সরস্বতী পূজা
মহানন্দ বিশ্বাস
প্রকাশ : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০০:৩০ এএম
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের
কাছে বিদ্যা ও সংগীতের দেবী সরস্বতীর আরাধনাকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠেয় উৎসব সরস্বতী
পূজা। শাস্ত্রীয় বিধান অনুসারে মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী পূজা হয়।
তিথিটি শ্রীপঞ্চমী বা বসন্ত পঞ্চমী নামেও পরিচিত। শ্রীপঞ্চমীর দিন প্রত্যুষে বিভিন্ন
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ছাত্রছাত্রীদের গৃহ ও সার্বজনীন পূজামণ্ডপে সরস্বতীর পূজা করা হয়।
এদিন শিশুদের হাতেখড়ি, ভোজন ও পিতৃতর্পণের প্রথাও প্রচলিত। পূজার পরের দিনটি শীতলাষষ্ঠী
নামে পরিচিত।
সরস্বতী পূজা
সাধারণ পূজার নিয়মানুসারেই হয়। তবে এই পূজায় কয়েকটি বিশেষ উপচার বা সামগ্রীর প্রয়োজন
হয়। যথা : অভ্র-আবীর, আমের মুকুল, দোয়াত-কলম ও যবের শিষ ইত্যাদি। পূজার জন্য বাসন্তী
রঙের গাঁদা ফুলও প্রয়োজন হয়। লোকাচার অনুসারে, শিক্ষার্থীরা পূজার আগে কুল অর্থাৎ
বরই খায় না। পূজার দিন কিছু লেখাও নিষেধ এমনটিও অনেকের অভিমত। যথাবিহিত পূজার পর লক্ষ্মী,
নারায়ণ, লেখনী-মস্যাধার (দোয়াত-কলম), পুস্তক ও বাদ্যযন্ত্রেরও পূজা করার প্রথা প্রচলিত
আছে। আগেই বলেছি, এদিন ছোটদের হাতেখড়ি দিয়ে পাঠ্যজীবন শুরু করা হয়।পূজান্তে পুষ্পাঞ্জলি
দেওয়ার প্রথা রয়েছে এবং অঞ্জলি প্রদানকালে মন্দিরে মন্দিরে উৎসব পরিলক্ষিত হয়।
সরস্বতী পূজার
গুরুত্ব বহুমাত্রিক। প্রকৃতি, শাস্ত্র এবং বিধি বিশ্লেষণে জানা যায়, বসন্তের আগমনে
ফুটে ওঠে প্রকৃতির প্রতিটি কণা। এমনকি পশুপাখিরাও আনন্দে ভরে ওঠে। প্রতিদিন নতুন উদ্যমে
সূর্যোদয় হয় এবং নতুন চেতনা দিয়ে পরের দিন আবার আসার আশ্বাস দিয়ে চলে যায়। যদিও
এই পুরো মাঘ মাস উত্সাহজনক, কিন্তু বসন্ত পঞ্চমীর (মাঘ শুক্লা পঞ্চমী) উত্সব বাঙালি
হিন্দুদের নানাভাবে প্রভাবিত করে। জ্ঞান ও শিল্পের দেবী সরস্বতীর জন্মদিন হিসেবে বিবেচিত
হয় এই দিনটি। শিক্ষা বা শিল্পকর্মের সূচনার জন্য এই দিনটি অত্যন্ত শুভ বলে মানা হয়।
অনেকে এই দিনে গৃহ প্রবেশও করেন।
সরস্বতী দেবীর
বর্ণনায় লক্ষ করা যায়, দেবী শুক্লবর্ণা। শুক্লবর্ণ মানে সাদা রঙ। সত্ত্বগুণের প্রতীকও
সাদা। গীতার চতুর্দশ অধ্যায়ের ৬নং শ্লোকে আছে, ‘তত্র সত্ত্বং নির্মলত্বাৎ’ অর্থাৎ
সত্ত্ব, রজঃ ও তমোগুণের মধ্যে সত্ত্বগুণ অতি পবিত্র গুণ, স্বচ্ছতার প্রতীক, নির্মলতার
প্রতীক। আবার ওই অধ্যায়েরই ১৭নং শ্লোকে আছে, ‘সত্ত্বাৎ সংজায়তে জ্ঞানং’ অর্থাৎ সত্ত্বগুণে
জ্ঞান লাভ হয়। তাই জ্ঞানময়ী সর্বশুক্লা দেবী শ্রী শ্রী সরস্বতী জ্ঞানে গুণান্বিত
বলে তার গায়ের রঙ শুক্লবর্ণা অর্থাৎ দোষহীনা ও পবিত্রতার মূর্তি। তাই পূজার জন্য দেবী
সরস্বতীর মূর্তি শ্বেতবস্ত্র পরিধান করে থাকে, যা পবিত্রতারই নিদর্শন।
সরস্বতী দেবীর এক হাতে বীণা। জীবন ছন্দময়। বীণার ঝংকারে উঠে আসে ধ্বনি বা নাদ। বিদ্যাদেবী সরস্বতীর ভক্তরা সাধনার দ্বারা সিদ্ধি লাভ করলে বীণার ধ্বনি শুনতে পান। বীণার সুর মধুর। পূজার্থী বা বিদ্যার্থী বা শিক্ষার্থীর মুখ নিঃসৃত বাক্যও যেন মধুর হয় এবং জীবনও মধুর সংগীতময় হয় এ কারণেই মায়ের হাতে বীণা। হাতে বীণা ধারণ করেছেন বলেই তার অপর নাম বীণাপাণি। দেবীর এক হাতে পুস্তক। বিদ্যার্থীর লক্ষ্য জ্ঞান অর্জন। তিনি আমাদের আশীর্বাদ করছেনÑ ‘জীবনকে শুভ্র ও পবিত্র রাখো। সত্যকে আঁকড়ে রাখো। জীবন ছন্দময় করো। স্বচ্ছন্দে থাকো।’