পরিপার্শ্ব
সেলিম মাহমুদ
প্রকাশ : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৪:০৮ পিএম
মানুষের বই পড়ার আগ্রহ থেকেই গ্রন্থাগারের উৎপত্তি। গ্রন্থাগার একটি
জাতির বিকাশ ও উন্নতির মানদণ্ড। পাঠাগার মানুষের বয়স, রুচি ও চাহিদা অনুযায়ী বই সরবরাহ
করে থাকে। গ্রন্থাগারের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে গড়ে ওঠে সংহতি। একজন পাঠকের সঙ্গে আরেকজন
পাঠকের অভিজ্ঞতার পারস্পরিক বিনিময় হয় সহজ। পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বেড়ে চলেছে।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একেকটি প্রতিষ্ঠান বা স্থাপনা গড়ে উঠছে। আড্ডা বা আলোচনার জন্য রয়েছে
ক্যাফে। নির্মল বিনোদনের জন্য রয়েছে আলাদা মাধ্যম। জ্ঞানচর্চা, আহরণ, ছড়িয়ে দেওয়া এমনকি
পাঠের মূল্যায়নের জন্যও তাই গ্রন্থাগারের রয়েছে আলাদা গুরুত্ব। তবে গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা
করা হলেও তার পৃষ্ঠপোষকতা জরুরি। পৃষ্ঠপোষকতার ধারাবাহিকতা এবং প্রজন্মকে এই প্রতিষ্ঠান
সম্পর্কে সচেতন করে তোলাও সমভাবেই গুরুত্বপূর্ণ।
চিন্তাশীল মানুষের কাছে গ্রন্থাগারের উপযোগিতা অনেক বেশি। গ্রন্থাগার
জ্ঞান আহরণের সহজ মাধ্যম। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে গ্রন্থাগারের উপযোগিতা উন্নত দেশগুলোর
চেয়ে অনেক বেশি। বিদ্যমান বাস্তবতায় অনেকের পক্ষেই বই কিনে পড়া কঠিন। বিশেষত কম লেখাপড়া
জানা ও দরিদ্র মানুষের শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে গ্রন্থাগার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন
করে। আবার গ্রন্থাগারকে কেন্দ্র করেই সাহিত্য ও সংস্কৃতির নানা কর্মকাণ্ড বিকশিত হয়।
জ্ঞানী-গুণী এবং শিক্ষার যেকোনো স্তরের মানুষের সম্মিলনস্থল গ্রন্থাগারের সামাজিক ও
প্রাতিষ্ঠানিক গুরুত্ব তা-ই কম নয়। গণতন্ত্রের সাফল্যে গ্রন্থাগারের ভূমিকা গণমাধ্যমের
চেয়ে কম নয়। আধুনিক বিশ্বে গ্রন্থাগারের প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বাড়ছে। গ্রন্থাগার সবার
জন্য উন্মুক্ত। কিন্তু এই চর্চার ধারাবাহিকতা গড়ে তোলা সহজ নয়। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে
প্রজন্মের একাংশ হয়ে উঠছে বইবিমুখ। তাদের কাছে গ্রন্থাগার নামক প্রতিষ্ঠানটিকে পরিচিত
করে তোলা জরুরি। একটি নির্দিষ্ট জায়গা যেখানে প্রজন্ম বই পড়তে পারবে, যেকোনো বই তারা
নেড়েচেড়ে দেখতে পারবেÑএই সুযোগ প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারি-বেসরকারি স্তরের প্রত্যেককেই
কাজ করতে হবে। দেশে গ্রন্থাগারগুলোর অবস্থা শোচনীয়। সরকারি উদ্যোগেও যে গ্রন্থাগারগুলো
গড়ে তোলা হয়েছে সেগুলোর অনেকগুলোতেই পৃষ্ঠপোষকতা নেই, এ অভিযোগ বহু পুরোনো। কিন্তু
যুগের প্রয়োজনের নিরিখে গ্রন্থাগার চর্চার বিষয়টি গড়ে তোলা জরুরি। এই প্রয়োজন থেকেই
জাতীয় গ্রন্থাগার দিবসে সারা দেশের মতো টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার কচুয়ায় সেলিম আল দীন পাঠাগারেও
ড. হারুন রশীদের সভাপাতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনায় উঠে আসে গ্রন্থাগারের গুরুত্ব।
গ্রন্থাগার চর্চা, সারা দেশে বই পড়ার আন্দোলন ছড়িয়ে দেওয়া এক দিনের
কোনো বিষয় নয়। লাইব্রেরি সক্রিয় করা ও পাঠাভ্যাস বৃদ্ধিতে করণীয় নিয়ে সারা বছরই কথা
বলতে হবে। আশার কথা হলো, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কিছু আলোচনা, কিছু কথা ও কাজ হচ্ছে।
নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও গ্রন্থাগারগুলো কিছুটা সক্রিয় হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। এর
পেছনে আছে বেসরকারি বা ব্যক্তিগত উদ্যোগ। কিন্তু এক্ষেত্রে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতাও বাড়া
জরুরি। সমন্বয়মূলক প্রক্রিয়ায় গ্রন্থাগার চর্চার পথ বিকশিত করতে পারলে তার ইতিবাচক
ফল দৃশ্যমান হতে বাধ্য।