসনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থা বাড়াতে হবে। দুঃখজনক হলেও সত্য, ক্ষমতার রাজনীতিতে এক ধরনের প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে; যা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থার জন্য ইতিবাচক কিছু হতে পারে না।

দেশের বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। দুটি দলের বড় সমর্থকগোষ্ঠীও রয়েছে। মূল্যস্ফীতি ও আর্থিক খাতে চলমান সংকট আমাদের জন্য অন্যতম সমস্যা হিসেবে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনায়। সাধারণ মানুষ এখনও রাজনৈতিক দলের কাছে সংকট নিরসনের প্রত্যাশা রাখে। যেকোনো সংকটের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সমাধানের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। দেশের মানুষ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি এখনও আস্থা রাখে বলেই রাজনৈতিক সমাধানের বিষয়টি ঘুরেফিরে আলোচিত হয়। এ সমাধানের পথ সুগম করার জন্য দলগুলোকে রাজনৈতিক কার্যক্রমের পাশাপাশি দলগুলোর মধ্যকার আস্থা বাড়ানোর বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা নিতে হয়। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে গঠনমূলক ও শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচির মাধ্যমে জনসমর্থন আদায় এবং সংকট নিরসনের সহযোগিতাপূর্ণ পরিবেশ তৈরির বিকল্প নেই। অথচ আমরা দেখছি, এ দুই দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বিভিন্ন সময় সংবাদমাধ্যমে একে অন্যের দিকে নানা বিষয়ে অভিযোগ করছেন। এভাবে রাজনৈতিক দলের মধ্যে আস্থা গড়ে তোলার কাজ কঠিন হয়ে যাচ্ছে। কিছু দিন আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বাজারে অশুভ চক্রের অপতৎপরতা প্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য নিয়ে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করতে মজুদদার ও সিন্ডিকেটগুলোকে বিএনপি পৃষ্ঠপোষকতা ও মদদ দিচ্ছে।’ একই দিন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘বাজারের নিয়ন্ত্রকরাই সরকার নিয়ন্ত্রণ করছেন।’

এভাবে পরস্পরবিরোধী রাজনৈতিক বক্তব্যে মূল সংকট থেকে আমাদের মনোযোগ সরে যায়। মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে অশুভ চক্র বহুদিন ধরেই নানা অপপ্রক্রিয়ার আশ্রয় নিচ্ছে। বাজারের কাঠামোগত সংস্কারের তাগাদা অর্থনীতিবিদরা প্রায়ই দিচ্ছেন। তবে কাঠামোগত সংস্কারের ক্ষেত্রে সুপরিকল্পনা জরুরি। রাজনৈতিক সদিচ্ছা বাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জরুরি। রাজনৈতিক সংকট নিরসনের পথ তখনই মসৃণ হবে যখন দলগুলো বিদ্যমান সংকটের ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারবে। আর্থিক খাতে অনিয়ম কিংবা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে জন-অসন্তোষ ক্রমেই বাড়ছে। তার পরও মানুষ রাজনৈতিক সমাধানের ওপর আস্থা রাখছে। এ বিষয়টি রাজনৈতিক পক্ষগুলোকে বুঝতে হবে। বিদ্যমান সংকটকে দলীয় স্বার্থের বাইরে এনে বিবেচনা করতে হবে। দেশে বিদ্যমান নানা সংকটের সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে প্রতিটি রাজনৈতিক পক্ষের সম্ভাব্য সমাধান প্রস্তাব রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো আলোচনা সাপেক্ষে বিভিন্ন মেয়াদি পরিকল্পনা গড়ে তোলার জন্য সংলাপ করতে পারে। আমাদের সমস্যার সমাধান আমাদেরই করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিদেশি কোনো পক্ষই সমাধান দিতে পারবে না। সংলাপের মাধ্যমে প্রথমে সংকট সমাধানের রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকা জরুরি।

গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে মতবিরোধ অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু এই বিরোধ যদি সংকট ক্রমেই ঘনীভূত করে তোলে তাহলে দুর্ভাবনার বিষয়। সংকট নিরসনে রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্যোগ-কর্মসূচি কতটা দৃশ্যমান হবে সেটিই দেখার। অর্থনীতির গতিবৃদ্ধির জন্য দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কোন্নয়নের পাশাপাশি নতুন বাজার অনুসন্ধানের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দেশের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে স্থিতাবস্থা গড়ে তোলাও গুরুত্বপূর্ণ। অথচ আমরা দেখছি, রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতার প্রতিযোগিতার অস্পষ্ট মেরুকরণে জড়িয়ে পড়ছে। ফলে রাজনৈতিক সদিচ্ছা গড়ে তোলার পথও হয়ে উঠছে কণ্টকাকীর্ণ। শুধু বৈশ্বিক সর্ম্পকোন্নয়নের জন্যই অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংকট নিরসন জরুরি নয়, দেশ-জাতির সামগ্রিক স্বার্থেই তা প্রয়োজন। 

  • রাজনীতি-বিশ্লেষক ও অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা