× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

পরিপ্রেক্ষিত

প্রাণঘাতী বায়ুদূষণ রোধ করতে হবে

মুসাহিদ উদ্দিন আহমদ

প্রকাশ : ১৮ জানুয়ারি ২০২৪ ১৪:৩১ পিএম

প্রাণঘাতী বায়ুদূষণ রোধ করতে হবে

বাংলাদেশের অন্যান্য শহরের চেয়ে রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণের মাত্রা সব সময় অনেক বেশি, যা শীতে সহনীয় পর্যায়ের চেয়ে ৬ গুণ পর্যন্ত বাড়ে। বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা (পিএম ২৫) দূষণের প্রধান উৎস। প্রয়োজনেই গড়ে উঠছে নানা অবকাঠামো। অবকাঠামো নির্মাণে ইট, বালি, সিমেন্ট ইত্যাদি ব্যবহার করা হয় যা শহরে ধুলোর বড় উৎস। বায়ুদূষণের শতকরা হারে রয়েছে ইটভাটা যা মোট দূষিত পদার্থের ২৯ শতাংশ। মোটরগাড়ির কালো ধোঁয়া ১৫ শতাংশ বায়ুদূষণের কারণ হিসেবে চিহ্নিত। এ ছাড়া গৃহস্থালির কাজ ও অন্যান্য উৎস থেকে বায়ুদূষণের হার ৯ শতাংশ করে। বর্জ্য পোড়ানো থেকেও ৮ শতাংশ বায়ুদূষণ হতে পারে। এসব ধুলাবালির দূষিত অংশ বাতাসের নিম্নস্তরে ২০০-৩০০ ফুট ওপরে অবস্থান করে। রাজধানী ঢাকার বাতাসে মিশ্রিত আছে নানা ধরনের সূক্ষ্ম রাসায়নিক বস্তুকণাসহ কার্বন ডাইঅক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, সিসা, নাইট্রোজেন, হাইড্রোকার্বন, বেনজিন, সালফার, অ্যামোনিয়া, ফটোকেমিক্যাল অক্সিডেন্টস। এসব ক্ষতিকর উপাদানের ব্যাপকহারে নিঃসরণ শহরে বসবাসকারী বিশাল জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ।

অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও দ্রুত শিল্পায়নের এ অশুভ প্রতিযোগিতায় পড়ে প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, লাগামহীনভাবে বেড়ে চলছে দূষণ। বায়ুদূষণ রোধে ২০২০ সালে হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশনার মধ্যে ছিল ঢাকা শহরের মধ্যে বালি বা মাটি বহনকারী ট্রাককে ঢেকে পরিবহন করা, নির্মাণ সাইট ঢেকে রাখা, ঢাকার সড়কে পানি ছিটানো, মেগা প্রজেক্টের নির্মাণকাজে পরিবেশ আইন মেনে চলা, কালো ধোঁয়া নির্গমনকারী গাড়ি জব্দ করা ও পুরোনো গাড়ি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ, অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করে প্রতিবেদন দাখিল, অনুমতি ছাড়া টায়ার পোড়ানো এবং ব্যাটারি রিসাইক্লিং বন্ধ করা, মার্কেট ও দোকানের বর্জ্য প্যাকেট করে সিটি করপোরেশনে হস্তান্তর। এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে নির্মাণাধীন নতুন ভবন ও রাস্তাঘাট থেকে উৎপন্ন ধুলাবালি নিয়ন্ত্রণসহ শিল্পকারখানাকে শহর থেকে দূরে স্থাপন, কালো ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণসহ শিল্পবর্জ্যের নিরাপদ অপসারণ নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক। ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ যানবাহনে সিসামুক্ত জ্বালানি ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরি। ইটভাটা স্থাপন ও ভাটায় চিমনি ব্যবহারের মাধ্যমে কালো ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণে যথাযথ নিয়ম মেনে চলার নিশ্চয়তাবিধান আবশ্যক। রোগতত্ত্ব ও রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর, আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআরবি) এক গবেষণার ফলাফলে জানায়, বাংলাদেশে সাড়ে ৩ কোটির অধিক শিশু শরীরে ক্ষতিকারক সিসা বয়ে বেড়াচ্ছে।

বায়ুদূষণের নানা কারণে মানুষ অসুস্থ হয়, কর্মক্ষমতা হারায়, কমে দেশের উৎপাদনশীলতা। ফলে ২৫ থেকে ২৮ কোটি কর্মদিবস নষ্ট হয় এবং অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে জিডিপির ৫ থেকে ৭ শতাংশ। সামগ্রিক অর্থনীতিতে পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব। দীর্ঘ বছর ধরে ঢাকা শহরে সুউচ্চ ভবন নির্মাণসহ অনিয়ন্ত্রিত যানবাহন ও নন-কমপ্লায়েন্স শিল্পকারখানা স্থাপনে বাতাসে যুক্ত হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক পদার্থ। বিক্ষিপ্ত নগরায়ণের কারণে ৭৫ শতাংশ চাষযোগ্য জমি হারিয়ে যাচ্ছে। নির্বিচারে ‘সলিড ফুয়েল’ অর্থাৎ গাছ পোড়ানোর ফলে বাতাসে বাড়িয়ে তুলছে মাত্রাতিরিক্ত কার্বন ডাইঅক্সাইডের মাত্রা, যা পক্ষান্তরে বাতাসকেই দূষিত করছে। কলকারখানার অপরিশোধিত বর্জ্য, মেয়াদোত্তীর্ণ মোটরযানের অনিয়ন্ত্রিত কালো ধোঁয়া বাতাসে সবচেয়ে বেশি কার্বন মনোক্সাইডের বিস্তার ঘটায়। ঢাকার বাতাসে সিসাজনিত দূষণ জাতিসংঘের গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বহুগুণ। বাতাসে ব্যাপক সিসাদূষণের ফলে শিশুদের বুদ্ধিমত্তার বিকাশ বাধাগ্রস্ত ও স্নায়ুর ক্ষতি হতে পারে। নারীর গর্ভপাত, মৃতশিশু প্রসবের ঝুঁকিও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।


  • অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও প্রকৌশলী
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা