× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

অপশক্তির হাত আইনের চেয়ে লম্বা নয়

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ১৮ জানুয়ারি ২০২৪ ১৪:৪০ পিএম

অপশক্তির হাত আইনের চেয়ে লম্বা নয়

১৪ জানুয়ারি প্রতিদিনের বাংলাদেশে প্রকাশিত, ‘বন অফিসের নাকের ডগায় নিত্য চলে পাহাড় কাটা’ শিরোনামে প্রতিবেদনের প্রেক্ষাপটে লেখা সম্পাদকীয় মন্তব্যে আমরা স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলাম হাইকোর্টের একটি আদেশ। গত বছর হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ এক আদেশে বলেছিলেন, ‘এক কোদাল মাটি কেটে নিলেও আইনে সর্বোচ্চ যে শাস্তি আছে, তা নিশ্চিত করতে হবে। পাহাড় কাটলে মনে করবেন, আপনার শরীরে আঘাত লাগছেÑ এই অনুভূতি নিয়ে কাজ করবেন। কোনো ধরনের অবহেলা দেখলে পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে।’ পরিবেশ রক্ষায় কোনো আপস নয় বলেও উল্লেখ করেছিলেন হাইকোর্ট। সঙ্গে সম্পাদকীয় স্তম্ভে আমরা প্রশ্ন রেখেছিলাম, পাহাড়ের গায়ে কশাঘাত কি চলতেই থাকবে? আমাদের উত্থাপিত সে প্রশ্নের জবাব মেলার আগেই একই স্থানে ঘটানো হয়েছে আরও বড় অপরাধ। ১৭ জানুয়ারি প্রতিদিনের বাংলাদেশে প্রকাশিত প্রতিবেদন বলছে, ১৫ জানুয়ারি কক্সবাজার শহরের চারটি এলাকায় পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিনব্যাপী অভিযান চালিয়ে পাহাড় কাটার শাবল, কোদাল, মাটি পরিবহনের ট্রলি ও সিসি ক্যামেরার সরঞ্জাম জব্দ করেন। পাহাড় কর্তনকারীরা পালিয়ে যাওয়ায় তাদের আটক করা না গেলেও প্রশাসন পাহাড় কাটার স্থানটি সিলগালা করার পাশাপাশি পরিবেশ অধিদপ্তরকে নিয়মিত মামলার নির্দেশ দেয়। ওইদিন উপজেলা প্রশাসন শহরের কলাতলী বাইপাস সড়কের বিকাশ বিল্ডিং এলাকায় অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে একটি এক্সকাভেটরও জব্দ করে।

১৭ জানুয়ারি প্রকাশিত প্রতিদিনের বাংলাদেশের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কক্সবাজার সদর উপজেলা প্রশাসনের অভিযানের পর আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে পাহাড় ধ্বংসকারীরা। প্রশাসনের আদেশ অমান্য করে বিকাশ বিল্ডিং এলাকায় অভিযানের ৯ ঘণ্টার মধ্যেই জব্দ করে জিম্মায় দেওয়া এক্সকাভেটর ছিনিয়ে নিয়েছে একদল অস্ত্রধারী এবং ১৬ জানুয়ারি সকালেই এই সংঘবদ্ধ চক্রটি সৈকতপাড়া এলাকায় সিলগালা ভেঙে এবং শহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাদশাঘোনা এলাকায় ফের নির্মাণকাজ শুরু করেছে। এ ঘটনা রীতিমতো বিস্ময়ের, উদ্বেগ এবং উৎকণ্ঠার। আইনের শাসনের প্রতি রীতিমতো বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন। আমরা প্রশ্ন রাখতে চাই, একটি সংঘবদ্ধ চক্র কতটা বেপরোয়া এবং নিজেদের ক্ষমতার প্রতি আস্থা থাকলে একই অপরাধ পুনরায় করে? তারা কীভাবে আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে? কীভাবে আদালতের নির্দেশে জব্দ করা এক্সকাভেটর ছিনিয়ে নেওয়ার সাহস পায়? ২৪ ঘণ্টা পেরোনোর আগেই কী করে সিলগালা ভেঙে আবার পাহাড় কাটে? ওদের এই ঔদ্ধত্যের উৎস কোথায়?

একই দিন প্রতিদিনের বাংলাদেশের অন্য একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার একটি ইউনিয়নেই গড়ে উঠেছে ৫৩টি ইটভাটা। যার মধ্যে মাত্র দুটির রয়েছে পরিবেশ ছাড়পত্র। প্রতিদিন নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে ভাটাগুলোতে ৫০-৬০ মণ কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়ে জরিমানা করলেও স্থায়ীভাবে বন্ধে পদক্ষেপ নিতে পারেনি। অথচ ইটভাটা প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ অনুসারে লাইসেন্স ছাড়া কোনো ইটভাটা স্থাপন ও পরিচালনা করা অবৈধ।

যে কোনো পরিবেশ দূষণ করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। তারপরও এই অপরাধটি আমরা জেনে-না জেনে করে চলেছি। এ থেকে উত্তরণের জন্য আইনের যথাযথ প্রয়োগের পাশাপাশি ব্যক্তিপর্যায়েও সচেতনতা জরুরি। পাহাড় কাটা অপরাধ। ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো অপরাধ। অথচ সেই অপরাধগুলোই আমরা জেনেশুনে করছি। শুধু যে করছি তাই নয়, আদালত যেখানে আইন প্রয়োগ করে ব্যবস্থা নিয়েছেন সেখানে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে, অস্ত্র দেখিয়ে আটক এক্সকাভেটর ছিনিয়ে নেওয়ার মতো অপরাধ করছি। এসব অপরাধ কোনোভাবেই লঘু করে দেখার সুযোগ নেই।  এ ধরণের অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে। কেউই যেন পাহাড় কেটে প্রকৃতিকে ক্ষতবিক্ষত করতে না পারে সেক্ষেত্রে সরকারের আরও কঠোর অবস্থান প্রয়োজন। পরিবেশ-প্রতিবেশকে হুমকির মুখে ঠেলে দেওয়ার যে উন্মত্ততা প্রতিনিয়ত পরিলক্ষিত হচ্ছে আমরা তা নিয়ে হা-হুতাশ করে পরিবেশের ধ্বংসলীলা প্রত্যক্ষ করতে চাই না। আমরা চাই আইনের যথাযথ প্রয়োগ। অপশক্তির হাত কোনোভাবেই আইনের চেয়ে লম্বা নয়। এই সত্যটির যথাযথ প্রতিফলনও আমরা দেখতে চাই।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা