× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

অব্যবস্থাপনার মর্মস্পর্শী নজির

ড. মো. জিল্লুর রহমান

প্রকাশ : ০২ মার্চ ২০২৪ ১৩:৪০ পিএম

আপডেট : ০২ মার্চ ২০২৪ ১৩:৪১ পিএম

অব্যবস্থাপনার মর্মস্পর্শী নজির

বললে অত্যুক্তি হবে নাÑ দুর্ঘটনা নয়, বরং মনুষ্যসৃষ্ট কারণে ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে আমাদের ফের মর্মস্পর্শিতার মুখোমুখি হতে হলো। রাজধানীর বেইলি রোডে অবস্থিত বহুতল ভবন গ্রিন কটেজে অগ্নিকাণ্ডের ফলে হতাহতের তালিকা দীর্ঘ হওয়ার পাশাপাশি প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে, অব্যবস্থাপনার মাশুল জীবন দিয়ে আর কত দিতে হবে। জনবহুল বাংলাদেশে বিশেষ করে ঢাকায় অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠছে বহুতল ভবন। ভৌগোলিক ও জনসংখ্যাগত বাস্তবতায় দেশে অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে স্থানিক পরিকল্পনায় রয়েছে ত্রুটি-বিচ্যুতি ও ঘাটতি—এই অভিযোগও নতুন নয়। আমরা বলছি উন্নত অবকাঠামো, কিন্তু অবকাঠামোগত পরিকল্পনার সঙ্গে নগর-মহানগরের বাস্তবতার সামঞ্জস্য নেই। ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ। প্রতিবার মর্মন্তুদ ঘটনাগুলোয় আমাদের দুর্যোগ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার ঘাটতি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, আমাদের বিদ্যমান অসঙ্গতিগুলো। বেইলি রোডের মর্মন্তুদ ঘটনাটি এ থেকে বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। কিন্তু এরপরও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল পক্ষগুলোর সম্বিত ফিরবে কি-না এ নিয়ে সন্দেহ থাকার যথেষ্ট কারণ আছে।

বেইলি রোডের গ্রিন কটেজে অগ্নিকাণ্ডের কিছু কারণ বিচ্ছিন্নভাবে জানা গেলেও প্রকৃত অনুঘটক উদঘাটিত হয়নি। গ্রিন কটেজ বহুতল ভবনটির এক থেকে সাততলা পর্যন্ত বাণিজ্যিক কার্যক্রম চলছিল, যেগুলোর অনুমোদন ছিল না। ভবনটির আটতলায় রয়েছে আবাসিক ভবনও। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, ভবনটিতে একটিমাত্র সিঁড়ি ছিল এবং সেটি লিফটের পাশে অবস্থিত। ভবনটিতে জরুরি বহির্গমন পথ ছিল না। ফলে ভেতরে যারা আটকে পড়েছিলেন তারা বের হতে পারেননি। সংগত কারণেই ভবন অবকাঠামোর নকশার ত্রুটি-বিচ্যুতির বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করতেই হয়। ভবন নির্মাণের নীতিমালার জন্য আমরা ‘বিল্ডিং কোড’ প্রণয়ন করেছি। ‘বিল্ডিং কোড’ নির্ধারণে পরিবেশবান্ধব নকশাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়নি, এ অভিযোগও নতুন নয়। একের পর এক অগ্নিকাণ্ড এও সাক্ষ্য দেয়, মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলা ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও বিল্ডিং কোডের নীতিমালা যথেষ্ট নয়।

উন্নত বিশ্বে যেকোনো ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে ভবনের নকশা নির্ধারণ করা হয়। এক্ষেত্রে অগ্নিদুর্ঘটনার বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু এ পর্যন্তই তারা থেমে থাকে না। নিয়মিত তদারকি করে এবং কোনো অসঙ্গতি থাকলে তা সুরাহার ব্যবস্থা নিশ্চিত করে। বিভিন্ন প্রতিবেদন ও গবেষণায় দেখা গেছে, আমাদের শহরাঞ্চলে শর্টসার্কিট কিংবা গ্যাসলাইনের ত্রুটিজনিত কারণে অধিকাংশ অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটে। অগ্নিদুর্ঘটনা ব্যবস্থাপনা তাই ভবন নির্মাণের নকশার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ভবন নির্মাণের সময় চলাচলের মূল সিঁড়ি লিফট থেকে দূরে রাখতে হয়। পাশাপাশি আলাদা বহির্গমন সিঁড়ি থাকা দরকার। প্রাথমিকভাবে আগুন নেভানোর প্রয়োজনীয় রসদ এমনকি আলাদা জলাধারও গড়ে তোলা বাঞ্ছনীয়। গ্রিন কটেজ বহুতল ভবনে এসব কিছুই ছিল না। উন্নত দেশগুলোতে অগ্নিদুর্ঘটনার প্রাথমিক প্রস্তুতির জন্য কিছু অ্যালার্ম থাকে। কোথাও সামান্য ধোঁয়া দেখা দিলে এবং অ্যালার্মের সেন্সরে ধোঁয়া পৌঁছলে ভবনে উপস্থিত সবাইকে সতর্ক করা হয়। অনেক অ্যালার্মের সঙ্গে পানির আলাদা ফোয়ারাও থাকে। অ্যালার্ম বাজার সঙ্গে সঙ্গেই ফোয়ারা থেকে পানি বের হয়, যাতে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে না পড়ে। অগ্নিদুর্যোগ মোকাবিলা ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে এমন নির্দেশনা আমাদের বিল্ডিং কোডে সুস্পষ্ট নয়। বিল্ডিং কোডের এই ঘাটতিটুকু অবিলম্বে দূর করা জরুরি।

ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকা মহানগরীতে অগ্নিদুর্যোগে প্রাণহানি কমানোর ক্ষেত্রে জনসচেতনতাও বাড়াতে হবে। আবাসিক কিংবা বাণিজ্যিক ভবনগুলোতে ইলেকট্রিক ও গ্যাসলাইন তদারকির জন্য সবসময় বিশেষজ্ঞ নিয়োজিত রাখতে হবে। আমরা দেখছি, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট তদারকি প্রতিষ্ঠানগুলো চিঠি বা নোটিস পাঠিয়েই তারা তাদের দায়-দায়িত্ব শেষ করতে চায়। কিন্তু এক্ষেত্রে তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত হলে এমনটির অবকাশ থাকতো না। যেকোনো দুর্যোগের পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় বটে, কিন্তু তদন্ত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নে গৃহীত পদক্ষেপগুলো দৃষ্টিগোচর হয় না। এভাবে মর্মন্তুদ ঘটনাগুলো শুধু নজির হয়ে থাকে। আরেকটি দুর্ঘটনা ঘটে, আমরা আবার আলোচনা শুরু করি। এভাবে চলতে পারে না। অগ্নিদুর্যোগ মোকাবিলায় আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন জরুরি। পাশাপাশি অগ্নিদুর্ঘটনায় কার কী করণীয়Ñ এ বিষয়েও কর্মশালার আয়োজন করে যার যার দায়িত্ব-কর্তব্য বুঝিয়ে দিতে হবে। যদি তা করা সম্ভব হয়, তাহলে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।

আইনের শাসন নিশ্চিত হলে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টির পথ রুদ্ধ হতে বাধ্য। ফিরে ফিরে এমন মর্মস্পর্শিতার মুখোমুখি আর যাতে না হতে হয়; এ জন্য কথার কথা নয়, কাজের কাজ নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই। পরিকল্পিত নগরায়ণের ব্যাপারে মনোযোগ গভীর করা যেমন জরুরি, তেমনি নিয়মনীতি কিংবা আইনের প্রতি যারা অভিঘাত সৃষ্টি করে নিজেদের হীনস্বার্থ হাসিল করছেন তাদের প্রতি কোনো অনুকম্পা দেখানোর অবকাশ নেই। এই ভবনে অনেকেই কর্মরত ছিলেন যাদের জীবিকার অবলম্বন ছিল শুধু ওখানের কাজটুকুই। সংবাদমাধ্যমেই দেখছি, তাদের কাউকে কাউকে এমন বিভিষীকার শিকার হওয়ায় পরিবার চরম বিপন্ন বিপন্ন অবস্থায় পড়েছে। দায়িত্বশীল প্রত্যেকের দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ এর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ নিষ্প্রয়োজন। আমরা কোনোভাবেই অব্যবস্থাপনার কারণে আর এমন মর্মস্পর্শীতার মুখোমুখি হতে চাইনা। সুচারু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতেই হবে।  


  • অধ্যাপক, ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা