× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

হার্টের রিং বাণিজ্যের সিন্ডিকেট ভাঙতেই হবে

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ২৩ জানুয়ারি ২০২৪ ১৩:৩২ পিএম

হার্টের রিং বাণিজ্যের সিন্ডিকেট ভাঙতেই হবে

দেশের স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা একই সঙ্গে অদক্ষ পরিচালনার চিত্র ইতোমধ্যে সংবাদমাধ্যমে কম উঠে আসেনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের তরফে আলোচনা-পর্যালোচনাক্রমে গুরুত্বপূর্ণ এই খাতে স্বচ্ছতা-জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সিদ্ধান্তও কম গৃহীত হয়নি। কিন্তু সবই যেন অরণ্যে রোদন। ২২ জানুয়ারি প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ ‘হার্টের রিং বাণিজ্যের নতুন সিন্ডিকেট’ শিরোনামে শীর্ষ প্রতিবেদনে দেশে হৃদরোগ চিকিৎসায় নৈরাজ্যের যে চিত্র উঠে এসেছে, তা বিস্ময়কর। স্বাস্থ্য খাতের ‘কালোবিড়াল’দের দৈরাত্ম্য থামানো যাচ্ছে না কেন? দুর্নীতিবাজদের হাত কি আইনের হাতের চেয়েও লম্বা, এমন প্রশ্নও উঠেছে শুধু স্বাস্থ্য খাতই নয়, অন্য আরও খাতের বিদ্যমান প্রেক্ষাপটে। টানা চতুর্থবারসহ পঞ্চমবারের মতো আওয়ামী লীগপ্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার গঠনের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ জয়ের চ্যালেঞ্জ কত গুরুত্বসহকারে নিয়েছেন এর প্রমাণ মেলে তার মন্ত্রিসভা গঠনের মধ্য দিয়েই। নবীন-প্রবীণের মন্ত্রিসভায় এমন অনেকেই স্থান পেয়েছেন যাদের নাম ঘোষিত হওয়ার পর নানা মহলে এ প্রশ্নও উত্থাপিত হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী কি অনিয়ম-দুর্নীতি রোধে তার অনমনীয় অবস্থানের বিষয়টি কার্যকারণের মধ্য দিয়ে আরও স্পষ্ট করে দিলেন? আমরা জানি, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংকট ও দেশি-বিদেশি নানা মহলের এমনকি কোনো কোনো দেশের সরকারের শ্যেন দৃষ্টির মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রশ্নমুক্তভাবে সম্পন্ন করে নতুন সরকারের অভিযাত্রা শুরু হয়। এই প্রেক্ষাপটে সরকারের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে, এটাই বাস্তবতা।

দেশে দুর্নীতি-জরাগ্রস্ত খাতগুলোর মধ্যে অন্যতম স্বাস্থ্য খাত। এবার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন যিনি, তিনি দেশবরেণ্য একজন চিকিৎসক হলেও সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। একটি রাজনৈতিক সরকারের সরকারকাঠামোর গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী পদে এমন একজনকে আসীন করার পেছনেও জনস্বার্থ রক্ষার চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলেই আমাদের ধারণা। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন দায়িত্বভার নিয়েই জানিয়েছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার অবস্থান থাকবে অনমনীয়। আমরা তার এই দৃঢ় প্রত্যয়ের জন্য সাধুবাদ জানিয়ে স্বাস্থ্য খাতের দৃশ্যমান ক্ষতগুলো উপশম করার পাশাপাশি অদৃশ্য ক্ষতগুলোও শনাক্ত করে যথাসম্ভব দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাই। প্রতিদিনের বাংলাদেশের প্রতিবেদনে হার্টের রিং বাণিজ্যের বিস্তৃত ফাঁদের তথ্য আমাদের ক্ষুব্ধ না করে পারে না। রিং নিয়ে বছরের পর বছর সিন্ডিকেটের বাণিজ্য হৃদরোগ চিকিৎসায় নৈরাজ্যের ভয়াবহ চিত্র বৈ কিছু নয়। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, হার্টের রিংয়ের বাজার রয়েছে তিন কোম্পানির দখলে। অন্য কোম্পানিগুলো দাম কমালেও তাদের বাণিজ্যচিত্র তথৈবচ। মূল্য বৈষম্যের প্রতিবাদে ২৭টি কোম্পানি রিং সরবরাহ বন্ধ রাখায় রোগীরা পড়েছেন চরম বিপাকে। পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ ভারতের চেয়ে আমাদের দেশে রিংয়ের দাম ৩ গুণ বেশি। নিকট অতীতে হার্টের রিংয়ের দাম কমানোর সরকারি ঘোষণায় হৃদরোগ চিকিৎসাপ্রার্থীদের মনে ব্যাপক আশার সঞ্চার হয়েছিল। প্রত্যাশায় ছিল, রিং নিয়ে চলমান বাণিজ্যের অবসান ঘটবে। তবে তিনটি কোম্পানির রিংয়ের দাম আগের মতো রেখে অন্যগুলোর দাম কমানোর সিদ্ধান্তে জনমনে এই প্রশ্নও জেগেছিল, প্রকৃতপক্ষে এর সুফল ভুক্তভোগীরা কতটা পাবেন। খুব বিলম্বে নয়, কিছু দিনের মধ্যেই এর বিরূপ ফলই দৃশ্যমান হলো। অভিযোগ আছে, বিশেষ গ্রুপকে সুবিধা দিতে মূল্য কমানোর নামে একটি চক্র নতুন করে রিং বাণিজ্যর সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। প্রতিদিনের বাংলাদেশের প্রতিবেদককে এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘রিংয়ের মতো স্পর্শকাতর সামগ্রী নিয়ে বাণিজ্য হওয়া উচিত নয়। এ ধরনের ঘটনা ঘটলে তা অবশ্যই বন্ধ করা হবে।’

মন্ত্রীর বক্তব্যের প্রথমাংশের প্রতি উত্তরে আমরা বলতে চাই, সুনীতি-সুবচন আমাদের সমাজের বিভিন্ন স্তরে কতটা অপাঙ্‌ক্তেয় তা বিষয় থেকে বিষয়ান্তরে ফিরে ফিরে দৃশ্যমান হচ্ছে। তার বক্তব্যের দ্বিতীয় অংশের প্রতি-উত্তরে আমাদের বক্তব্য, মন্ত্রীর এমন দৃঢ় প্রত্যয় নিঃসন্দেহে সাধুবাদযোগ্য। তবে সাধুবাদ জানানোর পাশাপাশি আমরা এ কথাও স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, দুর্নীতি নির্মূলে সদিচ্ছা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ শর্ত; কিন্তু যথেষ্ট শর্ত নয়। আমাদের অভিজ্ঞতায় আছে, সুনীতি ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় দফায় দফায় অঙ্গীকার-প্রতিশ্রুতি দায়িত্বশীল প্রায় সব মহলের তরফেই ব্যক্ত হয়েছে কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় এর সুফল মেলেনি। ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ে চলে আসা ‘তুঘলকি কাণ্ড’ এরই খণ্ডিত দৃষ্টান্ত। স্বাস্থ্য খাতের স্তরে স্তরে অনিয়ম-দুর্নীতির যে অপচ্ছায়া প্রলম্বিত, তা নাগরিকের মৌলিক অধিকারের ওপর চরম অভিঘাত। আমরা মনে করি, অনিয়ম-দুর্নীতি একই সঙ্গে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য রোধে স্বাস্থ্যখাতে সংস্কার অত্যন্ত জরুরি। সিন্ডিকেটের কারসাজির ছায়া আমাদের সমাজে এতই প্রলম্বিত যা শুধু বাজারেই নয়, জনস্বাস্থ্য-শিক্ষাসহ আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রেই সেবা নিতে গিয়ে তা মানুষ হাড়ে হাড়ে টের পান।

চিকিৎসাসেবা সহজলভ্য করার জনদাবি নতুন নয় সংবিধান অনুসারে এই মৌলিক অধিকারের পথ মসৃণ করা সরকারের অন্যতম গুরুদায়িত্ব। আমাদের স্মরণে আছে, গত বছরের ডিসেম্বরে হাইকোর্ট সংশ্লিষ্টদের প্রতি রুল জারি করেছিলেন, দেশের হৃদরোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হার্টের রিংয়ের বৈষম্যমূলক দাম কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না। হার্টের রিং ব্যবসায়ীদের দাম বৈষম্যের কারণে রিং সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা মনে করি, হার্টের রিং বাণিজ্যের সিন্ডিকেট ভাঙার পাশাপাশি দামের বৈষম্যের ব্যাপারেও সরকারকে দ্রুত নজর দেওয়া উচিত। দাম নিয়ে চিকিৎসাসেবায় যে অরাজকতা চলছে তা জীবনকে জিম্মি করে মুনাফা লোটার নামান্তর বৈ কিছু নয়। আমরা ঔষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে এর যথাযথ প্রতিবিধান দ্রুত আশা করি। বাংলাদেশের যেহেতু হার্টের রিং উৎপাদন বা তৈরির সক্ষমতা নেই সেহেতু আমদানিনির্ভর এই জরুরি চিকিৎসাপণ্যের আমদানির পথ মসৃণ করাও অত্যন্ত জরুরি। শুধু হার্টের রিংয়ের দামের বৈষম্য ঘোচানোই শেষ কথা নয়, ভুক্তভোগীরা যথাসম্ভব সুলভে যেন রিং ব্যবহার করতে পারেন, তাও নিশ্চিত করা চাই। ইতঃপূর্বে ভোগ্যপণ্যের মতো এই জরুরি চিকিৎসাপণ্যটিরও কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির অভিযোগ উঠেছিল। আমরা মনে করি, সুশাসন প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি অনিয়ম-দুর্নীতির ক্ষেত্র তৈরির উপসর্গের নিরসনের মধ্য দিয়েই যথাযথ প্রতিবিধান সম্ভব। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা