× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

প্রবাসীকল্যাণ

রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের যোগান

অজয় দাশগুপ্ত

প্রকাশ : ২২ জানুয়ারি ২০২৪ ১১:০৮ এএম

অজয় দাশগুপ্ত

অজয় দাশগুপ্ত

আমরা জানি বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি রেমিট্যান্স। অধিক বেতন, উন্নত কর্মপরিবেশ ও জীবনযাপনের আশায় মানুষ নিজ দেশ ছেড়ে অন্য দেশে পাড়ি জমায়। এসব প্রবাসীর পাঠানো রেমিট্যান্স একটা দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ করে। রেমিট্যান্স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের মাথাপিছু আয় এবং মোট জিডিপিও বৃদ্ধি পায়। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। প্রবাসী আয়ের অর্থ দেশের দারিদ্র্যমোচন, খাদ্যনিরাপত্তা, শিশুর পুষ্টি ও শিক্ষার ক্ষেত্রেও অবদান রাখছে।

একটি বিস্মৃত কাঠামোয় বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমশক্তির অভিবাসনের বিভিন্ন দিক ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। তবে সময়ের পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে অভিবাসনের একটি গঠনমূলক পরিবর্তন ঘটছে মনে হয়। বর্তমানে আমাদের মোট অভিবাসনের একটি বড় অংশ জুড়ে আছে শ্রমিকের অস্থায়ী দেশান্তর। অর্থনৈতিক উন্নয়নে রেমিট্যান্সের অবদান মোট জিডিপির ১২ শতাংশের মতো। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে। প্রবাসী এসব শ্রমিক যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠাচ্ছে, তা দেশের মোট রপ্তানি আয়ের অর্ধেক। বিগত ৪০ বছরে প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ প্রবাসী বিদেশে গমন করেছে এবং তা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিজেদের কষ্টার্জিত উপার্জনের অর্থ নিয়মিত পাঠিয়ে তারা এ দেশকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষে গড়ে তোলে। এর সত্যতা স্বীকারে অকুণ্ঠ বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।

দেশের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রাম তো বটেই বাঙালির বাঁক পরিবর্তনের অধ্যায় মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসীদের বিরাট অবদান স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। গত ১৬ জানুয়ারি দুপুরে গণভবনে প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বাধীনতা সংগ্রামে বিশ্বজনমত সৃষ্টিতে প্রবাসীরা বিরাট অবদান রাখেন। প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসীদের বিরাট অবদান রয়েছে। সেটা ছাড়াও আবার প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। প্রবাসীরা আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে, যেকোনো আন্দোলনে অবদান রেখেছেন। যখন বাংলাদেশে মার্শাল ল জারি হয় আমরা যখন কাজ করতে পারি না, তখন প্রবাসীরা প্রতিবাদ জানান। আপনারা আন্দোলন-সংগ্রাম করেন। জনমত সৃষ্টি করেন। এটা আমাদের জন্য বিরাট শক্তি।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চারবার টানা সরকারপ্রধান হওয়ার পর এ কথাগুলো বলেছেন। এর গুরুত্ব বুঝিয়ে বলার দরকার পড়ে না। তিনি যা বোঝেন বা অনুধাবন করেন তা খুলে বলেন। এটাই তার কৃতিত্ব। অন্যদিকে আমরা যারা বাংলাদেশের বাইরে বসবাসরত বাংলাদেশি, কেউ কেউ দ্বৈত নাগরিকত্বে অন্য দেশেরও নাগরিক তাদের কষ্ট বোঝেন না অনেক মাননীয়ই। দুঃখ বা বেদনাগুলো দেশভেদে ভিন্ন ভিন্ন। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ বা অস্ট্রেলিয়া, কানাডার বাঙালিদের কষ্ট ও মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমজীবী বাঙালির কষ্ট এক নয়। এখানে একটা বড় তফাত হলো পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি বা নাগরিকত্ব। যারা বিদেশে থাকতে পারবেন না বা সব সময়ের জন্য বিদেশে বসবাস করতে পারবেন না তাদের সমস্যা মৌলিক। তারা দেশে টাকা পাঠান নিজেদের পরিবার-পরিজন নিয়ে ভালোভাবে বাঁচার জন্য। এখানে সবচেয়ে বড় বাধা মধ্যস্বত্বভোগী ও দালালরা। রেমিট্যান্স পাঠানোর কাজটিতে কী কী বাধা বা কোথায় এর অন্তরায় লুকিয়ে সবাই জানেন। প্রশ্ন হচ্ছে, এর দায় কাদের বা সমাধান করবে কে?

সবচেয়ে বড় সমস্যা আমাদের সঠিকভাবে মূল্যায়ন না করা। সাধারণ প্রবাসীদের বেলায় পদপদবি, পুরস্কার কিংবা অর্জনের স্বীকৃতি দিতে কুণ্ঠিত আমাদের দেশের বড় মানুষেরা। এ কুণ্ঠার কারণ আমরা জানি। কারণ তাদের বেশিরভাগই দেখতে বড় হলেও মূলত এরা বড় কেউ না। নানা গোঁজামিলে তাদের বড় করে তোলা এবং তাদের হাতে পাওয়ার থাকায় দেশের আজ এ অবস্থা। এয়ারপোর্ট থেকে বাড়ি ফেরা পর্যন্ত সব জায়গায় যে ভোগান্তি তার হিসাব রাখে না কেউ। রাখলে সমস্যার গভীরে যাওয়ার ইচ্ছে থাকত, যা আওয়ামী লীগের টানা আমলে একবারের জন্যও দেখিনি। তাদের আমলে প্রবাসে দল করা, দলের শাখা খোলা মানুষ প্লট ইত্যাদি পেলেও সাধারণ প্রবাসীদের মেধা ও মননের কোনো স্বীকৃতি নেই। হ্যাঁ, ঢালাও বলছি না। বলছি এ কারণে, যাদের অর্জন সবকিছু ছাপিয়ে বড় হয়ে ওঠে কিছুতেই ঠেকানো যায় না, কেবল তখনই তাদের স্বীকৃতি মেলে। বাংলাদেশ বাংলা ভাষা আর তার সংস্কৃতি জীবন নিয়ে বাঁচা যেকোনো প্রবাসীই দেশের সম্পদ। প্রবাসীদের অর্জিত সম্পদ বা টাকাপয়সার পাশাপাশি মেধাবিনিময় গুরুত্ব পাওয়া উচিত ছিল। তা হয়নি। মোদ্দা কথা, আমাদের দেশের অন্য যেকোনো খাতের মতো প্রবাসীকল্যাণ খাতও প্রশ্নমুক্ত নয়। তাদের সদিচ্ছা থাকলেও উদ্যোগ দেখা যায় না। কিছু গৎবাঁধা পরিসংখ্যান বা তালিকা দিয়ে আসলে কিছুই প্রমাণ হয় না। আমরা এয়ারপোর্টে গিয়ে যেসব অনভিপ্রেত প্রশ্ন বা বিপত্তির মুখোমুখি হই এর উত্তর বা সমাধান জানা দরকার। যেমন ধরুন আপনি কেন দেশে এসেছেন? এ প্রশ্ন দিয়ে শুরুটা যেকোনো নাগরিক বা বাংলাদেশির জন্য অমর্যাদাকর। একবার ভাবুন, যে মানুষটি দেয় এবং দিতে এসেছে তাকেই নাজেহাল করছে গ্রহীতা!

ভাবি নতুন প্রজন্ম নিয়ে। তারা জ্ঞানবিজ্ঞানে আমাদের চেয়ে এগিয়ে। তারা যখন দেখে বা দেখবে একজন ভারতীয়, শ্রীলঙ্কান বা নেপালি প্রবাসী ভিআইপি মর্যাদা পান, তাদের দেশে তারা গর্ব নিয়ে অবাধে চলাফেরা করতে পারেন; তখন কি তাদের মনে প্রশ্ন জাগবে না? সাধারণ মানুষ প্রবাসীদের বরণ করতে এবং তাদের ভালোবাসা দিতে কার্পণ্য করে না। যত দোষ ওই নন্দ ঘোষ সিস্টেমে। এ ব্যাপারে আমাদের দূতাবাসগুলোর ভূমিকা থাকার কথা হলেও এর কাঙ্ক্ষিত নজির নেই। যদি থাকেও তা ছিটেফোঁটা। সব মিলিয়ে শেখ হাসিনার যে বক্তব্য, তার যে সদিচ্ছা বা মূল্যায়ন তা বাস্তবায়ন এখন সময়ের চাহিদা। মনে রাখতে হবে, দেশের বাইরে প্রায় ২ কোটি বাংলাদেশির বসবাস। তারা সচ্ছল ও আন্তরিক। তাদের কর্ম, মেধা, অর্থের সঠিক মূল্যায়ন না হলে সমস্যার সমাধান হবে না। যেকোনো একাডেমি থেকে যেকোনো দপ্তরের দায়িত্বশীলদের কাছে এ বার্তা পৌঁছাতে হবে যে, প্রবাসী বাংলাদেশিরা শক্তি। এই শক্তির সঠিক ব্যবহারেই ভবিষ্যৎ আরও নিরাপদ ও সুন্দর হয়ে উঠতে পারে

  • প্রবাসী লেখক
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা