প্রেক্ষাপট
মো. মসিউর রহমান হিমেল
প্রকাশ : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:২৭ এএম
১৯৫২ সালের ৮
ফাল্গুন বা ২১ ফেব্রুয়ারি দেশের বীরসন্তানদের বহু ত্যাগতিতিক্ষার বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত
হয়েছে মাতৃভাষার মর্যাদা। তারা অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছেন নিজেদের অমূল্য জীবন। বিভিন্ন
ভূখণ্ডে মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে স্বাধীনতা অর্জন ও বৈষম্য দূরীকরণের জন্য। কিন্তু
মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার সংগ্রামে প্রাণ বিসর্জনের ঘটনা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। ১৯৫২-এ
ফেব্রুয়ারি ভাষার জন্য প্রাণ বিসর্জন দিয়ে বাঙালি বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে দিল ভাষার প্রশ্নে
কোনো আপস নেই। ১৯৪৭-এ অত্যাচারী শাসকগোষ্ঠী বাংলা ভাষার অধিকার বিষয়ে স্বেচ্ছাচারিতার
ঘৃণ্য পরিচয় দেয়, সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর মতামত উপেক্ষা করে একটি অযৌক্তিক পদক্ষেপের
পরিণাম শুভ নয় জেনেও নির্লজ্জের মতো প্রচণ্ড আঘাত করে। প্রতিবাদ তখন তুঙ্গে ওঠে, প্রতিরোধ
উচ্চকিত হয় রাজপথে, সংসদে। সর্বস্তরের মানুষের ঘৃণা ও ধিক্কার সত্ত্বেও পাক শাসকচক্র
উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার হীন ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে। ঘনিয়ে আসে ’৫২-এর সেই রক্তঝরা দিন
২১ ফেব্রুয়ারি। আর বুকের তাজা রক্ত দিয়েই রাখতে হলো মায়ের ভাষার মান।
শহীদ হলেন রফিক,
জব্বার, সালাম, বরকতসহ নাম না জানা অনেকে। কবির ভাষায়- ‘এক থোকা নাম’ রচিত হলো রক্তে
লেখা এক ইতিহাস। নির্মিত হলো বাংলার মাটিতে শহীদ মিনার, সূচিত হলো স্বাধিকার আদায়ের
স্তম্ভ। অবাক বিস্ময়ে পৃথিবী প্রত্যক্ষ করল বাঙালি জাতির গৌরবদীপ্ত অধ্যায়। মর্মস্পর্শী
গীত রচিত হলো- ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি’। এ অমোঘ
সুর ও বাণীতে গোটা জাতি শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা-ভক্তি-ভালোবাসায় আবেগাপ্লুত-অশ্রুসজল
হয়ে পড়ল। সেই মহান ’৫২-এর পর থেকে প্রতিটি ২১ ফেব্রুয়ারি মানুষ প্রভাতফেরির মধ্য দিয়ে
শহীদ মিনারে সমবেত হয়, শহীদদের প্রতি তাদের হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা জানাতে
এগিয়ে আসে। জীবন বিসর্জন দিয়ে শহীদেরা বাঙালির হৃদয়ে স্থায়ী আসন করে নিয়েছেন। ২১ ফেব্রুয়ারি
এলেই আমরা সবাই শহীদ মিনারে যাই শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাতে।
বর্তমানে তাই ২১ ফেব্রুয়ারি ভিন্ন মাত্রায়, ভিন্ন আঙ্গিকে প্রতিপালিত হয়। কারণ মহান ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে বিশ্বসভায় তার স্বীকৃতির মাধ্যমে স্থায়ী আসন করে নিয়েছে। এটা কিন্তু কোনো অংশে কম গুরুত্ব বহন করে না। আমরা মে দিবসের কথা সবাই জানি। আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে শিকাগোর মেহনতি মানুষ জীবন দিয়েছিল। এ হত্যাকাণ্ড স্মরণ করেই বিশ্ববাসী কিন্তু ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস পালনের মধ্য দিয়ে তাদের প্রতি প্রগাঢ় ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা জানায়। একই ভাবে ২১ ফেব্রুয়ারি দুই দশকের বেশি সময় ধরে গোটা বিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। এটা বাঙালি জাতি হিসেবে আমাদের গৌরব ও পরম অহংকারের। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর বহু চড়াই-উতরাই পেরিয়ে মহান ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা পায়। সেই থেকে ১৯৪টি দেশে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রূপে পালিত হচ্ছে। অভাবনীয় এ সাফল্যে যাদের অবদান রয়েছে প্রত্যেককেই আমাদের সশ্রদ্ধ অভিনন্দন ও সালাম।