পরিপ্রেক্ষিত
তৌহিদ-উল বারী
প্রকাশ : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১১:৫৬ এএম
জলাতঙ্ক মূলত
ভাইরাসজনিত একটি জুনোটিক রোগ। র্যাবিস নামক এক ধরনের নিউরোট্রপিক ভাইরাসের কারণে এ
রোগ হয়। সাধারণত গৃহপালিত ও বন্য প্রাণীরা এ ভাইরাসে সংক্রমিত হয়। সংক্রমিত প্রাণী
বা এদের লালার সংস্পর্শে এলে কিংবা মানুষকে কামড়ে বা আঁচড়ে দিলে জলাতঙ্ক হয়। অ্যান্টার্কটিকা
ছাড়া প্রায় সব মহাদেশেই জলাতঙ্ক রোগ দেখা গেছে। বিশেষ করে এশিয়ায় এ রোগে আক্রান্তের
সংখ্যা বেশি। সম্প্রতি দেশে জলাতঙ্কে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। জলাতঙ্কের ক্ষেত্রে
সাবধানতা আর সচেতনতার বিকল্প নেই। এ রোগ সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারণা রাখা যেমন প্রয়োজন
তার চেয়েও বেশি প্রয়োজন সচেতনতা। জলাতঙ্ক এত সহজে বিস্তার লাভ না করলেও এ নিয়ে গাফিলতির
সুযোগ নেই।
র্যাবিস ভাইরাস
ঘটিত মারাত্মক এ রোগটিতে দেশে বছরে প্রায় ২০ হাজার মানুষ মারা যায়। জলাতঙ্কের ক্ষেত্রে
মৃত্যুহার প্রায় শতভাগ। রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেলে রোগীকে বাঁচানো প্রায় অসম্ভব। চিকিৎসকদের
মতে, কুকুর, বিড়াল, শিয়াল, বানর, বেজি, বাদুড় ইত্যাদি র্যাবিস ভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার
পর মানুষকে কামড়ালে বা আঁচড় কাটলে এ রোগ হয়। আক্রান্ত প্রাণীর মুখের লালায় র্যাবিস
ভাইরাস থাকে। এ কামড় বা সামান্য আঁচড়ের মাধ্যমে রক্তের সংস্পর্শে এলে রক্তের মাধ্যমে
শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং জলাতঙ্ক রোগ হয়। আমাদের দেশে শতকরা ৯৫ ভাগ জলাতঙ্ক রোগ হয় কুকুরের
কামড়ে। বর্তমানে দেশে কুকুরের উৎপাত খুব বেশিহারে বেড়েছে। এর ফলে শিশু থেকে শুরু করে
বৃদ্ধরাও এদের আক্রমণের শিকার হচ্ছে।
তবে এ রোগটি অত
সহজে বিস্তার লাভ করে না। সাধারণত সন্দেহজনক প্রাণী কামড়ানোর ৯ থেকে ৯০ দিনের মাঝে
জলাতঙ্কের লক্ষণ দেখা দেয়। মূলত এ রোগ প্রতিরোধের উপায় হলো টিকা নেওয়া। এ ভাইরাসের
অনেক রকম টিকা আবিষ্কার হয়েছে তবে এর মধ্যে সবচেয়ে নিরাপদ হলো হিউম্যান ডিপ্লয়েড সেল
ভ্যাকসিন। মূলত আক্রান্ত হওয়ার পরে এ টিকা নেওয়াকে পোস্ট-এক্সপোজার প্রোফাইল্যাক্সিস
বলা হয়। কারও শরীরে জলাতঙ্কের লক্ষণ দেখা দিলে আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে উন্মত্ত বা
পাগলামো এবং মৌনÑ এ দুই ধরনের আচরণ দেখা দিতে পারে। অস্বাভাবিক আচরণে আক্রান্ত ব্যক্তির
কথাবার্তা ও ভাবভঙ্গি হবে অস্বাভাবিক। সে উদ্দেশ্য ছাড়াই ছুটে বেড়াবে, ক্ষুধামান্দ্য
হবে, বিকৃত আওয়াজ করবে, বিনা প্ররোচনায় অন্যকে কামড়াতে আসবে ইত্যাদি। অনেক ক্ষেত্রে
জলাতঙ্কে আক্রান্ত ব্যক্তির পক্ষাঘাত, শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়া, ক্ষতস্থানে অবশতা-অসারতা
অনুভূত হওয়া ইত্যাদি লক্ষণও প্রকাশ পেতে পারে। শরীরের শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণকারী
স্নায়ু ও মাংসপেশি দুর্বল হয়ে পড়লে আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাসকষ্ট দেখা যায়।
তাই রোগে আক্রান্ত
হওয়ার আগেই যথাযথ টিকা নিতে হবে। কোনোমতেই অবহেলা করা যাবে না। প্রয়োজনে ডাক্তারের
সঙ্গে পরামর্শ করে উপযুক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। মনে রাখতে হবে, এ রোগে মৃত্যু
প্রায় শতভাগ। পাশাপাশি আক্রমণকারী প্রাণীর দিকে লক্ষ রাখতে হবে। আক্রমণের কিছুদিনের
মাঝে প্রাণীটি মারা গেলে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।