× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ঐতিহ্য

সাগরদিঘি পাড়ের দাঁড়াগুটি

আবু সালেহ আহমদ

প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:৪৫ এএম

সাগরদিঘি পাড়ের দাঁড়াগুটি

হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার ঐতিহ্য দাঁড়াগুটি। দাঁড়াগুটির কিংবদন্তি নিয়ে দেশে-বিদেশে অনেক জনশ্রুতি রয়েছে। উপজেলা সদরের ৪নং ইউনিয়নের সাগরদিঘির পশ্চিমপাড়ে বর্তমান এলআর হাইস্কুলের সন্নিকটে পাথরের এ দাঁড়াগুটির অবস্থান। দাঁড়াটির ওজন আনুমানিক ১৫ মণ এবং গুটির ওজন আনুমানিক ১০ মণ। দাঁড়াটি প্রায় ৪ হাত লম্বা এবং গুটি ১.৫ হাত প্রস্থ, অনেকটা গোলাকার। দাঁড়াগুটির অবস্থানের সন্নিকটেই বিখ্যাত পালোয়ান হব্যা-গোমার সমাধি। সমাধির পশ্চিম দিকে তিনটি পিলার ও অনেক ছোট ছোট পাথর। হব্যা-গোমার কবর যুগ যুগ ধরে ইটের ছোট পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। জনশ্রুতি অনুযায়ী, হব্যা ও গোমা দুই ভাই তাদের বাড়ির পুবদিকে অর্থাৎ সাগরদিঘির পশ্চিমপাড়ে এগুলো দিয়ে দাঁড়াগুটির মতো খেলতেন। দাঁড়াগুটি খেলাটি হচ্ছে ক্রিকেটের মতো একটি আঞ্চলিক খেলা। ব্যাটের মতো দাঁড়া দিয়ে গর্তে রাখা গুটির অগ্রভাগে আঘাত করলে, গুটি লাফিয়ে ওঠে। তখন দাঁড়া দিয়ে গুটিকে আঘাত করে যত দূর নেওয়া যায় ততই এক পক্ষের জন্য সুবিধাজনক। আবার ওই গুটি অন্য জন লুফে নিলে সে বিজয়ী হয়। অন্যথায় ওই গুটি আগের গর্তে রাখা দাঁড়ায় আঘাত করতে হয়।

ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায়, হব্যা ও গোমা একই ব্যক্তি। বলা যায়, হবিব খাঁ ও গোবিন্দ সিংহের বিকৃত রূপ। অনেক ইতিহাসবিদের অভিমত, হবিব থেকে হব্যা এবং গোবিন্দ থেকে গোমা হতে পারে। জগন্নাথপুরের রাজ্য দখল কেন্দ্র করে দিল্লির দরবারে বানিয়াচংয়ের প্রভাবশালী রাজা গোবিন্দ সিংহ নাটকীয়ভাবে হবিব খাঁ নামধারণ করে মুসলমান হন এবং ২৮টি সম্প্রদায়ের লোক নিয়ে বানিয়াচংয়ে ফিরে আসেন। কালের পরিক্রমায় তার পরবর্তী বংশধররা নতুন বাড়ি নির্মাণ করলে সাগরদিঘির বাড়িটি পরিত্যক্ত হয়। হিন্দু থাকাকালে যেরূপ প্রভাবশালী ও জনপ্রিয় ছিলেন মুসলমান হওয়ার পরও তাতে বিন্দুমাত্র ভাটা পড়েনি। ওই সময় রাজারা খাজনার জন্য নগদ টাকার পরিবর্তে যুদ্ধের জন্য নির্মিত ১৬, ২৪, ২৬, ৩৬ কোশা নৌকা জোগান দিতেন। দাঁড়া-২/দাঁড়াগুটির পশ্চিম দিকে দণ্ডায়মাণ যে তিনটি পিলার দেখা যায় তা গায়েবি মসজিদের বলে কিংবদন্তি রয়েছে। বর্তমানে যিনি এ বাড়ির মালিক তার ভাষ্যমতে, তারা তাদের পূর্বপুরুষ থেকে শুনেছেন, গভীর রাতে ওই বাড়ির এক ভদ্রমহিলা ঘরের বাইরে এসে পিলারগুলো দেখে ফেলায় বাকি কাজ আর সম্পূর্ণ হয়ে ওঠেনি বলে তাদের ধারণা।

প্রচলিত এ কিংবদন্তি মানুষ যুগ যুগ ধরে বিশ্বাস করে আসছে। লেখক ও সাবেক সরকারি কর্মকর্তা ড. ফজলে এলাহী বলেন, ‘এ পুরোনো রাজবাড়িটি খনন করলে অতীতের অনেক প্রত্নতত্ত্ব বেরিয়ে আসতে পারে।’ স্থানীয় সাংবাদিক শিব্বির আহমদ আরজু বলেন, ‘পুরোনো রাজাবাড়ি তথা দাঁড়াগুটির নিদর্শনগুলো বেহালদশায় পতিত হচ্ছে, শত শত বছরের ঐতিহ্য স্বার্থান্বেষীরা নষ্ট করে দিচ্ছে।’ বানিয়াচংয়ের এই ঐতিহ্য রক্ষায় প্রত্বতত্ন বিভাহ এগিয়ে আসবে এ প্রত্যাশা এলাকাবাসীও লোকসংস্কৃতি গবেষকদের। 

  • লেখক ও গবেষক
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা