× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস

বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশ এখন সর্বত্রগামী

অজয় দাশগুপ্ত

প্রকাশ : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৪:১৪ পিএম

বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশ এখন সর্বত্রগামী

বাংলাদেশ থেকে অনেক দূরে বসবাস আমাদের। হাজার হাজার মাইল দূরের দেশগুলোয় বসবাসরত বাংলাদেশিরা কীভাবে এসব দেশ ও সমাজ আপন করে নিয়েছে না দেখলে বোঝা অসম্ভব। এ আপন করাটা তার দরকার। সঙ্গে তার বসবাস ও জীবন নিরাপদ রাখা। একইভাবে আমাদের শেকড় আছে। আমরা এমন কোনো জাতিসত্তা নই যাকে পরিচয় করিয়ে দিতে হয়। বাঙালির পরিচয় তার কৃষ্টি, ইতিহাস আর স্বাধীনতায়। সবচেয়ে বড় ক্ষেত্রটি তৈরি করে ভাষা আন্দোলন। আমাদের ভাষার লড়াই। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন না হলে বাংলা ভাষা তার মর্যাদা লাভ করত না। আর সেটা না হলে আজকের বাংলাদেশও হতো না।

ইতিহাস কমবেশি সবাই জানেন। বলছি আজকের বাংলাদেশ ও ভাষা আন্দোলনের বিস্তৃতির গল্প। কি আশ্চর্য, আমাদের ভাষা আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছিলেন তাদের নামে নাম এমন কজন কানাডাপ্রবাসী বাংলাদেশি জাতিসংঘে ধরনা দিয়েছিলেন মহতী উদ্দেশ্যে। বিশ্বসংস্থার কাছ থেকে এর সম্মান আদায় করতে। তা তারা পেরেছেন। তাদের কারণে আজ জাতিসংঘ বা ইউনেসকো স্বীকৃত মাতৃভাষা দিবসের নাম একুশে ফেব্রুয়ারি; যা চির-অম্লান এবং বিশ্বনন্দিত। আসি সিডনি প্রসঙ্গে। আমাদের প্রজন্ম যখন অভিবাসী হয়ে এসেছিলাম কিছুই ছিল না। না বইয়ের বাজার, না শহীদ মিনার, না কোনো ভাষাভিত্তিক বড় আয়োজন। ওই অচলায়তন ভেঙে এখন আমাদের একাধিক মিনার আছে। মূল ও প্রথম যেটি তার নাম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা স্মৃতিসৌধ। একুশে বইমেলা ধীরে ধীরে একুশে একাডেমি হলো। তারাই দায়িত্ব নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছে্ন এ স্মৃতিসৌধ। তখন নিজেদের ঐক্য আর সংহতি দেখে বিস্ময় মেনেছিলাম। কথায় কথায় বিভাজনের সমাজ এক কাতারে এসে দাঁড়িয়েছিল। কেন? একটি জাতীয় স্মৃতিসৌধ হবে বলে। মানুষের ভালোবাসার কথাও বলতে হবে। বাঙালি বিদেশের মাটিতে দেশপ্রেমী। এটা আমাদের গর্ব। এই গর্বের প্রতীক আজ আমাদের সবার অহংকার।

কী হয় এখানে? সকালে প্রভাতফেরি, রাত ১২টা ১ মিনিটে ফুল দেওয়া। পরে গান-কবিতা, ছবি আঁকা সব হয়। আছে বইয়ের পসরা। একুশে একাডেমি, মুক্তমঞ্চ, প্রশান্তিকা, মেরুদণ্ড এমন সব নামের বইয়ের দোকানে ভিড় করেন পাঠক। দেদার বই বিক্রি আর নবীন লেখকের আগমনে প্রতি বছর ফুলে-ফেঁপে এখন মহিরুহ। না, এখানেই শেষ নয়। আমাদের ভাষাসংগ্রামের আরেকটা দিক এখনও আবিষ্কার হয়নি। সেটি হচ্ছে এ দেশে বড় হয়ে ওঠা প্রজন্মের কৃতিত্ব। তারা কী করে শুনলে অনেকেই অবাক হবেন। তাদের কেউ কবিতা লেখে, কেউ গান গায়, কেউ অভিনয় করে, কেউ নির্দেশনা দেয়। আমার ছেলেও একজন সফল অভিনেতা ও নির্দেশক। তার পরের প্রজন্মও এখন সামনের কাতারে। মুগ্ধ হয়ে দেখি আর ভাবি এভাবেই বিশ্ব জয় করে চলেছি আমরা!

একুশের সঙ্গে বিশ্ববাঙালির যোগ শুধু বাংলা ভাষায় সীমাবদ্ধ নেই। একুশে সেটা চায়ও না। তার দরকার অধিক বিস্তার। কিছুদিন আগে অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর এসেছিলেন ঢাকায়। একটি অনুষ্ঠানে দেখলাম তাকে কেউ একজন বাংলায় কথা বলার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। শর্মিলা ঠাকুর বিনয়ের সঙ্গে বলেছিলেন, তিনি বাংলা জানেন এবং এটা সবার জানা। আন্তর্জাতিক একটি আয়োজনে আন্তর্জাতিক ভাষা ইংরেজিতে কথা বলা ন্যায়সঙ্গত। যদি বড় পরিসরে আমরা তা ভাবি তবে কথাটা সত্য। আমাদের সময় হয়েছে নিজেদের ভাষা আন্তর্জাতিক করে তোলার। সে কারণে ইংরেজি, ফরাসি, আরবি এমন সব ভাষার দরকারও উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। স্প্যানিশের মতো ভাষা সাহিত্যবিরল। তাদের দিকে মুখ ফেরানোয় আছে আনন্দ। আগেকার জমানার বাঙালি বুদ্ধিজীবীর অনেকেই বহুভাষাবিদ পণ্ডিত ছিলেন। তাদের কারণেই আমরা বাংলা ভাষার সঙ্গে সেসব ভাষার যোগ খুঁজে পেয়েছি। পেয়েছি সুললিত সুখপাঠ্য সাহিত্যসম্ভার।

আমার গায়কবন্ধু দম্পতি মনজুর হামিদ কচি ও নাসরিন হামিদের একমাত্র মেয়ে মুনাসিব হামিদের একটি কাজ আমাকে আপ্লুত করেছে। মেয়েটিকে কথা না ফোটার শৈশব থেকে চিনি। সেই মোনা এখন ছবির কারিগর। এখানকার প্রখ্যাত টিভি চ্যানেল আর সরকারি অনুদানে তারা কয়েকজন মিলে স্বল্পদৈর্ঘ্যের একটি মিনি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছে। সিডনির পশ্চিম নিয়ে নির্মিত এ চিত্রকল্পটি আমাদের জন্য আশা ও সুখের খবর। ধীরে ধীরে আমাদের যাত্রা ও গন্তব্য তার জায়গা খুঁজে নিয়েছে এটা তার এক বিশাল উদাহরণ। ছবিটির বিস্তারিত দেখতে হলে তাদের ওয়েব পেজে যেতে হবে। পাওয়া যাবে, হিয়ার আউট ওয়েস্ট। এসব বাংলাদেশি নির্মাতা মোটামুটি এটা নিশ্চিত করছেন, সময় আমাদের। যারা প্রবাসের বাঙালিকে দূরের কেউ মনে করেন বা ভাবেন এরা পর হয়ে গেছে, তারা বড় ধরনের ভ্রান্তির ভেতর বসবাস করেন। গ্লোবাল ভিলেজের যুগ। আধুনিক বিশ্ব বা ভুবনগ্রামে আমরা দুনিয়াজোড়া সবার প্রতিবেশী। যে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন আর অগ্রযাত্রার কথা শুনি তার সঙ্গে এর যোগ নিবিড়। সিডনি বলে নয়, দুনিয়াজোড়া বাঙালির বিস্তার এখন সব দেশে, সব বড় শহরে।

গত সপ্তাহে গিয়েছিলাম বিখ্যাত পর্যটন শহর ক্রেইনসে। সিডনি থেকে তিন ঘণ্টার উড়াল। অনেক দূরের এ জায়গাটি নিয়ে গল্প আছে বিস্তর। মানুষ যখন চন্দ্র বিজয়ে নেমেছিল তখন তারা মহাশূন্য থেকে চীনের প্রাচীরের পাশাপাশি এ জায়গাটির সমুদ্রে থাকা প্রবালদ্বীপ দেখেছিল। নয়নাভিরাম এ এলাকার পর্যটনে কুমির দেখতে গিয়েছিলাম। কুমিরে কুমিরে সয়লাব লেগুন বা সবুজাভ জলাশয়ে বোট বা ছোট জাহাজে ভ্রমণ। তার আগে নিজেকে চাঙা করতে গিয়ে এক কাপ চা পান করার সময় পরিচয় হলো নিকের সঙ্গে। নীল টি-শার্ট পরা নিক ছিলেন আর দশজন ট্যুরিস্টের মতো। কেন তার সঙ্গে আলাপ? তার সে টি-শার্টটির পেছনে অনেক ভাষায় কিছু একটা লেখা ছিল। হঠাৎ দেখি মাঝখানে জ্বলজ্বল করছে বাংলা ভাষা। তার টি-শার্টের পেছনে লেখা ‘জীবন বাঁচাতে আকাশ পথে’। কক্সবাজারের সঙ্গে সম্পর্কিত এক ভিন্ন গল্প। বাংলা ভাষা ও দেশ বাংলাদেশ এখন সর্বব্যাপী এক উজ্জ্বল নাম, এই সত্য এড়ানো দুরূহ। সেটা নিক হোক আর তরুণী মোনা হক, আমাদের পরিচয়, আমাদের ভাষা বড় করে তুলছে তারা। একুশের সঙ্গে যোগ না থাকলে কি তা হতো? যে ভাষার জন্য মানুষ প্রাণ দিয়েছিল এর এমন জয় ইতিহাসেরই বিচার। আমাদের দেশ ও জাতির অহংকার।


  • সিডনি প্রবাসী লেখক
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা