× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

জেগে ওঠার অগ্নিমন্ত্র

ড. অনুপম সেন

প্রকাশ : ০৭ মার্চ ২০২৪ ০০:০১ এএম

আপডেট : ০৭ মার্চ ২০২৪ ১৫:৪৬ পিএম

জেগে ওঠার অগ্নিমন্ত্র

আজ সেই ঐতিহাসিক দিন, ১৯৭১ সালে যে দিনটিতে রেসকোর্স ময়দানে জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের স্বাধীনতা ও মুক্তির পথ নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে প্রায় প্রতিটি লেখায় আমি লিখেছি, অনশ্বর বঙ্গবন্ধু। এ নামে আমার একটি বইও রয়েছে। বাঙালি জাতির সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ইত্যাদি অর্থাৎ সার্বিক মুক্তির জন্য বঙ্গবন্ধুর যে সংগ্রাম, তা নতুন প্রজন্মকে উপলব্ধি করতে হবে এবং জাতির পিতার কাঙ্ক্ষিত সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে তার আদর্শ অনুসরণ করেই আমাদের এগুতে হবে। বাঙালির ভাষা আন্দোলনেরই সূদুরপ্রসারী ফল বাঙালির স্বাধীনতা, বাংলাদেশের স্বাধীনতা। হয়তো অনেকেরই স্মরণে আছে, এ কথা বঙ্গবন্ধুই বলেছিলেন স্বাধীনতা উত্তরকালে। আজকের এই ঐতিহাসিক দিনে গভীর শ্রদ্ধায় বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করে আবারও বলতে চাই, রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের অলিখিত ভাষণটি বাঙালির চেতনায় যে নবজাগরণ ঘটিয়েছিল তা-ই আমাদের শক্তি এবং চেতনায় অগ্নিমশাল জেগে ওঠার অগ্নিমন্ত্র।

মাত্র ১৮ মিনিটের ভাষণটি ছিল বাঙালির মুক্তির সংগ্রামে অমোঘ নির্দেশনা। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর মহাকাব্যিক এবং রণকৌশলের দিক থেকে অনন্য সাধারণ ভাষণটি বিশ্বের দশটি ভাষণের অন্যতম, এও জাতির গর্ব। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা এক দফায় পরিণত হয়েছিল। তিনি তার এ ভাষণের শেষ বাক্যে উচ্চারণ করেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে চূড়ান্ত প্রস্তুতি পর্ব সেখানেই সূচিত।

ইতিহাসে ব্যাপৃত বঙ্গবন্ধু শুধু আমাদের জাতির পিতা এবং একটি স্বাধীন দেশের জন্মদাতাই নন, তিনি বিশ্ব ইতিহাসের উজ্জ্বল অধ্যায়। পঞ্চান্ন বছরের জীবনে তিনি জেলে কাটিয়েছেন প্রায় ১৪ বছর। তার পুরো জীবনই লড়াই আর সংগ্রামের। শোষন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী শেখ মুজিবুর রহমান কীভাবে বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠলেন, এ ইতিহাস অনেক দীর্ঘ। বাঙালির ইতিহাসে পুরো অধ্যায়জুড়ে বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের ইতিহাসেই তিনি অনন্য। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পূর্বাপর গণতান্ত্রিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাসে সব অধ্যায়ে তিনি উজ্জ্বল-ভাস্বর। বঙ্গবন্ধু তার ৭ মার্চের ভাষণে মুক্তির কথা প্রথমে বলে স্বাধীনতার প্রসঙ্গ এনেছেন, এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং লক্ষণীয় বিষয়। বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে একটি অপূর্ণ স্বপ্ন রয়ে গিয়েছিল, যা তিনি তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, প্রজ্ঞা ও জীবনকে চরম ঝুঁকির মধ্যে ফেলে পূর্ণতা এনে দিয়েছেন। তিনি বিজয়ী জাতির মহানায়ক। 

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণটি বহুমাত্রিক কারণেই গুরুত্বপূর্ণ। ওই ভাষণে তিনি মুক্তির কথা উচ্চারণের পাশাপাশি মুক্তিসংগ্রামের আহ্বানও জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, দেশের মানুষের যা কিছু আছে তা নিয়েই ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। রাজনৈতিক প্রজ্ঞার বহিঃপ্রকাশ ৭ মার্চের ভাষণে অত্যন্ত আলোকোজ্জ্বলভাবে প্রতিফলিত হয় এবং এজন্যই কোনোমতেই ভাষণটি বিচ্ছিন্নতাবাদী ভাষণ বলার অবকাশ নেই। যদি তাই হতো তাহলে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী ও হানাদার বাহিনী বর্বরতা-পৈশাচিকতার জন্য বিশ্ব যেভাবে পাকিস্তানি শাসকদের দোষারোপ করেছিল তা বঙ্গবন্ধুর ওপরই চাপিয়ে দেওয়া হতো। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা এবং গভীর প্রজ্ঞার প্রেক্ষাপটে তো বটেই আরও নানা কারণেই রাজনীতির কবি বলে তাকে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আরও স্মরণ করি, ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে জনসমুদ্রে বঙ্গবন্ধু বিশ্বের ইতিহাসে স্বাধীনতা ঘোষণার যে ভাষণটি দিয়েছিলেন এর প্রথমেই তিনি উল্লেখ করেছিলেন, বাঙালি সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সব অধিকার থেকেই বঞ্চিত। বাঙালি জাতির শোষণমুক্তি, বন্ধনমুক্তি অর্জনের ব্যাপারে তিনি কোনো আপসে রাজি ছিলেন না। 

২৫ মার্চ, ১৯৭১-এর কাল রাতে যখন পাকিস্তিানি হানাদার বাহিনী হত্যাযজ্ঞ শুরু করল তখন বিশ্ববাসী, বিশ্বের প্রায় সব রাষ্ট্র এর জন্য পাকিস্তানকেই দায়ী করে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি কামনা করেছিল। হানাদার বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি করে রাখলেও তিনি যাওয়ার আগে স্বাধীনতার যে ঘোষণা দিয়েছিলেন তা বাঙালি জাতি অগ্নিমন্ত্র হিসেবে ধারণ করে এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনী তার নেতৃত্বেই নয় মাস যুদ্ধ করে ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতি বিজয় অর্জন করে। আমাদের জাতীয় ইতিহাসের অধ্যায়গুলোতে বঙ্গবন্ধু অগ্রভাগে। তিনি এবং তার সমকালীন ইতিহাস অক্ষয়।

১৯৭২-এর ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু স্বাধীন দেশে ফিরে এলেন সমগ্র দেশবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হিসেবে, জাতির গভীর ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিনটিও ইতিহাসের অক্ষয় অধ্যায়। একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে তিনি পুনর্গঠন করলেন এবং বিশ্ব দরবারে স্বাধীন বাংলাদেশকে নিয়ে গেলেন নতুনভাবে। ১৯৭২-এর ৪ নভেম্বর স্বাধীনতা অর্জনের মাত্র দশ মাসের মধ্যে জাতিকে একটি অনন্য সাধারণ সংবিধান উপহার দিলেন, যে সংবিধানে জনগণকে রাষ্ট্রের মালিক ঘোষণা করা হয়। নতুন প্রজন্মের অনেকেরই হয়তো জানা নেই, বঙ্গবন্ধু যে বাংলাদেশ পেয়েছিলেন সে বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৬০ শতাংশই ছিল দারিদ্র্যসীমার নিচে। তার সাড়ে তিন বছরের শাসনামলের মধ্যেই নানা ক্ষেত্রে বাংলাদেশের যে অগ্রগতি সাধিত হয়, তাও ইতিহাসে দৃষ্টান্তযোগ্য অধ্যায়। কতিপয় স্বাজাত্যদ্রোহী সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে স্বাধীন দেশকে ফের নিয়ে যেতে চেয়েছিল পাকিস্তানি ভাবধারায়, যদিও শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি। এই ভূখণ্ডের ইতিহাসে কলঙ্কিত রাত ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট। ঘাতক ও তাদের ইন্ধনদাতারা বঙ্গবন্ধুকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলতে চেয়েছিল। কিন্তু তা কখনও কি সম্ভব? বঙ্গবন্ধু আমাদের সামনে বারবার ফিরে আসেন গণতন্ত্রের বহ্নিশিখা হিসেবে এবং আসতেই থাকবেন।

টানা চতুর্থবারসহ পঞ্চমবারের মতো আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা-দূরদর্শিতায় বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের এক বিস্ময়। অবকাঠামোগত উন্নয়নে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটে গেছে। পদ্মা সেতুর মতো মেগা প্রকল্প নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চ্যালেঞ্জ জয়ী হওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশের সক্ষমতারও জানান দিয়েছেন। যোগাযোগে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। কর্ণফুলী টানেলসহ দৃষ্টান্তযোগ্য এমন কত কিছুই তো আজ দৃশ্যমান। দেশের এই অভূতপূর্ব উন্নয়ন যদি অব্যাহত থাকে তাহলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছে যাব, এই প্রত্যাশাও অমূলক নয়। বাংলাদেশ উন্নত রাষ্ট্রের মর্যাদায় অভিষিক্ত হবে এটি এখন আর শুধু স্বপ্ন নয়, এর পক্ষে আজ অনেক অনুষঙ্গই দৃশ্যমান। এর মধ্য দিয়েই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্ন পূর্ণতা পাবে। জীবনযাপনের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের চর্চা করলে নিজেদেরই শানিত করা যাবে, প্রজন্মের মধ্যে এই বোধ পুষ্ট হোক।

আবারও জাতির পিতাকে বিনম্র শ্রদ্ধা। 

লেখক : শিক্ষাবিদ ও সমাজবিজ্ঞানী

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা