পরিপার্শ্ব
শফিকুল ইসলাম খোকন
প্রকাশ : ০২ মার্চ ২০২৪ ১২:৫৫ পিএম
ওয়ার্ল্ডওয়াইড ফান্ড ফর নেচারের এক প্রতিবেদনে
বলা হয়েছে, বিশ্বে গত ৫০ বছরের মধ্যে বন্য প্রাণীর সংখ্যা ৭০ ভাগ কমে গেছে। অন্যদিকে
বন অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, সংরক্ষিত বন জবরদখল হয়েছে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৬১৩ একর আর আইনি
পদক্ষেপসহ উদ্ধারের জন্য উদ্যোগ রয়েছে মাত্র ১২ হাজার ২১৪ একর বনভূমির। বন্য প্রাণী
বা প্রতিবেশ রক্ষায় জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। বন্য প্রাণী সুরক্ষা করলে
জাতিসংঘের টেকসই লক্ষ্যমাত্রাগুলোও (এসডিজি) পূরণ হবে। বিশেষ করে ১, ২, ১২, ১৩, ১৪
ও ১৫ নম্বর লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বন্য প্রাণী সুরক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দুঃখজনক
হলেও সত্য, ‘বাংলাদেশ বন্য প্রাণী (সুরক্ষা ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২’ থাকলেও দেশে সাফারি
পার্ক, প্রাকৃতিক বন, উপকূলের রক্ষাকবচ বনাঞ্চল, গ্রামীণ বন বা জলাভূমি, কোথাও বন্য
প্রাণী নিরাপদ নয়।
ইতোমধ্যে দেশে প্রায় তিনশ প্রজাতির বন্য প্রাণী
বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে আরও শখানেক। প্রাণীবিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু
পরিবর্তনজনিত ও বনজ সম্পদ সংরক্ষণের অভাবে দেশের ৩০-৪০ শতাংশ প্রাণী বিলুপ্তির মুখে।
ওয়াইল্ড লাইফ ট্রাস্ট বাংলাদেশ (ডব্লিউটিবি) ও দ্য ওয়ার্ল্ড কনজারভেশন ইউনিয়ন (আইইউসিএন)
বাংলাদেশ শাখার এক জরিপে দেখা গেছে, ইতোমধ্যে দেশের প্রায় দেড়শ প্রজাতির বন্য প্রাণী,
মেরুদণ্ডী প্রাণীর ১৩টি, ৪৭ প্রজাতির দেশি পাখি, ৮ প্রজাতির উভচর ও ৬৩ প্রজাতির সরীসৃপ,
স্তন্যপায়ী প্রাণীর ১০টি মিলিয়ে প্রায় তিনশ প্রজাতির বন্য প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
এ ছাড়া বিপন্ন ৪৩ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী। আইইউসিএনের বন্য প্রাণীবিদ ও গবেষকদের
মতে, সংরক্ষণ ও আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাবে মোট বন্যপ্রজাতির ৩০-৪০ শতাংশ আগামী কয়েক
বছরে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। তাদের মতে, বিদ্যমান পরিবেশের সঙ্গে খাপ খেয়ে যে হাজারখানেক
প্রজাতির বন্য প্রাণী টিকে আছে তারা পরিবর্তিত পরিবেশে বিপন্ন।
বন্য প্রাণী সংরক্ষণে আইন থাকলেও তা বাস্তবায়নে
ঘাটতি রয়েছে। বন্য প্রাণী সংরক্ষণে ইতোমধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। তবে
প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে প্রাণপ্রকৃতি সংরক্ষণ দুরূহ। প্রকৃতি, বন, বন্য প্রাণী, বনজ
সম্পদ সংরক্ষণ, রক্ষা এবং টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করতে জনগোষ্ঠীর সম্পৃক্ততা অপরিহার্য।
এক্ষেত্রে জনগোষ্ঠী এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয়ের বিকল্প নেই। স্থানীয়
জনগোষ্ঠী ও সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটিগুলোর (সিএমসি) টেকসই
আর্থিক সক্ষমতা, স্থায়ী কমিটির নিয়মিত সভা এবং কার্যকর ব্যবস্থা নিশ্চিত করাও জরুরি।
পাশাপাশি এসব সম্পদ রক্ষার্থে স্থানীয় পর্যায়ে সচেতনতামূলক উঠান বৈঠক, প্রচার-প্রচারণা,
লিফলেট বিতরণ করা, ইউনিয়ন পরিষদের স্থায়ী কমিটির নিয়মিত সভা করে ত্রুটিগুলো চিহ্নিত
করে ব্যবস্থা নেওয়া, স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সচেতন করে বন ও বন্য প্রাণী রক্ষায় ওয়ার্ডভিত্তিক
কমিটি করার পাশাপাশি সময়োপযোগী আইন সংশোধন প্রয়োজন।
বন, পরিবেশ, বন্য প্রাণী সংরক্ষণে বন বিভাগকে
আধুনিকায়ন করাও সমভাবেই গুরুত্বপূর্ণ। বন বিভাগের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য দক্ষ ও প্রশিক্ষিত
লোকবল বৃদ্ধি করতে হবে। পাশাপাশি বনসম্পদ সংরক্ষণের গুরুত্ব সবাই যাতে অনুধাবন করতে
পারেÑ এ জন্য সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালু করতে হবে। প্রকৃতি, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য
না বাঁচলে মানুষের বেঁচে থাকার সুযোগ নেই। বন ও প্রাণিজ সম্পদের সঙ্গে অর্থনীতিসহ অনেক
কিছু সম্পৃক্ত। বেঁচে থাকতে হলে তাই প্রাণপ্রকৃতি বাঁচিয়ে রাখতে হবে।