× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

অপরাধের উৎসে নজর রাখুন, প্রতিবিধান নিশ্চিত করুন

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১২:১৯ পিএম

অপরাধের উৎসে নজর রাখুন, প্রতিবিধান নিশ্চিত করুন

যেকোনো স্থিতিশীল সমাজের অন্যতম শর্ত জননিরাপত্তা। টেকসই উন্নয়নের সঙ্গেও জননিরাপত্তার বিষয়টি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। সন্দেহ নেই, উন্নয়ন-অগ্রগতির মহাসড়কে আমরা উঠেছি, কিন্তু জননিরাপত্তা-সামাজিক শৃঙ্খলা এবং প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে নিয়মনীতির যথাযথ প্রতিপালন ইত্যাদি জরুরি বিষয় এখনও অনেক ক্ষেত্রেই নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। অপরাধ সমাজের অন্যতম গুরুতর ব্যাধি এবং এই ব্যাধি উন্নয়ন-অগ্রগতির অন্যতম প্রতিবন্ধক। স্বাধীনতার পাঁচ দশকেরও বেশি সময়ে এ রকম তিক্ত অভিজ্ঞতা ইতঃপূর্বে আমাদের সঞ্চিত হয়েছে। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে সমাজে অপরাধ বৃদ্ধির মতো উদ্বেগজনক পরিস্থিতির উদ্ভব কিংবা জিইয়ে থাকা অনেকটাই অপ্রত্যাশিত। কারণ, টানা চতুর্থবারসহ পঞ্চমবারের মতো আওয়ামী লীগপ্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের শাসনকালে বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির চিত্র গল্প নয়, আমূল বদলে দেওয়ার দৃশ্যমান বাস্তবতা। কিন্তু এর পাশাপাশি যদি দৃশ্যমান হয় জননিরাপত্তাহীনতার ছায়া, তাহলে তা সাফল্যের অবয়বে প্রশ্নবোধক চিহ্ন যুক্ত করে।

৯ ফেব্রুয়ারি প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ ‘বেড়েছে লোমহর্ষক অপরাধ’ শিরোনামযুক্ত প্রতিবেদনটি প্রশ্ন দাঁড় করায়, এর কারণ কী। হঠাৎ করেই সারা দেশে খুন, ধর্ষণ, হত্যা, অপহরণসহ লোমহর্ষক অপরাধের ঘটনা বেড়েছে। বিগত এক সপ্তাহে প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ অপরাধজনিত এমন কিছু মর্মস্পর্শী ঘটনার চিত্র উঠে এসেছে যা বিস্ময়কর, উদ্বেগজনক যুগপৎ প্রশ্নবোধক। আমরা দেখছি, সমাজের বিভিন্ন স্তরে অপরাধপ্রবণতা হঠাৎ করে মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পারিবারিক সহিংসতার যেসব ঘটনা দৃশ্যমান হয়েছে তা-ও মূল্যবোধের অবক্ষয়জনিত কারণ থেকে সৃষ্ট বলেই প্রতীয়মান হয়। উপরন্তু দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাঙ্গনেও ধর্ষণ, যৌন নিপীড়নসহ নানাবিধ গুরুতর অপরাধ চিত্র সাক্ষ্য দেয়, মূল্যবোধের অধঃপতন চরম পর্যায়ে ঠেকেছে। মহানগর-নগর-শহর এমনকি গ্রাম পর্যায়েও বহুমাত্রিক অপরাধের বিস্তৃতি ঘটেছে। অভিযোগ আছে, অধিকাংশ ঘটনার ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে ক্ষমতাসীন মহলের সংগঠন-উপসংগঠনের নেতাকর্মীদের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সম্পৃক্ততা রয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণের মতো বর্বরোচিত ঘটনা এরই একটি খণ্ডিত দৃষ্টান্ত। সমাজবিজ্ঞানী ও বিশ্লেষকদের অভিমত, সামাজিক অস্থিরতাÑক্ষমতার দম্ভÑমাদকের আগ্রাসনে এবং অবৈধভাবে অর্থ কামাইয়ের মতো নেতিবাচক বিষয়গুলো কেন্দ্র করেই অপরাধের বিস্তৃতি ঘটছে।

আমরা মনে করি, অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে শুধু সামাজিক অস্থিরতাই প্রত্যক্ষ কারণ নয়, এর সঙ্গে রাজনৈতিক ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয়গুলোও সম্পৃক্ত। তা ছাড়া প্রযুক্তির উৎকর্ষের এই যুগে অনেক ক্ষেত্রেই এর সদ্ব্যবহার না করে সমাজের কিংবা প্রজন্মের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ অপব্যবহারে মেতে উঠেছে। আমাদের অভিজ্ঞতায় এ-ও আছে, রাজনৈতিক হীনস্বার্থ চরিতার্থকরণের জন্যও কোনো কোনো রাজনীতিক সমাজবিরোধীদের নানাভাবে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেন এবং এর বিরূপ প্রভাব ভয়াবহ হয়ে ওঠে। বিদ্যমান পরিস্থিতির পেছনে এর কোনো যোগসূত্র রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা জরুরি। একই সঙ্গে প্রয়োজন দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ। দুঃখজনকভাবে আমাদের সমাজে ‘বিচারহীনতার অপসংস্কৃতি’ শব্দযুগল বহুল প্রচলিত হয়ে পড়েছে। আমরা দেখছি অনেক ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার প্রাপ্তির আশা ছেড়ে দিয়েছেন ভুক্তভোগী। এর পেছনে মুখ্যত দায়ী বিচারপ্রক্রিয়ার অন্যতম জরুরি অনুষঙ্গ সুষ্ঠু তদন্ত কার্যক্রমে অনাকাঙ্ক্ষিত বিলম্ব এবং অভিযোগপত্র গঠনে ধীরগতি। এই উপসর্গগুলো জিইয়ে রেখে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা যে সহজ নয় এর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ নতুন করে নিষ্প্রয়োজন।

চাঞ্চল্যকর কোনো ঘটনা ঘটলে সংবাদমাধ্যম মুখর হয়ে ওঠে, সরকারের সমালোচনা হয়, প্রশাসনের দায়িত্বশীল কারও কারও গাফিলতির চিত্র উঠে আসে কিংবা আইনশৃঙ্খলা পরিস্তিতির অবনতি নিয়ে নানা মহল থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এই প্রেক্ষাপটে সরকার ও প্রশাসন কিছুটা নড়েচড়ে বসে কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই যথাযথ প্রতিবিধান নিশ্চিত না হওয়ার মতো অনভিপ্রেত অধ্যায় সামনে চলে আসে। ফলে অপরাধী আড়াল থেকে ফিরে আসে কিংবা দুর্বল অভিযোগ গঠনের কারণে গ্রেপ্তার হলেও জামিন নিয়ে বেরিয়ে যায়। আমাদের অভিজ্ঞতায় এ-ও আছে, তারাই পরবর্তী সময়ে আরও গুরুতর অপরাধে জড়িয়ে পড়ে এবং গুরুতর অপরাধীদের কেউ কেউ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখে ধুলো দিয়ে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার নজিরও রয়েছে। গুরুতর কোনো অপরাধী কারা অভ্যন্তর থেকে তার চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ করে নানামাত্রিক অপরাধের বিস্তৃতি ঘটায় এমন চিত্রও ইতঃপূর্বে সংবাদমাধ্যমেই বহুবার উঠে এসেছে। অর্থাৎ অপরাধ চক্রের ধারাবাহিকতায় কোনো ছেদ পড়ছে না। অপরাধ কেন হয়, অপরাধের মাত্রা কেন বাড়ে, অপরাধীরা কেন বেপরোয়া হয়ে ওঠে এমন অনেক প্রশ্নও বহুবার উত্থাপিত হয়েছে। কিন্তু সমাজকে অপরাধমুক্ত করতে হলে কাকে কী করতে হবে, কোনো দিকে নজর দিতে হবে, এসব কোনো বিষয়ই জটিল কিছু নয়। তা ছাড়া প্রযুক্তির উৎকর্ষকালে গুরুতর রহস্যের জাল ছিন্ন করে প্রকৃত চিত্র উদঘাটন এখন তেমন কোনো জটিল বিষয়ও নয়। পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি (অপারেশনস) আনোয়ার হোসেন এ ব্যাপারে প্রতিদিনের বাংলাদেশের কাছে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, শিগগিরই লোমহর্ষক অপরাধ কমে যাবে। এমন ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য এসপিদের নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। আমরা প্রকৃতই এর কার্যকারিতা দেখতে চাই।

কিছু সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সক্ষমতা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি। জননিরাপত্তা নিশ্চিত করায় সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর দায় অনেক বেশি তা সত্য, কিন্তু এও অনস্বীকার্য, এক্ষেত্রে রাজনীতিকসহ সমাজ প্রতিনিধিদের দায়ও কম নয়। আমরা মনে করি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুনীতি ও ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের বিশ্লেষণক্রমে এর অনুশীলন জরুরি। তরুণ কিংবা যুবসমাজের সামনে এমন কর্ম অধ্যায়ের সৃজন করতে হবে যেখানে তারা উর্বর চিন্তা কিংবা নৈতিকতা চর্চার অবারিত সুযোগ পায়। এ ব্যাপারে রাজনীতিক ও সমাজপ্রতিনিধিদের ব্যাপক ভূমিকা রাখার অবকাশ রয়েছে। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে দ্রুত যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ অবশ্যই অপরিহার্য, কিন্তু এর পাশাপাশি সামাজিক ও পারিবারিকভাবে মননশীল উদ্যোগের বিষয়গুলোও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।

দেশের বিদ্যমান রাজনীতি নিয়ে নেতিবাচক আলোচনার প্রেক্ষাপটও অস্বীকার করা যাবে না। আমরা মনে করি, রাজনীতিকরা যদি জনকল্যাণ ও গঠনমূলক রাজনীতিচর্চার পথ সুগম করে প্রজন্মকে সুস্থ চিন্তা অনুশীলনের রাস্তা বের করে দিতে পারেন তাহলে সমাজে এর ইতিবাচক প্রভাব দৃশ্যমান হতে বাধ্য। দায়িত্বশীল প্রত্যেকটি মহলের জবাবদিহি নিশ্চিত করার পাশাপাশি ন্যায়বিচার ও অধিকারের ক্ষেত্রে জিইয়ে থাকা বৈষম্য নিরসনে যথাযথ দৃষ্টি এবং আইনের নির্মোহ প্রয়োগ ব্যবস্থার ওপর অবশ্যই গুরুত্ব বাড়াতে হবে। শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অপরাধপ্রবণতার রাশ টানতে পারবে না যদি না অধিকার ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করায় সরকারের দায়িত্বশীল সব পক্ষের যূথবদ্ধ প্রয়াস জোরদার না হয়। একই সঙ্গে সুশাসনের ব্যাপারে মনোযোগ গভীর করতে হবে। আইনের শাসন নিশ্চিত হলে অনেক অনিশ্চয়তাই কেটে যাবে তা আমরা বিশ্বাস করি।


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা