দিবস
এমদাদ হোসেন ভূঁইয়া
প্রকাশ : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১০:২৭ এএম
আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১০:৩০ এএম
বছর ঘুরে এসেছে জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস, ৫
ফেব্রুয়ারি। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য- ‘গ্রন্থাগারে বই পড়ি, স্মার্ট বাংলাদেশ
গড়ি’। দিবসটি গ্রন্থ ও গ্রন্থাগার সুহৃদদের জন্য উৎসবের দিন। ২০১৭ সালের ৭ নভেম্বর
সরকার ৫ ফেব্রুয়ারি ‘জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস’ ঘোষণা করে এবং এই তারিখকে ‘জাতীয়
গ্রন্থাগার দিবস’ হিসেবে উদ্যাপনের লক্ষ্যে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত
নেয়। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১৮ সালে জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস পালিত হয়। প্রথম
বছর জাতীয় গ্রন্থাগার দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল, ‘বই পড়ি, স্বদেশ গড়ি’। দিবসটি উদযাপনের
মাধ্যমে দেশের সরকারি-বেসরকারি গ্রন্থাগারগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের সুযোগ যেমন সৃষ্টি হয়েছে,
তেমনি গ্রন্থাগারগুলোর সেবার মান ও কার্যকারিতাও বেড়েছে।
পাঠক তৈরির মূল উৎস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। অথচ আমাদের প্রাথমিক
ও নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে একাডেমিক গ্রন্থাগার নেই। দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের
সংখ্যা প্রাথমিক বিদ্যালয় ১ লাখ ৩৩ হাজার ২, নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২ হাজার ৪৫৫,
মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৬ হাজার ৪০৮, স্কুল অ্যান্ড কলেজ ১ হাজার ৪০৫ এবং কলেজ ৩ হাজার
৩১৯। এসব প্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করা আবশ্যক, গ্রন্থাগারিকের পদ সৃষ্টি
করা দরকার, সিলেবাস ও রুটিনে ‘তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা’ অন্তর্ভুক্ত
করতে হবে। সরকার ২০১০ সালে মাধ্যমিক স্কুল/দাখিল মাদ্রাসায় সহকারী গ্রন্থাগারিকের
পদ সৃষ্টি করেছে। পদটি এমপিওভুক্ত। গ্রন্থাগারিকদের দাবির মুখে একপর্যায়ে পদ
পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘সহকারী শিক্ষক-তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা’।
কিন্তু অনেক বিদ্যালয়ে পদটি খালি আছে। আবার কোনো কোনো স্কুল/মাদ্রাসায়
গ্রন্থাগারিক থাকলেও তাদের প্রক্সি ক্লাস বা অন্যান্য কাজে নিয়োজিত রাখা হয়। ফলে
শিক্ষার্থীরা গ্রন্থাগার পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে না পাঠক বা
বইপ্রেমী। মাধ্যমিক স্তরেও তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা কোর্স
সিলেবাসভুক্ত করা দরকার।
কলেজ/সমমানের মাদ্রাসায় একাডেমিক লাইব্রেরি
বাধ্যতামূলক। সেখানে গ্রন্থাগারিকের পদ হলো ‘প্রভাষক-তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার
ব্যবস্থাপনা’। কলেজ স্তরে বিষয়টি সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। অনেক কলেজে
গ্রন্থাগার আছে নামমাত্র। আবার যেসব কলেজে গ্রন্থাগার ও গ্রন্থাগারিক আছে, সেখানে
বই ইস্যু করা হয় না, গ্রন্থাগারিক অলস সময় পার করেন কিংবা তাকে অন্য কাজে লাগানো
হয়। ফলে গ্রন্থাগারের সঙ্গে শিক্ষার্থী/পাঠকের সংযোগ গড়ে ওঠে না। বই পড়ার প্রতি
শিক্ষার্থীদের অনুরাগ জন্মায় না। সরকার ইতোমধ্যে দেশের এক হাজার গ্রন্থাগারে ‘বঙ্গবন্ধু
ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার স্থাপন গ্রকল্প’ বাস্তবায়ন করছে। এটা মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস
এবং জাতির পিতার জীবন ও কর্ম শিশু-কিশোরদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
দেশে একটি গ্রন্থাগার আন্দোলন গড়ে তুলতে সমমনা গ্রন্থাগারগুলোকে সঙ্গে নিয়ে নিরলস কাজ করা জরুরি। সারা দেশে গ্রন্থাগার কার্যক্রম ছড়িয়ে দিতে সরকারের পাশাপাশি কাজ করছে গ্রন্থসুহৃদ সমিতি। গ্রন্থাগার স্থাপনে আগ্রহীদের পরামর্শ প্রদান ও সাধারণ মানুষকে বইপাঠে উদ্বুদ্ধ করা যার প্রধান কাজ। গ্রন্থাগার স্থাপন আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ুক। মানুষ বই পড়তে অনুপ্রাণিত হোক। বইয়ের মাধ্যমে জ্ঞানচর্চার ধারা অব্যাহত থাক, গ্রন্থাগার দিবসে সেই প্রত্যাশার সঙ্গে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে গ্রন্থাগারে বই পড়ার কার্যক্রমও ছড়িয়ে পড়ুক।