পরিপ্রেক্ষিত
আর কে চৌধুরী
প্রকাশ : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১২:১০ পিএম
রাজধানী ঢাকা
আবর্জনার নগরী হয়ে উঠছে, এ অভিযোগ বহুদিনের। পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষা ও নগরীর সৌন্দর্যবর্ধনের
জন্য ইতোমধ্যে নানা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হলেও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে তা
ব্যর্থ হচ্ছে। ঢাকা মহানগরীর ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য বিভিন্ন স্থানে রয়েছে
সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস)। পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা বর্জ্য সংগ্রহের পর এসটিএসে
জমা করলে তা সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ভাগাড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। দুঃখজনক হলেও সত্য, এ ক্ষেত্রে
বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় তদারকির অভাবে এসটিএসের পাশে রাস্তায় পড়ে থাকে ময়লার স্তূপ। সংবাদমাধ্যমে
প্রকাশ, ঢাকা উত্তরে ৫৪টি ওয়ার্ড থাকলেও এখন পর্যন্ত ২৭টিতে এসটিএস নেই। অন্যদিকে
ঢাকা দক্ষিণ সিটি ৬১ ওয়ার্ডে এসটিএস নির্মাণ করেছে। দুই সিটি এলাকায় প্রতিদিন গড়ে
সাড়ে ৬ হাজার মেট্রিক টনের বেশি ময়লা তৈরি হচ্ছে। এসব বর্জ্যের ৩০ ভাগই উন্মুক্ত
স্থানে রাখা হয়।
বর্জ্য
ব্যবস্থাপনায় ঘাটতির পাশাপাশি নাগরিক সচেতনতার অভাব থাকায়ও মহানগরের বিভিন্ন স্থান
দূষিত হচ্ছে। রাস্তাঘাটে যেখানে সেখানে প্লাস্টিক বর্জ্য এবং বাসাবাড়ির বর্জ্য অনেক
জায়গার সৌন্দর্যের জন্য হানিকারক হয়ে উঠেছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, রাজধানীর ২০
ভাগ বর্জ্য এখনও সংগ্রহের বাইরে থেকে যাচ্ছে। বর্জ্য বিষয়ক সংকট এড়াতে ২০১৭ সালে
১৫ বছর মেয়াদি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।
চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য ২০১৯ সালের নভেম্বরে সেটি স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠানো হয়।
২০২২ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি এর অনুমোদন দেয় স্থানীয় সরকার বিভাগ। তবে এ মহাপরিকল্পনা
বাস্তবায়নে কোনো গতি নেই বললেই চলে। অভিযোগ আছে, হাসপাতালের কর্মীদের একাংশ
মেডিকেল বর্জ্য নষ্ট বা ধ্বংস না করে সংক্রমিত অবস্থায়ই ভাঙারি দোকান ও রিসাইক্লিং
কারখানায় বিক্রি করে দেয়। হাসপাতালে নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মীদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা
সংক্রান্ত জ্ঞানের অভাব এ ক্ষেত্রে বড় অন্তরায়। উদ্বেগজনক তথ্য হলো, ৪০ শতাংশের
বেশি বর্জ্যকর্মীর প্রশিক্ষণ নেই; ৬০ শতাংশের বেশি বর্জ্যকর্মী নিজের দায়িত্বের
অন্তর্ভুক্ত গুরুত্বপূর্ণ বহু তথ্য জানেন না। বিশেষজ্ঞদের মতে, আন্তর্জাতিক
মানদণ্ড অনুসরণ করে চিকিৎসা বর্জ্য (ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াজাতকরণ) বিধিমালা
সংশোধন করা দরকার।
চিকিৎসা বর্জ্য পরিবেশ বিপর্যয়েরও বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর মেডিকেল বর্জ্য যত্রতত্র রাখা হলেও এটি যেন দেখার কেউ নেই। সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষ দায়িত্বশীলতার পরিচয় না দিলে সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা কঠিন হতে পারে। দেশে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অনেক বাধা রয়েছে। এ খাতে উন্নত দেশের মতো অর্থ বরাদ্দ দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। তবে যেটুকু বরাদ্দ দেওয়া হয়, সেই অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।