বিপিএল
ইকরামউজ্জমান
প্রকাশ : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:৫২ এএম
ঢাকা-সিলেট-ঢাকা
হয়ে এখন সাতটি ফ্র্যাঞ্চাইজি দল নিয়ে দশম বিপিএল আসর চট্টগ্রাম পর্ব শেষ করে এখন ঢাকায়।
ফাইনাল ম্যাচ ১ মার্চ। চলমান বিপিএলে তিনটি স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে আনন্দ উচ্ছল দর্শকের
ব্যাপক সমাগম হয়েছে। উৎসবের গায়েনরা উত্তেজনার ঢেউয়ের সঙ্গে দোল খাচ্ছেন। দেশের দর্শক
অল্পতেই তুষ্ট, তারা টি-টোয়েন্টির জটিল হিসাবে সচরাচর ঢুকতে চান না। এর ভালো ও খারাপ
দুটি দিকই আছে। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের আয়োজন দেশে দেশে শুধু দর্শককে অল্প সময়ের মধ্যে
অনেক বেশি আনন্দ উপহার দেওয়া লক্ষ্য নয়। এর একটি চিন্তাশীল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য আছে।
তাই বলা হয় ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে চাই কমিটেড ও আত্মবিশ্বাসী খেলোয়াড়। যারা নতুন প্রথা
ও উদ্ভাবনীতে আগ্রহী, যারা পরিবর্তনের পথ ধরে হাঁটতে চান। তারা আমাদের প্রেরণা। অর্জন
সবাই একসঙ্গে গৌরবের সঙ্গে উদ্যাপন করেন।
বিশ্বজুড়ে
সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিকেটকে আরও বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, মানসম্পন্ন, চিত্তাকর্ষক
করে তুলতে শুধু নিজের নয়, দলের কথা মাথায় রাখা এবং স্কোর বোর্ডকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে দলের চাহিদা অনুযায়ী
পারফর্ম করাই ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টগুলোর মূলমন্ত্র। সব দেশেই ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি
টুর্নামেন্টে পারফরম্যান্স ‘ইভালুয়েট’ করেই জাতীয় দল ঠিক করা হয়। তাই ফ্র্যাঞ্চাইজি
লিগে স্থানীয় খেলোয়াড়ের পারফর্ম করাটা খুব জরুরি। ফর্ম ফিটনেস ও টিম কম্বিনেশনের বিষয়টি
নির্বাচকদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। টি-টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে বিদেশি
খেলোয়াড়দের ভূমিকার মূল্যায়ন হয় একটু অন্যভাবে।
এই যে বিপিএল
চলছে এ টুর্নামেন্ট থেকে নির্বাচকরা সেরা একাদশ খুঁজতে চাইছেন আসন্ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ-যুক্তরাষ্ট্র
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য। ডান হাতি-বাঁ হাতি সমন্বয় নিয়েও পরীক্ষানিরীক্ষার বিষয়
আছে। প্রথম অবস্থায় বড় স্কোয়াড গঠনের সময় মাথায় রাখা হয় দলের প্রয়োজন কার্যকরের বিষয়টি।
বিপিএলে ধারাবাহিকতার সঙ্গে পারফর্ম করাটা গুরুত্বপূর্ণ। ছন্দে থাকার প্রয়োজনীয়তা এবং
গুরুত্ব আলাদা। বিপিএলের পর মার্চেই দেশের মাটিতে শক্তিশালী শ্রীলঙ্কা দলের বিপক্ষে
তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ জাতীয় দল। টি-টোয়েন্টি এ সিরিজটি বাংলাদেশ
দলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের ক্রিকেটপণ্ডিতরা বলছেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্রের
উইকেটের আচরণের সঙ্গে জুনে বাংলাদেশের উইকেটের আচরণের মিল থাকবে। বিপিএলের উইকেট নিয়ে
টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার আগে টেকনিক্যাল কমিটি উইকেট কেমন হওয়া উচিত এসব বিষয়ে অনেক
কথা বলেছে। টুর্নামেন্ট শেষের দিকে চলে এসেছে। কথা ও কাজে কতটুকু মিল পেয়েছেন খেলোয়াড়
ও ফ্র্যাঞ্চাইজিরা। তিনটি স্টেডিয়ামে তো এখন পর্যন্ত ম্যাচপ্রতি গড় রান গতবারের চেয়েও
পেছনে আছে। খেলা শুরুর সময় ঢাকা উইকেট থেকে আবহাওয়ার জন্য কাঙ্ক্ষিত আচরণ লক্ষ করা
যায়নি। এখন তো চমৎকার আবহাওয়া।
সবাই চান বিপিএল-জাতীয়
টি-টোয়েন্টিতে দলে গঠনমূলক কার্যকর ভূমিকা রাখুক। এ সংস্করণের অনেক পরীক্ষানিরীক্ষা
হয়। বিপিএলে ‘লেগ স্পিনাররা’ অবহেলিত। অথচ অন্যান্য দেশের টুর্নামেন্টের লেগ স্পিনাররা
দলের হয়ে সব সময় কার্যকর ভূমিকা পালন করছেন। স্থানীয় খেলোয়াড়দের অনেক বেশি দায়িত্ব
ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলা উচিত। তাদের তো নিজকে তুলে ধরার এটাই বড় সুযোগ। প্রমাণ করতে
হবে তারাই টুর্নামেন্টের আসল প্রাণ। এ টুর্নামেন্টের মধ্য দিয়েই তো নিখাদ প্রতিভা
বেরিয়ে আসবে। যেভাবে প্রতি বছর আমরা পরিচিত হচ্ছি নতুন প্রতিভার সঙ্গে আইপিএলের বদৌলতে।
আইপিএলে সেরা পারফরমার তো সব ভারতীয় খেলোয়াড়। দামি খেলোয়াড়ের তালিকায়ও তো ভারতীয়রা
প্রাধান্য পায়। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে কেউ কখনও অটো চয়েজ হওয়ার কথা নয়।
চলমান বিপিএলে
ফিটনেসের ক্ষেত্রে ফিট না হয়েও তো কেউ কেউ খেলছেন। খেলানো হচ্ছে। এতে কিন্তু দল ‘সাফার’
করছে। রংপুর রাইডার্স টেস্ট ক্রিকেটের প্রাক্তন অধিনায়ক মোমিনুল হককে হঠাৎ দলে নিয়েছে।
এ ক্রিকেটারের বিষয়ে কোনো দল কিন্তু টুর্নামেন্ট শুরুর আগে আগ্রহ দেখায়নি। মোমিনুল
রংপুর রাইডার্সের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন খেলার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। এখন মোমিনুল
পারফর্ম করার দৌড়ে কতটুকু কী করতে পারেন দেখার বিষয়। ইনজুরির কারণে মুস্তাফিজ টেস্ট
দলে নেই। তাসকিন আহমেদও বোর্ডকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি আর টেস্ট ক্রিকেট খেলতে
চান না। দীর্ঘ সময়ের ক্রিকেট খেলা কষ্টকর। টি-টোয়েন্টি এবং ওয়ানডেতে সেই কষ্ট নেই।
তা ছাড়া এ দুই সংস্করণের ক্রিকেটে শরীরে ধকল কম যায়, পাশাপাশি অর্থও অনেক বেশি। অপ্রিয়
শোনালেও সত্যি, মুস্তাফিজ ও তাসকিনের মাঠের সেই উজ্জ্বলতা এখন অনেকটাই ম্লান।
নিজের খেলার ওপর বিশ্বাস রাখা খুব জরুরি। জুনের বিশ্বকাপ টুর্নামেন্ট নিয়ে পরিকল্পনা তৈরি হচ্ছে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য ১৫ সদস্যের চূড়ান্ত দল ঘোষণার শেষ তারিখ ১ মে। ৩০ সদস্যের নাম ঠিক করে কাজ করছে ক্রিকেট পরিচালনা কমিটি ও টিম ম্যানেজমেন্ট। ভিসাসহ অনেক দাপ্তরিক কাজ আছে। জাতীয় টি-টোয়েন্টি দলে যারা আছেন তাদের পারফরম্যান্স বিপিএলে এখনও চিন্তার বিষয়। ধারাবাহিকতার সঙ্গে কজন ব্যাটে-বলে পারফর্ম করে ছন্দে আছেন? জানি না নির্বাচকরা কী ভাবছেন। দলের বাইরে থেকে দু-তিন জন পারফর্ম করেছেন। তবে কাউকে অসাধারণ হিসেবে চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। স্থানীয় খেলোয়াড়দের চ্যালেঞ্জ নিতেই হবে বিপিএল আকর্ষণীয় ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করে তোলার জন্য। সাকিব তার চোখ নিয়ে কিছুটা সমস্যায় আছেন। মাঠে তিনি ধীরে ধীরে নিজেকে মেলে ধরার চেষ্টা করছেন। দলের জন্য সাকিবের পারফরম্যান্সের খুব দরকার আছে। বিশ্বাস করি টি-টোয়েন্টি জাতীয় দল যাদের দিকে আমরা তাকিয়ে আছি তাদের খারাপ সময় অচিরেই শেষ হয়ে যাবে। বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে তাদের পারফরম্যান্সের আকাশে রোদ দেখার প্রতীক্ষায় আছি। জাতীয় দলের তৌহিদ হৃদয় তো ইতোমধ্যে একটি সেঞ্চুরি করেছেন। আর তিন-চার জন ধারাবাহিকতার সঙ্গে পারফর্ম করছেন। ম্যাচ জেতাতে বোলারদের ভূমিকা টি-টোয়েন্টিতে অনেক বেশি। বোলাররা প্রতিপক্ষের রান ডিফেন্ড করেন।