সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ২৮ জানুয়ারি ২০২৪ ১২:১৩ পিএম
ডিজিটাল বাংলাদেশের গণ্ডি ভেদ করে আমাদের যাত্রা এখন স্মার্ট বাংলাদেশের
অভিমুখে। বর্তমান দুনিয়ায় সবক্ষেত্রেই গতিশীলতা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কাঙ্ক্ষিত গতি ব্যাহত
হলে লক্ষ্য অনার্জিত থেকে যেতে পারে, এই আশঙ্কা অমূলক নয়। টানা চতুর্থবারসহ পঞ্চমবারের
মতো আওয়ামী লীগপ্রধান শেখ হাসিনা সরকার গঠন করে নব প্রত্যয়ে যাত্রা শুরু করেছেন। তিনি
তার বিগত মেয়াদে চারটি লক্ষ্য নির্ধারণ করে ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার
প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। লক্ষ্যগুলো হলোÑ স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট
ও স্মার্ট সোসাইটি। এই লক্ষ্যপূরণে প্রযুক্তির বিকাশের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার
বিকল্প নেই। কিন্তু ২৭ জানুয়ারি প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ ‘বৈশ্বিক মানের অনেক নিচে দেশের
ইন্টারনেটের গতি’ শিরোনামের শীর্ষ প্রতিবেদনে যে তথ্য উপস্থাপিত হয়েছে তা স্মার্ট বাংলাদেশ
গড়ার পথে অন্তরায় বলে আমরা মনে করি। কারণ যে লক্ষ্যগুলো নির্ধারণ করা হয়েছে এর সঙ্গে
গতিশীল ইন্টারনেট তো বটেই, একই সঙ্গে প্রয়োজন সময়ের উৎকর্ষের সব অনুষঙ্গের যথাযথ নিশ্চিতকরণ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ইন্টারনেটের গতি বৈশ্বিক মান রক্ষায়
এখনও অনেক পিছিয়ে। গত এক বছরে দেশে মোবাইল ইন্টারনেটে বৈশ্বিক অবস্থান ও গতি কিছুটা
বাড়লেও ফিক্সড ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটে উন্নতি নেই। উন্নত দেশের প্রেক্ষাপট কিংবা প্রযুক্তির
ব্যবহারের দিকগুলো অনালোচিত রেখেও আমরা যদি এই অঞ্চলের দেশগুলোর দিকে তাকাই তাহলে দেখতে
পাই, ছোট দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপ থেকেও আমরা এক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে রয়েছি। আমরা জানি,
শিক্ষা কার্যক্রম থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্য পর্যন্ত অনেক কিছুই এখন ইন্টারনেটনির্ভর।
এই প্রেক্ষাপটে ইন্টারনেটের মন্থরগতি নিঃসন্দেহে অগ্রগতির ক্ষেত্রে বড় অন্তরায়। দেশে
ইন্টারনেট সেবা নিয়ে অস্বস্তি ও অভিযোগের অন্ত নেই। উপকূল, চরাঞ্চল কিংবা পাহাড়ি জনপদের
অনেক স্থানে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় ইন্টারনেট প্রাপ্তি তো দূরের কথা অনেক জেলা কিংবা উপজেলায়ও
ইন্টারনেটের গতি নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন আছে। মোবাইল অপারেটরগুলোর মধ্যে দুয়েকটি বাদে অধিকাংশেরই
ইন্টারনেট গতি নিয়ে গ্রাহক অসন্তুষ্টি রয়েছে বিস্তর। মোবাইল ফোন অপারেটরদের সংগঠন এমটবের
মহাসচিবের বরাত দিয়ে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশে মোবাইল হাতে সার্বিক বিনিয়োগের
বিপরীতে রিটার্ন যেমন কম এবং গ্রাহকদের কাছ থেকে অপারেটরদের মাথাপিছু গড় আয়ও কম। অন্যদিকে
এই আয় থেকে সরকারকে প্রদেয় নানাবিধ করের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে অন্যান্য দেশের চেয়ে
অনেক বেশি।’ আমরা তাদের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাব না কষে দেখতে চাইব দেশের মানুষ কতটা
মসৃণভাবে ইন্টারনেট সেবা পাচ্ছে। আমরা জানি, দেশের প্রায় নব্বই শতাংশ মানুষ এখন মোবাইল
ফোন ব্যবহার করে এবং তাদের বৃহদাংশই ব্যবহার করে স্মার্ট ফোন।
নানা প্রেক্ষাপটে সৃষ্ট প্রয়োজনে ইন্টারনেটের গতি বর্তমান জমানায়
কতটা জরুরি এর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ নতুন করে নিষ্প্রয়োজন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইন্টারনেট
ব্যবহারকারীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এই ব্যবহারকারীদের মধ্যে আবার বড় একটা অংশ রয়েছে,
যারা অর্থনৈতিক প্রয়োজনে ইন্টারনেট ব্যবহার করে। কর্মস্থল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যবসা-বাণিজ্য
তো বটেই, আরও নানা প্রেক্ষাপটেই গতিশীল ইন্টারনেটের চাহিদা বাড়ছে। ইন্টারনেট সেবা প্রযুক্তিগত
কারণে ফিরে ফিরে যেমন বিঘ্নিত হয়, তেমনি এর ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটির অভিযোগও নতুন নয়।
আমরা মনে করি, বিদ্যমান বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে এবং স্মার্ট বাংলাদেশ-এর লক্ষ্যে পৌঁছার
প্রয়োজনে এই অন্তরায় দূর করার বিকল্প নেই। প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর প্রতিবেদক নিয়ন্ত্রণ
সংস্থা বিটিআরসির চেয়ারম্যানের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি অবগত।
ইন্টারনেটের সেবার মান উন্নয়নের জন্য ইতোমধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।’ দেশে
আরও তিনটি প্রাইভেট সাবমেরিন কেবল যুক্ত হওয়ার কথাও জানা গেছে। চলতি বছরের শেষ কিংবা
আগামী বছরের প্রথমদিকে চালু হতে যাচ্ছে ফাইভজি। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, ফোরজি
ব্যবস্থায় যেখানে ইন্টারনেটের গতি এত মন্থর সেখানে ফাইভজির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর
প্রস্তুতি কতটা রয়েছে।
এ ক্ষেত্রে যে প্রতিবন্ধকতাগুলো জিইয়ে আছে এর নিরসনের পাশাপাশি সেবা
নিশ্চিত করার জন্য সমন্বিত কর্মপরিকল্পনার বিষয়েও আমরা তাগিদ দিই। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ
দায়িত্বশীল সব পক্ষের সমন্বিত কার্যক্রম জরুরি দায় ও দায়িত্ব না এড়িয়ে। সরকারের সঙ্গে
মোবাইল ফোন অপারেটরদের ব্যবসায়িক সম্পর্ক কোন নিরিখে নির্ধারিত হবে- তা নির্ণয় হবে
উভয়পক্ষের সমঝোতার ভিত্তিতে, তবে অগ্রভাগে
রাখতে হবে গ্রাহকের স্বার্থ। গতিশীল ইন্টারনেট সেবা শুধু ব্যক্তি পর্যায়েই নয়, সরকারের
গৃহীত কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও অপরিহার্য।