প্রেক্ষাপট
কামরুজ্জামান তোতা
প্রকাশ : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১২:০২ পিএম
দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে জীবনযাত্রার সম্পর্ক অত্যন্ত
নিবিড়। একটি পরিবার কীভাবে দৈনন্দিন জীবন নির্বাহ করবে তা নির্ভর করে ওই পরিবারের
আয়, চাহিদা ও দৈনন্দিন ব্যয়ের ওপর। নিত্যপণ্যের মূল্য যখন সহনীয় পর্যায়ে এবং
সাধারণ মানুষের সামর্থ্যের মধ্যে থাকে, তখন তাদের জীবন কাটে স্বস্তিতে। অন্যদিকে
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য যখন সাধারণ মানুষের আর্থিক সঙ্গতির সঙ্গে
অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে যায়, তখন দরিদ্র ও অতিদরিদ্র পরিবারে শুরু হয় অস্বস্তি। তাই
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে একদিকে জনজীবনে নেমে আসে কষ্টের ছায়া। দৈনন্দিন
জীবনে আমাদের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা।
আর এ মৌলিক মানবিক চাহিদাগুলোর মধ্যে অন্নের প্রয়োজন সর্বাগ্রে। কিন্তু
খাদ্যদ্রব্য, চাল, ডাল, তেল, লবণ, মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, মাছ, তরকারি, চিনি, দুধ
ইত্যাদি নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যের অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতি জনজীবনের গতি
অচল ও আড়ষ্ট করে তোলে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের লাগামহীন দাম বৃদ্ধি অন্যতম সমস্যা
হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ন্যায়সঙ্গত মূল্য বলতে বর্তমানে কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র
পাওয়া যায় না। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের পাশাপাশি বাড়ছে বাসা ভাড়া, পরিবহন ভাড়া,
চিকিৎসা ও শিক্ষা খাতের ব্যয়। শুধু যে পণ্যদ্রব্যের দামই বেড়েছে তাই নয়, বেড়েছে
গ্যাস-বিদ্যুতের দাম, পরিবহন ব্যয়, বাসা ভাড়া।
চাল, ডাল, মাছ, মাংস, তেল, তরিতরকারি, ফলমূল, চিনি,
লবণ, গম, আটা, রুটি, বিস্কুট ইত্যাদির মূল্য আগের তুলনায় কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
ফলে সাধারণ মানুষ বিশেষ করে খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। অতিরিক্ত
মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের জন্যই সাধারণ মানুষকে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
সরকারি-বেসরকারি সেবার দামও বাড়ছে। কিন্তু সে অনুপাতে বাড়ছে না মানুষের আয়। ফলে জীবনযাত্রার মানেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বাজার অস্থিতিশীল হওয়া মানেই দেশের বেশিরভাগ মানুষের ওপর চাপ পড়া। তাই সরকারকে বাজারে নিয়ন্ত্রণই শুধু নয়, কর্মসংস্থানও বাড়াতে হবে। তখন উৎপাদন বাড়বে, বাড়বে ক্রয়ক্ষমতাও। আয় বাড়লে মূল্যস্ফীতির আঘাতও হয় সহনীয়। কালোবাজারি, মুনাফাখোর, মজুদদার প্রভৃতির কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় ও অপরিহার্য দ্রব্যগুলোর মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রতিদিন এবং ক্রমে এসব পণ্য সংগ্রহ করা কঠিনতর হচ্ছে দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত মানুষের জন্য। জনজীবন আজ বিপর্যস্ত, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি বুভুক্ষু মানুষকে অর্ধাহার-অনাহারে দিন কাটাতে বাধ্য করছে। মানুষের একটু ভালোভাবে বাঁচার দাবি আজ সর্বত্র। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি তাদের প্রতিকূলে। সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার সীমা অতিক্রম করে অশ্বগতিতে বেড়ে চলেছে ব্যয়ের খাত। এরূপ হারে পানির বিল, গ্যাস বিল, জ্বালানি তেল ও দ্রব্যমূল্যের অতিরিক্ত খরচ জনগণের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। জনগণ আশা করছে অবস্থার উন্নতি হবে, দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিসের মূল্য কমবে। সরকার ও ব্যবসায়ীদের সদিচ্ছাই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করতে পারে। তাতে দেশের বৃহৎ গ্রামীণ জনগোষ্ঠী আরও একটু সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা পায়।