× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণের সাজা হোক দৃষ্টান্তমূলক

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:২৮ এএম

যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণের সাজা হোক দৃষ্টান্তমূলক

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলায় ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আজিমপুর শাখার গণিত শিক্ষক মুরাদ হোসেন সরকারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। প্রতিদিনের বাংলাদেশে প্রকাশিত প্রতিবেদন পাঠের পরও আমাদের স্বস্তি মিলছে না। কারণ একই ধরনের অভিযোগ উঠছে একের পর। ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর অন্য একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে রাজশাহী শিল্পকলা একাডেমির প্রধান জেলা কালচারাল অফিসারের কুকীর্তি। তার বিরুদ্ধে উঠেছে একাধিক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ। ভুক্তভোগী এক ছাত্রী ইতোমধ্যে থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলাও করেছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে এবং জড়িতদের শাস্তির দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও আমরা দেখেছি প্রতিবাদ। শিক্ষকের বিরুদ্ধে ওঠা যৌন নির্যাতনের অভিযোগে আন্দোলন হয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। এরকম ঘৃণিত অপরাধের বিরুদ্ধে যখন সচেতন মানুষ সোচ্চার হচ্ছে তখন ভিকারুননিসায় তদন্তের নামে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা এবং রাজশাহী শিল্পকলা একাডেমির প্রধান সংস্কৃতি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগও অস্বস্তি বাড়ানোর পাশাপাশি আমাদের ক্ষুব্ধও করে। এই যে প্রতিনিয়ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠছে তা একদিকে যেমন আমাদের ক্ষুব্ধ করে তেমনি উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠাও বাড়ায়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীর আশ্রয়স্থল। দিনের বড় অংশ শিক্ষার্থীরা শিক্ষাঙ্গনে কাটায়। শিক্ষক সেখানকার অভিভাবক। বাবা-মায়ের পরেই তার সম্মান। অথচ সেই শিক্ষক যখন এমন ঘৃণ্য অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন, শিশুদের দিকে লালসার হাত বাড়িয়ে দেন, তখন উদ্বিগ্ন না হয়ে পারা যায় না।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থীদের নিগ্রহ এবং নিগ্রহকারী হিসেবে এভাবে শিক্ষকদের নাম উঠে আসা কোনোভাবেই স্বস্তির নয়। এমন খবর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা যেমনি বাড়ায় তেমনি অভিযোগ ওঠার পর অভিযুক্তকে বিচারের আওতায় আনতে সহায়তার পরিবর্তে যারা এসব ঘটনা ধামাচাপা দিতে তৎপর হয়ে ওঠে আমাদের প্রশ্ন, তারা কোন লোভের বলি হয়ে এ ধরনের অপকর্মে সহায়তার হাত বাড়ায়? কারণ অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে তারা উভয়েই যেমন অপরাধী, তেমনি অন্যায় চাপা দিতে চায় যারা তাদের অপরাধের মাত্রা আরও ভয়ানক বলেই আমরা মনে করি। ইতঃপূর্বে প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর প্রতিবেদককে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের কয়েকজন অভিভাবক জানিয়েছিলেন, শিক্ষক মুরাদকে সুরক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করছেন প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ স্বয়ং! তদন্ত কমিটির সদস্যদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। তারই ফলশ্রুতিতে ভুক্তভোগীদের কেউ কেউ সংবাদমাধ্যমের দ্বারস্থ হয়। যার কারণে অপরাধী এবং অপরাধ ধামাচাপা দেওয়ার হোতারা ক্ষান্ত দিতে বাধ্য হয়।

শিক্ষক সমাজের কলঙ্ক মুরাদ হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে বেশ আগেই। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের তরফে তার বিরুদ্ধে অধ্যক্ষ বরাবর আবেদনও জমা দেওয়া হয়। অথচ প্রায় পক্ষকাল পেরুলেও অধ্যক্ষ, তথাকথিত তদন্ত কমিটি সময়ের প্রলেপে ঘটনাটি ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা ছাড়া কার্যত কোনো পদক্ষেপই নেয়নি। কিন্তু ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ ‘ভিকারুননিসায় আরেক পরিমল’ শিরোনামের প্রতিবেদন প্রকাশের পরই সবার টনক নড়ে। যে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ঘটনা ধাপাচাপা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে, তিনিই ‘ঠেলায় পড়ে’ মুরাদ হোসেনকে স্কুলের প্রধান শাখায় সংযুক্ত করার আদেশ দেন। তদন্ত কমিটিও সক্রিয় হয়। আমাদের প্রশ্ন, যেখানে একটি স্বনামখ্যাত প্রতিষ্ঠানের সুনাম জড়িত, যেখানে শিক্ষার্থীরাই প্রাণ, যারা আপন সন্তানতুল্য, সেখানে একজন কুলাঙ্গারের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পরও তার সত্যতা যাচাই না করে কেন ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলবে? বিচার না পাওয়ার শঙ্কা থেকে ভুক্তভোগীরা সংবাদমাধ্যমের শরণাপন্ন হন। প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ সংবাদ প্রকাশ পায়। ন্যায়বিচারের দাবিতে অভিভাবকরাও সোচ্চার হন, তারাও মুখ খোলেন। থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলা করেন একজন অভিভাবক। যার প্রেক্ষিতেও পুলিশ মুরাদ হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে।

মুরাদ হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পর যাদের দায়িত্ব ছিল অভিযোগের তদন্ত করা, অভিযোগের সত্যতা পেলে তাকেই আইনের হাতে সোপর্দ করা, সে দায়িত্ব পালনে যারা সচেতনভাবেভাবে অবহেলা করেছেন, আমরা মনে করি তাদের সে দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। সুযোগ নেই তাদেরও শাস্তির আওতা থেকে রেহাই দেওয়ার। অপরাধ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেও যদি তারা রেহাই পায় এবং এমনটি ঘটতেই থাকে, তাবে তা হবে ভবিষ্যতের অপরাধীদের জন্য সবুজ সংকেত। এতে আগামীর অপরাধীরাও অপরাধ করে পার পেয়ে যাওয়ার সুযোগ খুঁজে দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে অন্ধকারে ঠেলে দিতে প্রয়াসী হবে। আমরা মনে করি, শিক্ষাঙ্গনগুলোকে কলুষিত করার অধিকার যেমন কারও নেই তেমনি শিক্ষাঙ্গনে যৌন হয়রানির অভিযোগও হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। সংবাদমাধ্যম সরব হলেই অপরাধীকে শাস্তির আওতায় আনার তোড়জোড় চলবে, আর সংবাদমাধ্যমে অজানা থাকলে, শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ না করলে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া হবে, সুযোগ নেই এরও।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তাহীনতার ছায়া যেন শিক্ষার্থীদের ঘিরে না থাকে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেন সত্যিকার অর্থেই তাদের ভরসার জায়গা হয়, সে দিকটি নিশ্চিত করার পাশপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষকের প্রতি নেতিবাচক ধারণার ইতি টানতে অপরাধীর দৃষ্টান্তযোগ্য শাস্তি নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। আমরা মুরাদ হোসেনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি যেমন দাবি করি, তেমনি যে বা যারা এ ধরনের অপরাধ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে আগামীর অপরাধীকে প্রশ্রয় দেয়, তাদেরও শাস্তি দাবি করি। ভিকারুননিসায় এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে। অভিযুক্ত শিক্ষকের অপরাধ প্রমাণ হওয়ায় আদালতের আদেশে সাজাও ভোগ করছে। তারপরও কোন যুক্তিতে এ ধরনের অপরাধ চাপা দেওয়ার চেষ্টা চলে, তারও কারণ অনুসন্ধান জরুরি। আমাদের সমাজে ধর্ষণের শিকার একজন ব্যক্তির জন্য তা যে চরম অপমান ও অসম্মান বয়ে আনে, আর কোনো ঘটনাই তার তুল্য নয়। তাই, ধর্ষক যেই হোক, তার অপরাধের শাস্তি হোক মৃত্যুদণ্ড, এটা যেমন আমাদের প্রত্যাশা, তেমনি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করতে, প্রতিষ্ঠানের সুনাম নষ্ট করতে যারা এ ধরনের অপরাধের ঘটনা ধামাচাপা দিতে চায়, তাদেরও আইনের আওতায় আনা হোক, নিশ্চিত হোক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। নারী লোভী মানুষের ভোগের পণ্য নয়। নারীকে তার প্রাপ্য মর্যাদা নিশ্চিত করতে ধর্ষণসহ নারীর প্রতি সহিংসতার যেকোনো অপরাধ সংগঠনের খবর মিললেই দ্রুত ঘটনার তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীর বিচারের উদ্যোগ জরুরি।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা