দিবস
ড. মো. তাসদিকুর রহমান সনেট
প্রকাশ : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৩:৩১ পিএম
কৃষি আমাদের অর্থনীতির
মূল চালিকাশক্তি। অনাদিকাল থেকে মানুষ খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানসহ মৌলিক চাহিদা পূরণে
কৃষির ওপর নির্ভর করছে। দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু
শেখ মুজিবুর রহমান কৃষিশিক্ষা, গবেষণা, সম্প্রসারণ ও কৃষির উপকরণ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনায়
গড়ে তোলেন বিভিন্ন কৃষিপ্রতিষ্ঠান। কৃষিশিক্ষায় আগ্রহী ও কৃষি মজবুত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠার
জন্য ১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি কৃষিবিদদের মর্যাদার আসনে আসীন করেন। আওয়ামী লীগ সরকারের
কৃষিবান্ধব নীতির কারণে আজ আমরা দানাদার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। শাকসবজি, ফলমূল, মাছ-মাংস
ও ডিম উৎপাদনের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে দেশ।
বিশ্ব খাদ্য ও
কৃষি সংস্থা (হু)-এর তথ্যমতে, ২০০১ সালে ১১টি কৃষিপণ্য উৎপাদনে শীর্ষ ১০-এ ছিল বাংলাদেশ।
২০১১ সালে সংখ্যাটি বেড়ে হয় ১৭। ২০২১ সালে ২২টি কৃষিপণ্য উৎপাদনে শীর্ষ তালিকায় স্থান
পেয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ বিশ্বে পাট, সুপারি ও শুকনা মরিচ উৎপাদনে দ্বিতীয়; চাল,
রসুন এবং অন্যান্য শ্রেণিভুক্ত চিনিজাতীয় ফসল ও সবজি উৎপাদনে তৃতীয়; জামের মতো ফল,
সুগন্ধি মসলা ও চা উৎপাদনে চতুর্থ; মসুর ডাল ও গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ফল উৎপাদনে ষষ্ঠ; পেয়াজ,
আলু, আদা, বেগুন, শিমের বিচি, আম উৎপাদনে সপ্তম; কুমড়া, পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম; ফুলকপি,
মটরশুঁটি ও পাখির খাদ্য উৎপাদনে নবম; অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ের মাছ উৎপাদনে তৃতীয় এবং
ইলিশ উৎপাদনে প্রথম স্থান অধিকার করে বিশ্বপরিমণ্ডলে সমাদৃত।
২০০৮-২০০৯ সালে
আমাদের খাদ্যশস্য উৎপাদন ছিল ৩ কোটি ৩৮ লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিক টন, বর্তমানে ৪ কোটি ৭৭
লাখ ১৮ হাজার মেট্রিক টন। পাশাপাশি সরকারের নীতিসহায়তা ও আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে
কৃষিপণ্যের উৎপাদন বেড়েছে ৪৫ শতাংশ। ২০০৯ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত দেশের গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো
বিভিন্ন ফসলের ৬৩১টি উচ্চফলনশীল নতুন জাত এবং ৯৪০টি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। জিএমও
প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিটি বেগুন ও বিটি তুলার জাত উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ হয়েছে। দেশি
ও তোষা পাটের জীবনরহস্য আবিষ্কারসহ ৫ শতাধিক ফসলের ক্ষতিকারক ছত্রাকের জীবনরহস্য উন্মোচন
হয়েছে।
উল্লিখিত সব অর্জনের পেছনে নিয়ামক বা নির্দেশক হিসেবে কাজ করেছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি কৃষিবিদদের প্রথম শ্রেণির পদমর্যাদায় উন্নীত করার ঘোষণা। দিনটি স্মরণীয় করে রাখতে দীর্ঘকাল পরে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের ২০১০ সালের ২৭ নভেম্বরের সভায় ১৩ ফেব্রুয়ারিকে কৃষিবিদ দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত হয়। ওই সিদ্ধান্তের আলোকে ২০১২ সাল থেকে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো কৃষিবিদ দিবস হিসেবে উদ্যাপন করে এবং বর্তমানে প্রতি বছর নিয়মিতভাবে দিনটি নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালন করছে। বর্তমানে কৃষিশিক্ষায় শিক্ষিত গ্র্যাজুয়েটের সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার, তাদের মধ্যে সরকারি পর্যায়ে প্রায় ১৫ হাজার কৃষিবিদ এবং বেসরকারি পর্যায়ে ৫ হাজার কৃষিবিদ কর্মরত। সরকারি পর্যায়ে কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মিলে বর্তমানে প্রায় ২৪টি কৃষিভিত্তিক সংস্থার পাশাপাশি কৃষিবিদরা সাতটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যাংক-বীমাসহ পুলিশ ও প্রশাসনে কর্মরত। আমাদের অঙ্গীকার হোক ঐক্য ও সংহতির মাধ্যমে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া এবং ১৭ কোটি মানুষের খাদ্য, পুষ্টি ও বস্ত্রে নিরাপত্তায় নিজেদের উৎসর্গ করা। দিবসটিকে জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণার আবেদন জানাই।