× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

পবিত্র শবে বরাত

ফজিলত, বরকত ও মাগফিরাত

মুফতি এনায়েতুল্লাহ

প্রকাশ : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৫:২৫ পিএম

ফজিলত, বরকত ও মাগফিরাত

ফারসি শব অর্থ রাত আর বরাত অর্থ সৌভাগ্য। আরবিতে বলে লাইলাতুল বরাত বা সৌভাগ্যের রাত। হিজরি ১৪ শাবান দিবাগত রাতকে সৌভাগ্যের রজনি হিসেবে পালন করে মুসলিম উম্মাহ। আজ রবিবার দিবাগত রাতই পবিত্র শবেবরাত। মহিমান্বিত এ রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা পরম করুণাময় আল্লাহর অনুগ্রহলাভের আশায় নফল নামাজ, কুরআন তেলাওয়াত ও জিকির-আজকারে মশগুল থাকেন। অতীতের পাপ ও অন্যায়ের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা এবং ভবিষ্যৎ জীবনের কল্যাণ কামনা করে মোনাজাত করেন।

পবিত্র শবেবরাত কেন্দ্র করে বাড়িতে বাড়িতে হরেকরকমের হালুয়া, ফিরনি, রুটিসহ উপাদেয় খাবার তৈরির প্রচলন রয়েছে। এসব খাবার আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী ও গরিবদুখীর মধ্যে বিতরণ করা হয়। সন্ধ্যার পর অনেকে কবরস্থানে যান এবং আপনজনদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করেন। আরবি শাবান মাস অত্যন্ত ফজিলত ও অশেষ মর্যাদাসম্পন্ন। মাসটি ইবাদত-বন্দেগির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। তাই তো বলা হয়, নবী করিম (সা.)-এর সুন্নত অনুশীলনের মাধ্যমে অগাধ ভক্তি, শ্রদ্ধা ও প্রেম- ভালোবাসা প্রদর্শনের মাস শাবান। আরবি ভাষায় এ মাসের পূর্ণ নাম 'আশ শাবানুল মুয়াজ্জম' অর্থাৎ মহান শাবান মাস। মাহে রমজানের প্রস্তুতির মাস হিসেবে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) এ মাসে বেশি বেশি রোজা রাখতেন। তাঁর অনুসরণে মুসলমানরা এ মাসের একটি রাতকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। মধ্য শাবানের এ রাত আমাদের কাছে শবেবরাত হিসেবে পরিচিত। আল্লাহতায়ালা ১৪ শাবানের দিবাগত রাতে বান্দার জন্য অশেষ বরকত ও রহমতের দরজা খুলে দেন।

 ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা বিগত জীবনের সব ভুলত্রুটি ও পাপতাপের জন্য গভীর অনুশোচনাসহ আল্লাহর দরবারে সকাতর ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকে। এ রাতের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে বিবৃত হয়েছে, হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা অর্ধশাবানের রাত অর্থাৎ শাবানের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে সৃষ্টির প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষপোষণকারী ছাড়া সবাইকে ক্ষমা দেন। -সহিহ ইবনে হিব্বান : ৫৬৬৫

এ রাতে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) যে আমল করতেন- এক. পুরো রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগি করতেন। যেমন নফল নামাজ, কুরআন তেলাওয়াত, তাসবিহ-তাহলিল পাঠ, দোয়া-দরুদ, তওবা-ইস্তেগফার ইত্যাদি পড়া। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, পাঁচটি রাত এমন আছে যে রাতে বান্দার কোনো দোয়া ফেরত দেওয়া হয় না। তা হলো জুমার রাতের দোয়া, রজব মাসের প্রথম রাতের দোয়া, নিসফ শাবান তথা অর্ধ শাবানের রাতের দোয়া, ঈদুল ফিতর তথা রোজার ঈদের রাতের দোয়া, ঈদুল আজহা তথা কোরবানির ঈদের রাতের দোয়া।'-মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক : ৭৯২৭। দুই. পরদিন রোজা রাখতেন। এমনিতে পুরো শাবান মাসেই অধিক পরিমাণে রোজা রাখা উত্তম। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রায় পুরো শাবান মাস রোজা রাখতেন। হজরত ফাতেমা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে শাবান ও রমজান ছাড়া দুই মাস একাধারে রোজা রাখতে দেখিনি। -সহিহ বোখারি : ১৯৬৯

অন্য হাদিসে বিবৃত হয়েছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'যখন শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাত আসবে, তখন তোমরা এ রাতে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করবে এবং দিনে রোজা পালন করবে। কেননা এই দিন সূর্যাস্তের পরই আল্লাহ দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন এবং বলেন, 'কে আছো ক্ষমাপ্রার্থনাকারী, আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। কে আছো রিজিকপ্রার্থী, আমি তাকে রিজিক দেব। কে আছো বিপদগ্রস্ত, আমি তাকে বিপন্মুক্ত করব। ফজর হওয়া পর্যন্ত আল্লাহতায়ালা এ কথা বলতে থাকেন।' -ইবনে মাজাহ : ১৩৮৮

কিয়ামুল লাইল : হজরত আলা ইবনুল হারিস (রহ.) থেকে বর্ণিত, হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, একবার হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) রাতে নামাজে দাঁড়িয়ে এত দীর্ঘ সময় সেজদায় রইলেন যে, আমার ধারণা হলো হয়তো তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। তখন আমি তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিয়ে দেখলাম। যখন তিনি সেজদা থেকে উঠলেন এবং নামাজ শেষ করলেন তখন আমাকে লক্ষ করে বললেন, হে আয়েশা, ওহে হুমাইরা! তোমার কি আশঙ্কা হয়েছে যে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি উত্তরে বললাম, না হে রাসুলুল্লাহ! আপনার দীর্ঘ সেজদায় আমার আশঙ্কা হয়েছিল, আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কি না। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) জিজ্ঞেস করলেন তুমি কি জানো এটা কোন রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও তার রাসুলই ভালো জানেন। তখন হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, 'এটা হলো অর্ধ শাবানের রাত অর্থাৎ শাবানের ১৪ তারিখের দিবাগত রাত। আল্লাহতায়ালা অর্ধ শাবানের রাতে তাঁর বান্দার প্রতি মনোযোগ দেন এবং ক্ষমাপ্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন, অনুগ্রহপ্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন, বিদ্বেষ পোষণকারীদের ছেড়ে দেন অবস্থাতেই।-শোয়াবুল ঈমান : ৩৫৫৪। বর্ণিত হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, কিয়ামুল লাইল অর্থাৎ নফল নামাজে দীর্ঘ কেরাত পড়া এবং লম্বা সেজদা করা এ রাতের বিশেষ একটি আমল।

ভিত্তিহীন কাজ পরিহার : হাদিসে শবেবরাতে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে বিশেষ পদ্ধতিতে কোনো ইবাদত প্রমাণিত নেই। সাহাবায়ে কেরামের থেকেও এর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। সুতরাং সমাজে প্রচলিত শবেবরাতের বিশেষ পদ্ধতির যে নামাজের কথা বলা হয় তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, বানোয়াট। এগুলো বিশ্বাস ও আমল করা কোনোভাবেই জায়েজ নয়।

ক্ষমা প্রার্থনা করা : শবেবরাতের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো বেশি বেশি তওবা-ইস্তেগফার করা। কারণ বরকতময় এ রাতে আল্লাহতায়ালা প্রথম আকাশে এসে বান্দাদের প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেন। তাদের গুনাহগুলো মাফ করেন। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, 'যখন অর্ধ শাবানের রাত আসে তখন আল্লাহতায়ালা প্রথম আকাশে অবস্থান করে মুশরিক ও বিদ্বেষপোষণকারী ছাড়া অন্যদের ক্ষমা করে দেন।'-মুসনাদে বাজজার : ৮০।

আসুন আমরা এ রাতে ইবাদত-বন্দেগির প্রতি মনোযোগী হই, বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং বিশুদ্ধ আমলের মাধ্যমে শবেবরাতের ফজিলত, বরকত ও মাগফিরাত হাসিল করি। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করুন। সর্বত্র শান্তির ছায়া বিস্তৃত হোক। মানব কল্যাণের আলো ছড়িয়ে পড়ুক।

  • শিক্ষক ও সংবাদমাধ্যমকর্মী
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা