পরিপ্রেক্ষিত
ইকবাল মাসুদ
প্রকাশ : ২৫ জানুয়ারি ২০২৪ ১০:৪৪ এএম
তরুণ প্রজন্মকে
নেশায় আসক্ত করতে হিট-নট-বার্ন বা ই-সিগারেট একটি নতুন অস্ত্র। সিগারেট কোম্পানিগুলো
তরুণদের মাঝে ই-সিগারেটের ব্যবহার উৎসাহিত করতে বিভিন্ন কৌশলে এর প্রমোশন চালাচ্ছে।
নিকোটিনের সঙ্গে বিভিন্ন ফলের গন্ধ বা ফ্লেভার মিশিয়ে তৈরি হয় ই-সিগারেটের মূল উপাদান
তরল পানীয় তামাক ( ভেপ)। এ নানা স্বাদের পানীয় তামাকের কারণে অনেকে সহজেই আকৃষ্ট হয়
ক্ষতিকর ই-সিগারেটে। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে দিন দিন ই-সিগারেট
গ্রহণের হার বাড়ছে। বর্তমানে তরুণ-তরুণীরা ধূমপান শুরুই করছে ই-সিগারেট দিয়ে। শখের
বশবর্তী হয়ে ই-সিগারেট নিতে গিয়ে পরে নিয়মিত ধূমপায়ী হয়ে উঠছে। কারণ সাধারণ সিগারেটের
বিকল্প হিসেবে ই-সিগারেট বাজারজাত হলেও এটি আসলে একটি নেশা সৃষ্টিকারী পণ্য। এ ছাড়া
ই-সিগারেটের ব্যবহার কিশোর-তরুণদের মাঝে ধূমপানের প্রবণতা দুই থেকে ছয় গুণ বাড়িয়ে দেয়।
অধিকাংশ ই-সিগারেট ব্যবহারকারী একই সঙ্গে ধূমপানও করে। এ দ্বিমুখী ব্যবহার ভয়াবহ বিপদ
ডেকে আনে। শুধু ধূমপায়ীর তুলনায় এমন দ্বৈত ব্যবহারকারীর হৃদরোগর ঝুঁকি ৫০০ শতাংশ বেশি।
জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের
পাবলিক হেলথ বিভাগের গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, ই-সিগারেটের ক্ষতিকর দিক বিবেচনায় বিশ্বের
১০৯টি দেশ ই-সিগারেট নিষিদ্ধ এবং নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এসব রাষ্ট্রের মধ্যে
আমাদের প্রতিবেশী ভারত ও নেপালও রয়েছে। এ ছাড়া সম্প্রতি ই-সিগারেটের ক্ষতি বিবেচনায়
নিয়ে অস্ট্রেলিয়া সরকার ভেপিং বা ই-সিগারেট আমদানি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে। মার্কিন
স্ট্রোক অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য বলছে, ই-সিগারেটে সুগন্ধ যুক্তকারী উপাদান ব্যবহারের কারণে
শ্বাসতন্ত্র, যকৃৎ ও কিডনির দীর্ঘমেয়াদি রোগ ও কণ্ঠনালির ঝুঁকি বাড়ে ৫৯ শতাংশ। এ ছাড়া
ই-সিগারেটের নিকোটিন গর্ভজাত শিশুর মেধা বিকাশ ও গর্ভবতী মায়েদের জন্যও মারাত্মক বিপজ্জনক।
গবেষণা প্রতিবেদনে
আরও উল্লেখ রয়েছে, ই-সিগারেটে অ্যাসিটালডিহাইড (সম্ভাব্য কার্সিনোজেন), ফরমালডিহাইড
(পরিচিত কার্সিনোজেন), অ্যাক্রোলিন (টকসিন) এবং নিকেল, ক্রোমিয়াম ও সিসার মতো ধাতুসহ
কমপক্ষে ৮০টি ক্ষতিকারক উপাদান রয়েছে। এদিকে তামাক কোম্পানিগুলো সব সময়ই বিভিন্ন কূটকৌশল
অবলম্বন করে জনস্বাস্থ্য ক্ষতির মুখে ফেলছে। বর্তমানে তারা দেশে ই-সিগারেট আমদানি ও
প্রচারণা শুরু করেছে এবং তরুণদের এ নেশায় আসক্ত হওয়ার প্রেরণা দিচ্ছে। যেহেতু বর্তমান
তরুণ প্রজন্ম ইউটিউব, ফেসবুক, ওয়েবসাইট ও অন্যান্য সমাজমাধ্যমে বেশি সক্রিয় তাই তামাক
কোম্পানিগুলো ই-সিগারেটের বিক্রয় ও প্রচারের জন্য প্রধানত এ মাধ্যমগুলো ব্যবহার করছে।
এ ছাড়া যারা ধূমপান ছাড়তে চায় তাদের প্রচলিত সিগারেটের বদলে ই-সিগারেট ব্যবহারে উৎসাহিত
করছে। বিভিন্ন গবেষণা, তথ্য- উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ই-সিগারেট ধূমপান ছাড়ার
উপায় হতে পারে না, বরং এটি নতুন নেশায় আসক্ত হওয়ার অন্যতম মাধ্যম। ই-সিগারেট স্পষ্টতই
মাদক যা খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। বর্তমানে বাজারে প্রচলিত বিভিন্ন সিগারেটের তুলনায় ই-সিগারেট
কোনো দিক দিয়েই কম ক্ষতিকর নয়। নতুন প্রজন্ম ই-সিগারেট নামক ক্ষতিকর পণ্যে আসক্ত হয়ে
পড়ার আগেই আমাদের এর প্রসার রুখতে হবে।
স্বাস্থ্যক্ষতি বিবেচনা করে ইতোমধ্যে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ই-সিগারেট যেমন নিষিদ্ধ হয়েছে; তেমনই আমাদের নতুন প্রজন্মকে রক্ষায় ই-সিগারেট নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তে আসা জরুরি। ২০৪০ সালে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে আগামী প্রজন্মকে তামাকমুক্ত দেশ উপহার দেওয়ার জন্য ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন সংশোধন ও শক্তিশালীকরণ বিষয়ে আমাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে উদ্যোগী হতে হবে।