× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য কামারুজ্জামান

এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন

প্রকাশ : ০৩ নভেম্বর ২০২২ ০৯:৫৯ এএম

আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২২ ২১:৩৫ পিএম

এএইচএম কামারুজ্জামান। ছবি : সংগৃহীত

এএইচএম কামারুজ্জামান। ছবি : সংগৃহীত

‘দেশপ্রেমিক রাজনীতিকেরা সবসময় দেশের জন্য মৃত লাশ হতে প্রস্তুত থাকে, কিন্তু কখনও হত্যার আদেশ দিয়ে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখার বন্দোবস্তে যায় না।’ এমন উক্তিকে ধারণ করেই একান্ন বছরের বাংলাদেশকে যে কেউ একবার দেখে নিতে পারে। তৃতীয় চোখ দিয়ে।

একদিকে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার নিথর দেহ পড়ে থাকা এবং তা সে লাল সবুজের বাংলাদেশের জন্যই। অন্যদিকে প্রতিবিপ্লবকারীদের হত্যা করার উৎসবে শাসকশ্রেণি হয়ে পড়ার অযাচিত প্রেক্ষাপট...কষ্ট তাই পাই। আজও ভুলিনি, ভুলতে পারব না। মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত জাতির জনক, আমার বাবা এএইচএম কামারুজ্জামান ও পিতৃতুল্য তিন চাচা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ ও মনসুর আলীর পৃথিবী থেকে বিদায় নেওয়ার এমন নৃশংস কু উদ্যোগের জবাব দিতে ইচ্ছে করে। মনকে সান্ত্বনা দেওয়ার অযুতবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হই।  

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হলো। বাঙালির ভাষা ললাটে ধূসর অস্ত্রের আমদানিতে জাতি নির্বাক হয়ে যখন সবকিছু অবলোকন করছে, ঠিক একই ধারাবাহিকতায় পঁচাত্তরের ৩ নভেম্বরের প্রথম প্রহরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে চার জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী ও এএইচএম কামারুজ্জামানকে হত্যা করা হয়। অনভিপ্রেত এবং অতি অবশ্যই মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়ে এমন পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড পৃথিবীর ইতিহাসেই বিরল। সারা পৃথিবীর রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে এমন কালো অধ্যায়ের জন্ম নেওয়া নিয়ে উন্নত দেশগুলো বা সংস্থাগুলোর কথিত মানবাধিকার চাইবার দাবি নিয়মিত সংস্কৃতির অংশও হতে পারেনি। 

৩ নভেম্বর, ১৯৭৫। উপলক্ষ তাড়িত ট্র্যাজিক দিবস হিসেবে আমরা কেউ কেউ জেলহত্যা ইস্যু নিয়ে কলম ধরছি। অভিমানের উচ্ছ্বাসে রাজনৈতিক ধারাভাষ্য দিয়ে ইতিহাস সংকলনের একটা চেষ্টা! আমি কী লিখব? সন্তান হিসেবে কী বলব? বঙ্গবন্ধু ও তাঁর তনয়ার আদর্শের সৈনিক হিসেবে রাজনৈতিকভাবে কী লিখব? ফলত, জানা নেই।     

আমার স্মৃতির পাতার জেলহত্যা এক বেদনাবিধুর ঘটনা। আমার বাবা এএইচএম কামারুজ্জামান যেদিন শহীদ হন, আমি ও আমার ছোট ভাই স্বপন তখন কলকাতায় রামকৃষ্ণ মিশন স্কুলে লেখাপাড়া করছি। বাবার মৃতদেহটি দেখার কোনো সুযোগ আমরা পাইনি।

বাবা ছিলেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের এক অতন্দ্র সৈনিক। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ তার জীবনভাবনার মূল সোপান ছিল। সারা জীবন তিনি নিমগ্ন থেকেছেন সত্য ও নীতির পথে। বঙ্গবন্ধুর নিঃস্বার্থ সহযোদ্ধা হিসেবে আপস করেননি ১৫ আগস্টের হত্যাকারী খুনীচক্রের সঙ্গে। শুধু আমার বাবা নন, অন্য তিন জাতীয় নেতাও ছিলেন একই রকমের ইস্পাতসম মনোবলের অধিকারী।

আমার মায়ের কাছে শুনেছি, সেদিনের নিকষ কালো তিমির রাত্রি করে ঢাকার রাজপথে ছুটে চলা একটা জলপাই রঙের জিপ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে দাঁড়িয়ে গেল। লাফিয়ে নামে কয়েকজন কালো পোশাক পরিহিত অস্ত্রধারী। কারারক্ষীদের গেট খোলার নির্দেশ দেয় তারা। কারারক্ষীরা জানায় শীর্ষপর্যায়ের নির্দেশ ছাড়া তারা গেট  খুলবে না। অগত্যা বঙ্গভবনে ফোন করে খুনিরা। ফোনের অপর প্রান্ত থেকে যে নির্দেশ এসেছিল তা আমাদের সকলেরই জানা। বঙ্গভবনের নির্দেশ পেয়ে গেট খুলে দেয় কারারক্ষীরা। অস্ত্রধারীদের ভেতরে প্রবেশ করার সুযোগ দিতে বাধ্য করা হয় তাদের। ভেতরে ঢুকে তাদের আবদার অনুযায়ী জাতীয় চার নেতা তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, আমার বাবা এএইচএম কামারুজ্জামানকে ১নং সেলে একসঙ্গে জড়ো করার আদেশ দেওয়া হয়। অস্ত্রের মুখে বাধ্য হয়ে তারা সে নির্দেশ পালন করে। খুনি মোসলেম বাহিনী সেই ১নং সেলে ব্রাশফায়ারে নিভিয়ে দেয় জাতির সূর্য সন্তানদের জীবনপ্রদীপ। সেকেন্ডের ব্যবধানে হারিয়ে যায় বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধুর অন্যতম চার নেতার প্রাণ স্পন্দন। 

বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের জন্য ও ইতিহাসের সঙ্গে যাদের নিবিড় সম্পর্ক, সেই গুণী মানুষগুলো হারিয়ে গেলেও হারায়নি তাদের অমর কৃতিত্ব ও অসীম অবদান। তারা গণমানুষের অকুণ্ঠ ভালোবাসা ও সমর্থন পেয়েছিলেন বলেই আজও আমরা তাদের সন্তান হিসেবে মানুষের কাছে পৌঁছুতে পেরেছি।

দেশবাসী অবগত আছেন যে আল্লাহর অশেষ রহমত, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার অশেষ স্নেহ ও নির্দেশনায় এবং প্রিয় রাজশাহীবাসীর ভালোবাসায় আমি রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়েছি। দেশের শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হতে পেরেছি। জাতির পিতা ও আমার বাবার রেখে যাওয়া কাজগুলো সমাধান করার প্রয়াসে দেশসেবায় আত্মনিয়োগ করার সুযোগ পেয়েছি। 

বাবার অনেক স্বপ্ন ছিল রাজশাহীকে নিয়ে। তিনি যখনই সুযোগ পেয়েছেন রাজশাহীর কথা জাতীয় পর্যায়ে পেশ করে এর উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছেন। রাজশাহীতে খেলাধুলার পরিবেশ তৈরির জন্য তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন । তিনি জানতেন, খেলাধুলার মাধ্যমে গড়ে উঠবে সুস্থ ও সুন্দর যুব সমাজ। তিনি বেশ কিছুদিন রাজশাহী জেলা ক্রীড়া সমিতির সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন। 

বাবা ছিলেন ধর্মভীরু। ছোটবেলায় আমরা তাকে নিয়মিত নামাজ আদায় ও পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করতে দেখেছি। তিনি এতো দ্রুত কুরআন তিলাওয়াত করতেন যে মনে হতো তিনি কোরআনের হাফেজ। বাবা যতক্ষণ বাসায় থাকতেন সর্বক্ষণ নেতাকর্মীদের দ্বারা সন্নিবেষ্টিত হয়ে থাকতেন। ফলে আমরা বাবার সান্নিধ্যে যাওয়ার তেমন সুযোগ পেতাম না। আমরা সব ভাই-বোনই তার সঙ্গ চাইতাম। কিন্তু না পাওয়ায় মাঝে মাঝে আমাদের রাগও হতো।

বাবা ছিলেন অত্যন্ত নরম স্বভাবের মানুষ। তাই বলে আমরা তাকে ভয় পেতাম না, এমন না। তার চোখের দিকে তাকানোর সাহস আমাদের ছিল না। কোনো অপরাধ করলে শুধু নাম ধরে ডাকলেই আমাদের অবস্থা খারাপ হয়ে যেত। বড় আপা পলিকে মনে হয় বাবা বেশি ভালোবাসতেন। মায়ের সংস্পর্শেই আমরা বড় হয়েছি। আমার মায়ের ছিল অসীম ধৈর্য। তিনি বাবার রাজনৈতিক সঙ্গীদের যথেষ্ট সম্মান করতেন। মায়ের ওই উদারতা ও সহায়তা না থাকলে বাবার পক্ষে অত বড় নেতা হওয়া হয়তো সম্ভব ছিল না। প্রচলিত একটি কথা আছে, প্রত্যেক সফল পুরুষের পেছনে কোনো না কোনোভাবে একজন নারীর অবদান আছে। এ কথাটা আমার মায়ের ক্ষেত্রে দারুণভাবে প্রযোজ্য বলে আমাদের মনে হয়। 

বাবা ১৯৫৬ সালে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। ১৯৬২ সালে তিনি প্রথম নির্বাচনী রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। তার প্রথম নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও তার পিতা (আমাদের দাদা) আবদুল হামিদের সঙ্গে রাজনীতি নিয়ে এক চমকপ্রদ ঘটনার কথা আমরা শুনেছি। ওই ঘটনাটা তখনকার দিনের রাজনৈতিক সংস্কৃতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। আমার দাদা আবদুল হামিদ রাজশাহী অঞ্চল থেকে দীর্ঘদিন মুসলিম লীগের প্রার্থী হিসেবে আইন সভার সদস্য নির্বাচিত হয়ে এসেছেন। ১৯৬২ সালের নির্বাচনে ছেলে কামারুজ্জামান আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাইলে তিনি (আবদুল হামিদ) নির্বাচন থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেন।

বাবা জানতেন আমার দাদা প্রতিদ্বন্দ্বী হলে তার পক্ষে নির্বাচনে জয়লাভ কোনোক্রমেই সম্ভব নয়। তাই তিনি মায়ের (আমার দাদি) কাছে আবদার করেন, ‘বাপজানকে বুঝিয়ে যেন তিনি নির্বাচন থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করেন!’ অগত্যা আবদুল হামিদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। নির্বাচনী এলাকা সফরে গিয়ে ভিন্ন চিত্র প্রত্যক্ষ করেন আমার বাবা। এলাকার মুরুব্বিদের বক্তব্য, তারা দীর্ঘদিন মুসলিম লীগের প্রতি সমর্থন করে অভ্যস্ত, তাই তারা হ্যারিকেন (মুসলিম লীগের নির্বাচনী প্রতীক) ছাড়া অন্য কোনো মার্কায় ভোট দিতে পারবেন না। আবদুল হামিদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য মুরুব্বিরা বাবাকে দায়ী করেন, মুরুব্বিরা বেঁকে বসেন বাবাকে সমর্থন দিতে। অবস্থা বেগতিক দেখে বাবা অনেক চেষ্টা-তদবির করে অন্তত একটা জায়গায় রফা করতে সমর্থ হন যে, ‘আবদুল হামিদ সাহেব যদি এলাকায় এসে তার পক্ষে ভোট চান, তাহলে তারা বাবাকে ভোট দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করবেন। এ ছাড়া নয়।’ এমন পরিস্থিতিতে বাবা তার বাপজানের কাছে কথাটা বলতে সাহস না পেয়ে মায়ের কাছে বায়না ধরেন, যেন বাপজান তার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন। কিন্তু আমার দাদা কথাটা শুনেই প্রচণ্ড রেগে যান। তিনি একটা দলের সভাপতি, তিনি কোনোভাবেই অন্য দলের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিতে পারেন না। 

বাবা হতাশ হয়ে প্রচারণা বন্ধ করে একরকম বাড়িতেই বসে রইলেন। বাপজানের সহযোগিতা ছাড়া তার পক্ষে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া সম্ভব নয়। এটা তিনি বুঝেছিলেন। সুতরাং মাঠে গিয়ে লাভ কী? তাই তিনি জানিয়ে দেন বাপজান তাঁর পক্ষে কাজ না করলে তিনি নির্বাচন করবেন না। কদিন পেরিয়ে যায়। সত্যি সত্যিই ছেলে নির্বাচনী প্রচারণা থেকে সরে থাকায় এবার পিতা আবদুল হামিদ নিজেই চিন্তায় পড়েন। ছেলের জীবনের প্রথম নির্বাচনে ভরাডুবির শঙ্কায় তিনিও বিচলিত হন। অগত্যা রাজশাহী জেলা মুসলিম লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক নাটোরের মধু চৌধুরীকে ডেকে ঘটনা খুলে বলে তার হাতে দলের সভাপতি ও সাধারণ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগের আবেদনপত্র ধরিয়ে দেন। পরে পুত্রের পক্ষে নামেন নির্বাচনী প্রচারণায়। নির্বাচনে জয়ী হন বাবা। বাবার প্রথম বিজয়। এরপর তিনি আর কোনো নির্বাচনে পরাজিত হননি। আমার দাদা আবদুল হামিদের এই রাজনৈতিক নৈতিকতাও বিরল দৃষ্টান্ত। সেই অসাধারণ ব্যক্তিত্ব আমার দাদা আবদুল হামিদের সুযোগ্য সন্তান এএইচএম কামারুজ্জামানও তার নাতিদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে আজও জাতীয় নেতার আসনে আসীন। 

আমার বাবা তার আদর্শভিত্তিক নীতিনিষ্ঠ রাজনীতির কারণে ’৬২ থেকে ’৭৫ এই ১৩ বছরের মধ্যে অনুষ্ঠিত কোনো নির্বাচনেই কখনও পরাজিত হননি। এটা সম্ভব হয়েছিল তার অসাধারণ কর্মদক্ষতা, গণমুখী সাংগঠনিক তৎপরতা আর চূড়ান্ত রাজনৈতিক সততার জন্য। তিনি রাজশাহীবাসীকে আওয়ামী লীগের পতাকাতলে শামিল করতে পেরেছিলেন। তার এই দক্ষতা ও যোগ্যতাই তাকে সমাসীন করেছিল তৎকালীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে। 

৩ নভেম্বর সকালেই বাবার মৃত্যু সংবাদ জানতে পারেন আমাদের মা। মা অত্যন্ত ভেঙে পড়েন। অনেক চড়াই উতরায় পার হয়ে যে মানুষটি কখনও আশাহত হননি সেই মানুষটি বাবার মৃত্যু সংবাদে কেমন মুষড়ে পড়েছিলেন! এ সময় রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী আর আত্মীয়-স্বজনে ভরে যায় আমাদের বাড়ি। মা চাচ্ছিলেন বাবার লাশটা রাজশাহীতে এনে পারিবারিক গোরস্তানে দাফন করতে। কিন্তু খুনিরা তাতে বাদ সাধে। মা তার সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। বাধ্য হয়ে বাবার মৃতদেহ রাজশাহীতে আনার অনুমতি দেয় ঘাতকচক্র। তবে বাবার লাশ কাউকে দেখতে দেওয়া হয়নি। এই হৃদয়বিদারক ঘটনার করুণ বেদনা ও দহন সহ্য করেই আমার মা এবং আমরা জীবনসংগ্রাম করেছি। 

কী অপরাধ ছিল বাবার, যার জন্য তাকে হত্যা করা হলো? এর জবাব কে দেবে? কারও কাছে আছে?

মাত্র ৫২ বছরের জীবনে তিনি অর্ধেকটাই কাটিয়েছেন আন্দোলন আর সংগ্রামে। স্বাধীনতা যুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে অন্যান্য জাতীয় নেতাসহ বাংলাদেশকে স্বাধীন করার কাজে জীবন উৎসর্গ করেছেন। স্ত্রী-সন্তানের দিকে তাকাবার ফুরসত পাননি, সেই মানুষটাকে হত্যা করা হলো! কেন করা হলো, তা বলার সময়ও হয়েছে। 

১৯৮১ সালের ১৯ মে বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা তার প্রিয় জন্মভূমিতে ফিরে এসে তার পিতা বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের খুনিদের বিচারের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচারের দাবিতেও সোচ্চার ছিলেন। তার শাসনামলে বিচার হয়েছে। জাতি কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। ১৯৮১ সালের ১৯ মে থেকেই জননেত্রী শেখ হাসিনা চার জাতীয় নেতার পরিবারের সদস্যদের অতি আপনজনের মতো আগলে রেখেছেন। বড় বোনের স্নেহে তিনি আমাদের আগলে রেখেছেন, সহযোগিতা করে চলেছেন। আমরা তার কাছে কৃতজ্ঞ। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে তিনি দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করছেন। তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বেই বাংলাদেশ অপ্রতিরোধ্য হয়ে বিশ্বকে জানান দিতে পারছে, আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।

প্রতি বছর ৩ নভেম্বর ফেরে। শোকার্ত অনুভবে বাবার ওই দুই মায়াবী চোখের মাঝে দৃষ্টি দিলেই প্রদীপ ভাসে। যে প্রদীপের শক্তি আমাকে বাংলাদেশের জন্য রাজনীতি করতে তাগিদ দেয়। আমার পরিবারের সেই রক্ত, যে রক্ত বেঈমানি করতে জানে না। এক ফালি চাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকি প্রায়শই। আমার বাবার চিরপ্রস্থানকে মেনে নিতে পারিনি, পারব না। উইনস্টন চার্চিলের বিখ্যাত মতবাদ আমাকে অহোরাত্র অনুসন্ধানী ও সত্যান্বেষী করে বলে, ‘যখন ভেতরে কোনো শত্রু থাকে না, তখন বাইরের শত্রুরা তোমাকে আঘাত করতে পারে না।’  

জয় বাংলা! জয় বঙ্গবন্ধু! জয় শেখ হাসিনা! বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।

লেখক : সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও মেয়র, রাজশাহী সিটি করপোরেশন

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা