× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

রাষ্ট্রভাবনা

ঘুচুক এবার বাতির নিচের অন্ধকার!

ইমদাদুল হক

প্রকাশ : ১৯ জানুয়ারি ২০২৪ ১৫:০২ পিএম

ঘুচুক এবার বাতির নিচের অন্ধকার!

শুরুটা হয়েছিল দিনবদলের স্বপ্ন নিয়ে। এরপর ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প। এবার শুরু হলো স্মার্ট বাংলাদেশ। পরিকল্পনা উপস্থাপন ও কর্মকৌশল প্রণয়নে এই রূপকল্প বাংলাদেশের রাজনীতিতে নিঃসন্দেহে মাইলফলক। ক্ষমতাসীন হওয়ার ক্ষেত্রে এটি বেশ চমকপ্রদ এবং সফল কৌশলও বটে। এর সুফলও আজ উপভোগ করছে দেশ। যার ফলে দেশে সরকারি সেবার ডিজিটাল রূপান্তরে সরকারি-বেসরকারি খাত দৌড়াচ্ছে সমানতালে। বাণিজ্যিক সংগঠনগুলো তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছে। কোথাও কোনো আত্মশ্লাঘা নেই। তারপরও সমাজে বাড়ছে ডিজিটাল বৈষম্য। কেউ থাকেছে পেছনে; কেউবা এগিয়ে যাচ্ছে শীর্ষে। প্রচারের সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ছে প্রোপাগান্ডা। আত্মজিজ্ঞাসা কিংবা জবাবদিহির অনুপস্থিতি দিন দিনই বাড়ছে। যার ফলে যতটা দৌড় ততটা এগোচ্ছে না। অনেক আয়োজনই টেকসই হচ্ছে না। নতুন আয়োজনে হারিয়ে যাচ্ছে পুরোনো আয়োজন। অনেকটাই বাত্তির নিচে অন্ধকার! শব্দগুচ্ছটি একটু খটকা লাগতেই পারে। তাহলে আরেকটু খোলাসা করছি।

আমাদের শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। কিন্তু তারপরও তাদেরকে মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে আমাদেরকে আলাদা করে ‘কারিগরি ও প্রযুক্তি শিক্ষা বা শিখন কার্যক্রমকে প্রতিষ্ঠিত করতে বিপুল অঙ্কের খরচ করতে হচ্ছে। অথচ স্কুলের পাঠ্যক্রমেই যা সম্ভব তা আলাদা করছি স্কুল উত্তীর্ণের পর! এভাবেই বাঁশের চেয়ে কঞ্চিকে বড় করছি।

আবার প্রযুক্তি ব্যবহারে যখন নাগরিকদের উদ্বুদ্ধ করছি; তখন ভোক্তার নিরাপত্তা ও ঝুঁকিমুক্ত রাখার বিষয়ে ততটাই যেন উন্নাসিক আচরণ করছি। তৃণমূলে প্রযুক্তির স্মার্ট ব্যবহার নিশ্চিত করার বিষয়ে পণ্য বেচা-কেনার মতো উদ্যোমী হচ্ছি না। যেনÑ এক ক্লিকে সবকিছু বেচে দিয়ে বেঁচে যাচ্ছি। লোভ, মোহ, সুরক্ষা, প্রতারণা, প্রবঞ্চনার মতো বিষয়ে বহুপক্ষীয় উদ্যোগ শূন্যের কোঠায়। এ যেন লাইসেন্স ছাড়াই হাতে বন্দুক তুলে দেওয়ার মতো। নাগরিক সেবাগ্রহণকারী ও দাতা কেউই সমান্তরালে হাঁটছে না আজ। হাতে হাতে ফোন আর সুলভ ইন্টারনেটের অনুৎপাদনশীল ব্যবহার ছাপিয়ে যাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। দেশে ফেসবুক হয়ে উঠছে ইন্টারনেটের বিকল্প নাম। বিদেশি প্ল্যাটফর্মে নিজেদের হেঁশেল দেখিয়ে আলগা করা হচ্ছে ঘরের বন্ধন। জাতীয় সংহতির কোনো নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা সেখানে দুঃস্বপ্ন। ময়দানে দাঁড়াতে না পেরে এই সোশ্যাল মিডিয়াই হয়ে উঠছে আশ্রয়কেন্দ্র। ফলে সেখানেও ছড়িয়ে পড়ছে সহিংসতা।

খাবার আগে কিংবা শৌচকার্য শেষে সাবান কিংবা মাটি দিয়ে হাত ধোঁয়া শেখানোর মতো সাইবার দুনিয়ায় সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা, ডেঙ্গু রোধে মশারি টানানো, করোনা ঠেকাতে নিরাপদ দূরত্ব রচনায় একেবারেই পেছনের বেঞ্চিতে আমরা। এখানেই মিডিয়ার ভূমিকা পালন করার কথা থাকলেও তারা এখন সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে ব্যস্ত। ক্লিক বিড বিপথগামী করছে। রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হওয়ার বদলে আমাদের অনেকেই স্তম্ভ হওয়ার বদলে নিজেরাই পরজীবী হতে চলেছে। এটা অপ্রত্যাশিত ও দুঃখজনক বাস্তবতা। এর মূল কারণ, মূল কারিগরদের দক্ষতা উন্নয়নে ‘বুনিয়াদি’ উদ্যোগগুলো পর্যাপ্ত স্মার্ট নয়। এখানেও বিভাজন আমাদের বিভক্ত করছে। দেশে তথ্য-উপাত্তকে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের জ্বালানি আখ্যা দিলেও নির্ভরযোগ্য ও নিয়মিত হালনাগাদ বাস্তবসম্মত কোনো ডেটা ব্যাংক গড়ে উঠছে না। ফ্রিল্যান্সিং আর উদ্যোক্তা বিপ্লব আশা জাগালেও সেখান থেকে ঈপ্সিত সুফল মিলছে না। ডলার সংকট আর এই খাত থেকে অর্জিত রেমিট্যান্স পত্রিকায় ছাপা খবরের সঙ্গে মেলানো দুরূহ হয়ে পড়ছে। দেশজুড়ে হাইটেক পার্ক হচ্ছে। অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি হচ্ছে। সেখানে ইনিকিউশনে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো বছরের পর বছর কাটিয়ে দিচ্ছে। সফটওয়্যার রপ্তানি, আয়, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি ইত্যাদি বিষয়ে হালনাগাদ বিশ্বাসযোগ্য তথ্যসূত্র, ধারাবাহিকতার সূচক সবার জন্য উন্মুক্ত নয় এখনও। সরকারি কাজের টেন্ডার হয়। কাজগুলো যখন নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ঘুরপাক খায়, তখন প্রযুক্তি ব্যবহারের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে জনমনে। কখনও-সখনও সেই খবরগুলো পত্রিকায় প্রকাশ হলেও এর ফলোআপ খুব একটা জানা যায় না। আর এসব ঘটছে অন্তর্ভুক্তিমূলক উদ্যোগ কার্যকর না হওয়ায়। এভাবেই বাস্তবায়নকারীদের জবাবদিহির বাইরে থাকায় সরকারের মহতী উদ্যোগগুলো এখন প্রশ্নের মুখে পড়ছে।

এমন পরিস্থিতিতে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে স্মার্ট কর্মসংস্থান, বিনিয়োগ এবং রপ্তানি বাড়ানোর অগ্রাধিকার দেবে নতুন সরকার। নতুন করে দায়িত্ব গ্রহণের পর এমনটাই ধারণা দিয়েছেন, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। এক্ষেত্রে ‘স্মার্ট রাজনীতি’ মেরামতে নিশ্চয় নজর দেবে সরকার। কেননা স্মার্ট রাজনীতি ছাড়া স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়ন ফলপ্রসূ ও টেকসই হওয়টা দুষ্কর। কেননা ডিজিটাল আর সাইবার জগৎ কিন্তু আরও সংবেদনশীল। তাই নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে এবার সবচেয়ে বেশি নজর দিতে হবে যেন প্রক্রিয়াটা ‘নতুন বোতলে পুরোনো মদ’ না হয়।

তবে আমি আশাবাদী। কেননা, ২০৪১ সাল নাগাদ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তুলতে স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার ও স্মার্ট সমাজ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করেছেন টানা চতুর্থবারে সরকার প্রধানের দায়িত্বগ্রহণকারী বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে স্মার্ট বাংলাদেশের যে চারটি স্তম্ভ ঘোষণা করা হয়েছে সেই প্রত্যয়ের সুফল কিন্তু নির্ভর করছে প্রান্ত থেকে কেন্দ্রের প্রত্যেকটি সদস্যের অন্তর্ভুক্তির ওপর। সেটা হবে দল-মত নির্বিশেষে। এটা করতে হলে ‘স্মার্ট রাজনীতি’র বিকল্প নেই। কেননা, রাজনীতি যদি স্মার্ট না হয়, তাহলে সরকার পরিচালিত রাষ্ট্র কার্যত স্মার্ট হবে না। কাউকে পেছনে রেখে বা বাদ দিয়ে স্মার্ট নাগরিক ও সমাজ হবে না। সরকারি কার্যক্রম, লেনদেন কাগজবিহীন হলেও স্মার্ট সরকার সুফল পাবে না। বলতেই হবে, আজকের পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী নদীতে টানেল, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রÑ এগুলোর কোনোটাই বর্তমান সরকারের প্রতিপক্ষ স্বপ্নেও দেখেছে কি না, সন্দেহ আছে। এই সরকারের অধীনেই মোবাইল সিমের বায়োমেট্রিক নিবন্ধন, মোবাইল ফোনের জাতীয় আইএমইআই, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, ছবিসহ ভোটার তালিকা ইত্যাদি সংস্কার হয়েছে। তাই এবার সবাইকে নিয়ে গণশক্তির বৈচিত্র্যময়তাকে ধারণ করেই সবার জন্য এমন একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে, যাতে পাঁচ বছর পরপর নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আর আন্দোলন করতে না হয়, মানুষকে পুড়তে না হয়, মরতে না হয় এবং রাজনীতি সমস্যামুক্ত থাকে। ভার্চুয়াল মিডিয়াকে আঁকড়ে ধরা প্রতিপক্ষ যেন রাজনীতির মাঠেও স্মার্ট থাকে। স্মার্ট জগতের পরিসরটা যেন ত্রাস, ভয় ও শঙ্কামুক্ত থাকে। গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় সংগ্রাম ও রুখে দাঁড়ানোর পথ উন্মুক্ত রাখতে হবে সোশ্যাল মিডিয়ার মতোই। এক্ষেত্রে নদীর মতোই প্রবহমান থাকতে দিতে হবে প্রযুক্তিকে। স্মার্ট প্রযুক্তির ভাষাতেই গালাগালি নয়, গলাগলি ধরে চলবে আমাদের স্মার্ট রাজনীতি। তারুণ্যের রুধিরে ঘৃণা নয়; ভালোবাসার শক্তি সঞ্চার করতে হবে নৈতিকতার নিরিখে। 


  • নির্বাহী সম্পাদক, ডিজিবাংলাটেক.নিউজ; নির্বাহী সদস্য, বিআইজেএফ
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা