সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ০৬ মার্চ ২০২৪ ০৯:২৫ এএম
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই বা প্রধান শিক্ষক ছাড়াই চলছে প্রাথমিক বিদ্যালয়- এমন শিরোনাম সংবাদমাধ্যমে হরহামেশাই দেখা যায়। অনেক বিদ্যালয়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সহকারী শিক্ষকের অনুপস্থিতিতেও চলছে শিক্ষাকার্যক্রম, এমন সংবাদও চোখ এড়ানোর নয়। তবে সরকার যখন শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে, শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নতির জন্য নানা পদক্ষেপ নিয়েছে, তখন এ ধরনের খবর গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে ওঠে। অস্বস্তি তৈরির পাশাপাশি শিক্ষাক্ষেত্রে দুরবস্থার চিত্রও জাগিয়ে তোলে। এমনই একটি উদ্বেগজনক সংবাদ প্রকাশ পেয়েছে প্রতিদিনের বাংলাদেশে। ৫ মার্চ ‘৩৭৫ বিদ্যালয়ে নেই প্রধান শিক্ষক’ শিরোনামের প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, বাগেরহাটে ৩৭৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই। এসব বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। তবে সব বিদ্যালয়ে নয়, অল্প কিছু বিদ্যালয়ে নিয়োগ হয়েছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পদে, বাকি স্কুলগুলোতে পদটি রয়েছে শূন্য। স্বাভাবিকভাবেই প্রধান শিক্ষকের পদ খালি থাকায় বিদ্যালয়গুলো হয়ে পড়েছে অভিভাবকহীন। আবার যেখানে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রয়েছেন, তারাও অনেক সময় দ্বিধার কারণে নিতে পারেন না সঠিক সিদ্ধান্ত। তাতে ঝুলে থাকে সমস্যা। বিদ্যালয়ের কার্যক্রমেও নামে স্থবিরতা।
সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে যারা ভারপ্রাপ্ত প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন, তাদেরও অনেক সময় ক্লাস ফাঁকা রেখেই দাপ্তরিক কাজ করতে হয়। এতে শিক্ষাকার্যক্রমেও রাশ টানতে হয়। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এই যখন অবস্থা, তখন এর বিপরীত চিত্রও দেখা যায় অন্য একটি প্রতিবেদনে। একই দিন প্রতিদিনের বাংলাদেশের অন্য একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম, ‘শিক্ষক-বেতন সবই আছে নেই শুধু শিক্ষার্থী’। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলার ডোয়াইল ইউনিয়নের একটি বিদ্যালয়ে রয়েছেন ৯ শিক্ষক-কর্মচারী। কিন্তু তাদের কোনো দায়দায়িত্ব নেই। স্কুল সময়ে তারা দিব্যি আড্ডা দিয়ে সময় কাটালেও বেতন-ভাতা পেতে সমস্যা হচ্ছে না। স্কুলের সারি সারি শ্রেণিকক্ষ ফাঁকা পড়ে আছে। ধু-ধু করছে ক্লাসের সারি সারি বেঞ্চ। বিদ্যালয়ের হাজিরা খাতায় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ভালো থাকলেও প্রকৃতপক্ষে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা হাতে গোনা। তারাও নিয়মিত না। পড়ালেখা না হওয়ায় এলাকার শিক্ষার্থীরাও কষ্ট হলেও ভরসা করছে দূরের বিদ্যালয়ের ওপর। বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হওয়ার পর থেকেই পাঠদানে শিক্ষকদের অনীহার বিষয়টি স্পষ্ট হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এবং ১৯৯৭ সালে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এ হাল কোনোভাবেই স্বস্তির নয়। একদিকে বিদ্যালয়গুলোতে যখন শিক্ষক সংকটে নিয়মিত পাঠদান প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে, প্রধান শিক্ষকের অভাবে দাপ্তরিক কাজ থমকে যাচ্ছে; অন্যদিকে সেখানে শিক্ষার্থী না থাকায় বসে বসে বেতন-ভাতা নেওয়ার যে বৈপরীত্য উঠে এসেছে- তা অশনিসংকেতও বটে। আমরা উভয় ক্ষেত্রেই সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং দপ্তরের সিদ্ধান্ত প্রত্যাশা করি। তবে একটি আশার আলোর দেখা মিলেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষাবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলীর কথায়। প্রতিদিনের বাংলাদেশের অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ৫ মার্চ দুপুরে টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠান উদ্বোধনের আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, আগামী তিন মাসের মধ্যে প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে। এই নিয়োগের মাধ্যমে প্রাথমিকে শিক্ষকের যে শূন্যতা রয়েছে সেটাও পূরণ হয়ে যাওয়ার যে আশাবাদ তিনি ব্যক্ত করেছেন, আমরাও তাতে সায় দিই। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক সংকটসহ যেসব সমস্যা রয়েছে, আশা করি দ্রুত সেসব সমস্যার সমাধান হবে। আমরা জানি, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের হাত ধরেই দেশের বিপুলসংখ্যক রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারি হয়েছে। বেসরকারি স্কুল-কলেজও সরকারি হয়েছে। অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়েছে। সরকারের আন্তরিকতায় শিশুদের স্কুলে যাওয়ার অনুপাত বেড়েছে। নানামুখী বৃত্তির কারণে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কমেছে। এরকম অসংখ্য ইতিবাচক খবরের মধ্যে আমরা শিক্ষা নিয়ে নেতিবাচক খবরের সম্মুখীন হতে চাই না। আমরা চাই দেশের বিভিন্ন জেলার প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যে বিপুলসংখ্যক প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে তা দ্রুত নিয়োগের মাধ্যমে পূরণ করা হবে। সেই সঙ্গে পূরণ করা হবে সহকারী শিক্ষকের শূন্যপদও। আমরা শূন্যপদগুলোতে দ্রুত ও সুষ্ঠুভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্নের জন্য বলি। শিক্ষাব্যবস্থাকে সঠিক পথে এগিয়ে নিতে, শিক্ষাক্ষেত্রে সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শূন্যপদ পূরণে যত দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে, তত বেশি মঙ্গল বয়ে আনবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এত বিপুলসংখ্যক পদ শূন্য রেখে স্বাভাবিকভাবেই মানসম্মত শিক্ষা আশা করা যায় না। কারণ এ ধরনের সংকটে শিক্ষার স্বাভাবিক কার্যক্রমই ব্যাহত হয়।