× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি

মানসিক সুস্থতার পরীক্ষায় উতড়ে গেছেন ট্রাম্প

ডানা মিলব্যাংক

প্রকাশ : ২৭ জানুয়ারি ২০২৪ ১১:১২ এএম

ডানা মিলব্যাংক

ডানা মিলব্যাংক

আইওয়াতে রাজনৈতিক দলের সমিতি নির্বাচনটি যেমন ছিল, নিউ হ্যাম্পশায়ার প্রাইমারিও অনেকটা অমনই। প্রতিদ্বন্দ্বী দুই পক্ষের কারও মধ্যেই তেমন আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়নি। একটি বিষয় আরও স্পষ্ট হয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প ভীষণ বিভ্রান্ত। অক্টোবরে নিউ হ্যাম্পশায়ারের ডেরির এক ভাষণে ট্রাম্প হাঙ্গেরির শাসক ভিক্টর ওবানকে ‘তুরস্কের নেতা’ বলে অভিহিত করেন। নিউ হ্যাম্পশায়ারের ক্ল্যারমন্টে উপস্থিত শ্রোতাদের পরামর্শের সুরে বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান নেতা ‘প্রেসিডেন্ট ওবামা’ (একাধিক ভাষণে তিনি এমন ভুল করেন এবং ভুলগুলো ইচ্ছেকৃত। তিনি নাকি ব্যঙ্গ করতেই এমনটি বলেছেন)। ১৯ জানুয়ারি নিউ হ্যাম্পশায়ারের কনকর্ডের র‍্যালিতে তো তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বী নিকি হ্যালির সঙ্গে সাবেক হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোনির নাম গুলিয়ে ফেলেন। তিনি দাবি করেন ক্যাপিটলে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি যে হামলা হয়েছিল তার নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট দায়িত্ব ছিল হ্যালির ওপর। তিনি তাকে বারবার সহযোগিতার চেষ্টা করলেও হ্যালি নাকচ করে দিয়েছিলেন। সাউথ ক্যারোলিনার সাবেক গভর্নর এবং ট্রাম্প প্রশাসনের জাতিসংঘের অ্যাম্বাসাডর হ্যালি অবশ্য ৬ জানুয়ারির হামলার সময় ওয়াশিংটন অফিসে ছিলেন না। তিনি বলেন, সবাই বলছে ট্রাম্প বিভ্রান্ত। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের মহাযজ্ঞে নানা দিক থেকে চাপ সহ্য করতে হয়। ট্রাম্পের ক্ষেত্রেও তা-ই হচ্ছে। আমাদের তো আর কাউকে প্রশ্ন করার কোনো সুযোগ নেই। যত চাপই পড়ুক না কেন, প্রার্থীকেই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। শত চাপ নিয়েও উত্তর দিতে হচ্ছে।

২০ জানুয়ারি ট্রাম্পের র‍্যালিতে আমি চউপস্থিত ছিলাম। র‍্যালিতে ভাষণ দেওয়ার সময় ট্রাম্প একবারও হ্যালি-পেলোসির বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেননি। বরং তিনি যে মানসিক সুস্থতার পরীক্ষায় উতড়ে গেছেন এ বিষয়ে তার সমর্থকদের আশ্বস্ত করেন। অতীতে মানসিক সুস্থতার পরীক্ষায় সফলভাবে তিমি মাছ শনাক্ত করার দক্ষতার বিষয়ে ট্রাম্প তার ভাষণে গর্ব করেছিলেন। যদিও ওয়াশিংটন পোস্টে অ্যাসলে পার্কার এবং ড্যান ডায়মন্ড জানান, কোনো পরীক্ষাতেই এমন কোনো তিমি মাছের উপস্থিতি নেই (হতে পারে এ নিয়েও তিনি আসলে ব্যঙ্গ করছিলেন)। তবে র‍্যালির ভাষণ আমি মনোযোগ দিয়ে শুনেছিলাম। টানা ১০০ মিনিট ভাষণ দেওয়া সহজ নয়। একটি বিষয় লক্ষ করেছি, একই ঘটনা ট্রাম্প ঘুরেফিরে উপস্থাপন করছেন। টেলিপ্রম্পটারের মাধ্যমে তাকে অনেক তথ্য সরবরাহ করা হলেও বক্তৃতার প্যাটার্ন অনেকটা একই ছিল। অনেক ক্ষেত্রে একই বক্তব্য তিনি হুবহু তুলে ধরেন একাধিকবার। যেন কী বলছেন এ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা একেবারেই নেই।

ট্রাম্পের স্মরণশক্তির বিষয়টি হিপোক্রিটিক্যাল বলা চলে। তিনি প্রতিনিয়ত ৮১ বছর বয়স্ক প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে ‘বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে অচল’ বলে অভিহিত করেন। কিন্তু ৭৭ বছর বয়স্ক ট্রাম্প নিজেই যে সেদিকে হাঁটছেন তা যেন বুঝতে পারেন না। অনেক সময় তার বক্তব্যের কোনো মানেই খুঁজে পাওয়া যায় না। বাইডেনের মানসিক অবস্থা নিয়ে গণমাধ্যম যতটা সরব, ট্রাম্পের ক্ষেত্রে অতটা না। ট্রাম্পের ক্ষেত্রে অবশ্য তারা ভুলও না। ট্রাম্প বক্তব্য দেওয়ার সময় প্রায়ই কর্তৃত্ববাদী মেজাজের পরিচয় দেন। বর্ণবাদী মন্তব্যেও কম করেন না। সম্প্রতি হ্যালির ভারতীয় নাম নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে জানান, হ্যালি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য যোগ্য বিবেচিত হবেন না। কারণ জন্মগতভাবে তার বাবা-মা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক নন। এমন মন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে

চার বা আট বছর আগে ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারে সমন্বয়ের অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি আদালতে তার ক্ষোভে ফেটে পড়া বা নির্বাচনী ভাষণে সমন্বয়ের দক্ষতা থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট, ট্রাম্প তার কৌশল সাজাচ্ছেন দক্ষভাবে। দক্ষ রাজনীতিক হিসেবেই তিনি এগোচ্ছেন। আগের তুলনায় তার প্রচারের কাজ আরও পেশাদারির পরিচায়ক হয়ে উঠছে। তার পরও তিনি এমন বক্তব্য দিচ্ছেন বা কাজ করছেন যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেই মনে হয়। ট্রাম্প এমন কিছু কাজ করছেন যা বাইডেন করলে রিপাবলিকানরা দুঃখে কেঁদে ফেলতেন। নিজের দেওয়া ভাষণে ট্রাম্প বলেন, ‘ট্রাম্প প্রশাসনের সময় ইরান আর্থিক সংকটের মুখে পড়ে। হিজবুল্লাহ কিংবা হামাসের মতো সংগঠনে পৃষ্ঠপোষকতার আর্থিক সক্ষমতা তাদের ছিল না। যে লোক এখন রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন, তিনি থাকলে আমরা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের শঙ্কা উড়িয়ে দিতে পারি না।’ তা-ও ভালো। গত বছর এক ভাষণে তো বলেই ফেলেছিলেন, ‘হান্টার বাইডেন ক্ষমতায় থাকলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে।’ সে হিসেবে ট্রাম্পের কিছুটা উন্নতি হয়েছে বটে। বক্তব্যের একদম শেষে তিনি জানান, ‘আমাদের নেতারা এখন সম্পূর্ণ ইলেকট্রিক গাড়ি দাবি করেন। ভালোমতোই জানেন ইলেকট্রিক যানবাহন তাদের বেশিদূর নিয়ে যেতে পারবে না।’

বাইডেনের সক্ষমতার প্রসঙ্গে ট্রাম্প একাধিকবার মন্তব্য করেন। একবার তো বলেই বসেন, ‘এ লোকটা গণতন্ত্রের জন্য হুমকি। এর পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। সবচেয়ে বড় কারণ, তার যোগ্যতা নেই।’ নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্প তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারই করেছেন প্রতিবার। ১৯ জানুয়ারি ট্রাম্পের র‍্যালিতে সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৫০০ মানুষ উপস্থিত ছিল। যদিও ট্রাম্পের দাবি তার র‍্যালিতে রেকর্ডসংখ্যক উপস্থিতি হয়েছে। আইওয়া ককাসে বছরের সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে। অথচ ট্রাম্প তার বিজয়ী ভাষণে বলেন, রেকর্ডসংখ্যক ভোটে তিনি জয়ী হয়েছেন।

এমনকি ভোটারদের সামনেও তিনি নানা তথ্য উপস্থাপন করেন যা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বক্তৃতা দেওয়ার সময় স্ক্রিনে বড় করে লেখা ‘মেক আমেরিকা গ্রেট ফর আস অ্যাগেইন’। তিনি বলেন, ‘আমরা একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র। গত ৫০ বছরে আমাদের অবস্থা ভঙ্গুর হয়ে চলেছে। আমরা এখন তৃতীয় বিশ্বের একটি রাষ্ট্র, মূল্যস্ফীতি বিগত ৫০ বছরে সর্বোচ্চ।’ ট্রাম্প হয়তো ভুলে গেছেন তার বক্তৃতার এক দিন আগেই স্টক মার্কেট রেকর্ড পরিমাণ বেচাকেনা করেছে। এমনকি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও পণ্য সরবরাহের সমস্যাও অনেক আগেই সমাধান করা গেছে। আইওয়ায় ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘আমার মন আগের চেয়েও শক্ত। আমার মানসিক অবস্থাও এখন অনেক ভালো। যদি সত্যিই আমার অবস্থা খারাপ হয় তাহলে আমি সবাইকে জানিয়ে দেব।’ সে না হয় হলো। কিন্তু বিদ্যমান বাস্তবতা কি আমাদের এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার সুযোগ দিচ্ছে?

  • ওয়াশিংটন পোস্ট থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ : আমিরুল আবেদিন
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা