× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বিশ্ব ইজতেমা

দীনের কাজে আত্ননিয়োগের অনুপ্রেরণা

মুফতি এনায়েতুল্লাহ

প্রকাশ : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১১:১৮ এএম

মুফতি এনায়েতুল্লাহ

মুফতি এনায়েতুল্লাহ

আজ আখেরি মোনাজাতের মধ্যে দিয়ে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শেষ হচ্ছে। গত ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, বুধবার দুপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ধরে টঙ্গী বাসস্ট্যান্ড থেকে আবদুল্লাহপুরের দিকে এগোচ্ছি, তখন প্রথম পর্বের ইজতেমায় আগত মুসল্লির গাড়ির বহর টঙ্গীর দিকে প্রবেশ করছে। রাস্তায়ও মানুষের ভিড়, বেশিরভাগ ইজতেমার সাথি। কেউ ময়দানে ঢুকছে্ন, কেউ ময়দান থেকে এসেছেন কাঁচাবাজার করতে। বাজারে আসা ভোলার এক তাবলিগি সাথী জানান, ২৫ বছর ধরে তিনি বিশ্ব ইজতেমায় নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন। তুলনামূলকভাবে আজ শীত কম, এবারের উপস্থিতি অন্যবারের চেয়ে ব্যাপক হবে বলে তিনি মনে করেন। সেই সঙ্গে বলেন, ইজতেমায় ব্যাপক লোকসমাগম কিংবা বেশি মানুষ হওয়া কিন্তু মুরুব্বিদের লক্ষ্য নয়, এটা ইজতেমার উদ্দেশ্যও নয়। তারা চান দীনের কাজে আরও বেশি মানুষ অংশ নিক, বেশি বেশি জামাত বের হোক ইসলামের দাওয়াত নিয়ে।


বৈশ্বিক মহামারিকাল পেরিয়ে টঙ্গীতে শুরু হওয়া তাবলিগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি থেকে শুরু করে তাবলিগ সাথিদের মধ্যে বইছে আনন্দের বন্যা। শুধু ইজতেমা নয়, প্রায় সব ক্ষেত্রেই দাওয়াত ও তাবলিগের কাজে মানুষকে সম্পৃক্ত করে জামাতে বের করার চেষ্টা করা হয়। এজন্য ইজতেমায় বিশেষভাবে দীনের দাওয়াত এবং ঈমান-আমল সংক্রান্ত কথা বলা হয়। ইসলাম প্রচারের ক্ষেত্রে নবী (সা.) ও সাহাবিদের (রা.) কষ্ট ও ত্যাগতিতিক্ষার বিভিন্ন ঘটনা শোনানো হয়। এর ফলে সাধারণ মানুষ দীনের কাজে আত্মনিয়োগে উৎসাহী হয়। এজন্য দেখা যায়, সারা বছর মিলে যে পরিমাণ জামাত বের হয়, ইজতেমা থেকে তার অনেক বেশি জামাত আল্লাহর রাস্তার ঈমানের দাওয়াত নিয়ে বের হয়। ইজতেমা তাবলিগের গুরুত্বপূর্ণ অংশ, তাই সবাইকে এখানে অংশগ্রহণ করতে বলা হয়। প্রাসঙ্গিকভাবে তখন ইজতেমার ‘সওয়াবের’ কথা চলে আসে। বলে রাখা ভালো, ইজতেমার মূল আয়োজন বয়ানে ঈমান-আমলের কথা হয়, কুরআন তিলাওয়াত শেখানো হয়, নবীদের জীবনী পাঠ করে শোনানো হয়, নফল নামাজ পড়তে উৎসাহিত করা হয়, অনেক বড় জামাতের সঙ্গে এসব আমল সম্মিলিতভাবে করা হয়, মূলত সেগুলোর সওয়াবের কারণেই ইজতেমার সওয়াবের কথা বলা হয়।

তাবলিগের প্রতিষ্ঠাতা দারুল উলুম দেওবন্দের ছাত্র, উত্তর প্রদেশের সাহারানপুর জেলার মাজাহির উলুম মাদ্রাসার শিক্ষক হজরতজি মাওলানা ইলিয়াস কান্ধলভি (রহ.) এ লক্ষ্যেই তাবলিগের কাজের সূচনা করেন। ১৯১০ সালে ভারতের হরিয়ানা ও রাজস্থানের উত্তরের মেওয়াত থেকে এ কাজের সূচনা। তাবলিগের কাজের শুরুতে মাওলানা ইলিয়াস (রহ.) কয়েকজন মুসলমানের ওপর নিরীক্ষা চালান। তিনি দেখেন তারা একেবারেই ইসলামি জ্ঞানশূন্য। তারা কলমা, নামাজ, রোজা থেকে শুরু করে দীনের কোনো কিছুই জানে না। এরপর এমন কয়েকজনকে পুরোপুরি ইসলামি শিক্ষায় দীক্ষিত করতে তিনি মেওয়াতে এ কাজ শুরু করেন। ১০ বছরে ওই এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় এ কাজের ধারা, যদিও তা মৌখিক আকারেই বিদ্যমান ছিল। ১৯২০ সালে দক্ষিণ দিল্লির পশ্চিম নিজামুদ্দিন এলাকার এক মসজিদে তাবলিগের মূল কার্যক্রম গড়ে তোলেন মাওলানা ইলিয়াস (রহ.)। এটি বর্তমানে নিজামুদ্দিন মারকাজ নামে বিশ্বব্যাপী পরিচিত।

১৯২৪ সালে দ্বিতীয়বারের মতো হজপালনে যান মাওলানা ইলিয়াস (রহ.)। মক্কায় তিনি তাবলিগের নতুন কর্মপদ্ধতির বিষয়ে পরিকল্পনা করেন। হজ শেষে দেশে ফিরে প্রথমে মেওয়াতে যান। গিয়ে দেখেন আগের কোনো প্রভাব নেই সাধারণ মুসলমানের মধ্যে। ওই সময় মেওয়াতের মক্তবগুলোয় সবার পক্ষে ইসলামি শিক্ষা নেওয়া সম্ভব ছিল না। তখন ধর্মপ্রচারের কাজে নিজেকে পুরোপুরি নিয়োগ করতে শিক্ষকতার চাকরি ছেড়ে দেন। তিনি সমাজের সাধারণ মানুষের মাঝে হাতেকলমে দীন শেখানো ও ইসলামি অনুশাসনের অনুগামী করতে নতুন কর্মপদ্ধতি চালু করেন। সেগুলো হলো ছোট ছোট দলে মসজিদের পরিবেশে অল্প সময়ের জন্য ইসলামি শিক্ষা নেওয়া। এর মধ্যে আছে গাশত, যা দলবদ্ধভাবে ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলোর প্রতি আহ্বানকে বোঝায়। অন্যটি হলো, একটি দল ঘর ছেড়ে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বের হয়ে ইসলামের প্রতি মানুষকে আহ্বান করবে। এভাবেই গড়ে ওঠে তাবলিগ জামাতের রূপরেখা। কিছুদিনের মধ্যে দিল্লিসহ ভারতের বেশ কিছু এলাকায় তাবলিগের কার্যক্রম ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৪৪ সালে মাওলানা ইলিয়াস (রহ.) মৃত্যুবরণ করেন। তখন তার ছেলে মাওলানা ইউসুফ কান্ধলভি (রহ.) তাবলিগের আমির নিযুক্ত হন।

১৯৪৬ সালে দিল্লি থেকে সৌদি আরব ও ব্রিটেনে তাবলিগের জামাত পাঠানো হয়। এর আগে পাকিস্তানসহ এশিয়ার অন্য দেশগুলোয় তাবলিগের কাজ শুরু হয়। ১৯৪৮ সালে আল্লামা শামছুল হক ফরিদপুরী (রহ.)-এর প্রচেষ্টায় মাওলানা আবদুল আজিজ (রহ.)-এর মাধ্যমে বাংলাদেশে তাবলিগ জামাতের কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর তা দ্রুত সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ সেন্টারের মতে, বর্তমানে ১৬৫টির বেশি দেশে তাবলিগ জামাতের প্রায় ১০ কোটি সাথি (অনুসারী) আছে। ১৯৪১ সালে দিল্লির নিজামুদ্দিনে বার্ষিক ইজতেমায় (সভা/সম্মেলন) তাবলিগের প্রায় ২৫ হাজার সাথি যোগ দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন দেশে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৪৬ সালে ঢাকার কাকরাইল মসজিদে প্রথমবারের মতো ইজতেমা আয়োজিত হয়। বাংলাদেশে ইজতেমা পর্বে ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ, রমনা উদ্যান ও টঙ্গীর পাগাড় হয়ে বর্তমান স্থানে নিয়মিত ইজতেমা হয়ে আসছে।

আশির দশকের শুরু থেকে টঙ্গী ইজতেমায় বেশ কয়েকটি দেশ থেকে বিপুলসংখ্যক মুসল্লি যোগ দিতে থাকেন। একই সময়ে পাকিস্তানের লাহোরের কাছে রায়বেন্ড ও ভারতের ভোপালে বড় ইজতেমার আয়োজন করা হয়। এ দুই ইজতেমার চেয়ে টঙ্গীর ইজতেমায় বেশি মুসল্লি যোগ দিলে তা পরে ‘বিশ্ব ইজতেমা’ হিসেবে পরিচিতি পায়। এবার ইজতেমায় মুসল্লীদের অংশগ্রহন আরও বেড়েছে। টঙ্গীর ইজতেমার ব্যাপকতার কারণ হলো, ভৌগোলিক ও নিরাপত্তাজনিত কারণে ভারত-পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে। সেই সঙ্গে স্বল্প ব্যয়ভার, ভিসা প্রাপ্তির সহজতা, সাধারণ মুসলমানের আন্তরিকতা, অনুকূল পরিবেশ ইত্যাদি কারণে বাংলাদেশের ইজতেমা সারা বিশ্বের তাবলিগ জামাতের অনুসারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। আর সুষ্ঠুভাবে ইজতেমার আয়োজন বাংলাদেশকে বহির্বিশ্বে দেয় অনন্য মর্যাদা।

  • শিক্ষক ও সংবাদমাধ্যমকর্মী
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা