× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

রাষ্ট্র পরিচালনা

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সুশাসনের বিকল্প নেই

ড. মোসলেহউদ্দিন আহমেদ

প্রকাশ : ১৫ জানুয়ারি ২০২৪ ১০:৫৬ এএম

ড. মোসলেহউদ্দিন আহমেদ

ড. মোসলেহউদ্দিন আহমেদ

দেশি-বিদেশি নানা মহল এবং বিশ্বের কোনো কোনো দেশের সরকারের নানানরকম সমালোচনা এবং আশঙ্কার মধ্য দিয়ে ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন হলো। দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকরা বলেছেন, ভোটারের উপস্থিতি কম থাকলেও পরিবেশ ছিল ভালো এবং নির্বাচন স্বচ্ছ হয়েছে। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ছিল দেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ইতিহাসের বিতর্কিত এক অধ্যায়। বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকটে বিভিন্ন মহল থেকে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে কি না, এ নিয়েই আশঙ্কা ছিল। বিদ্যমান বাস্তবতার নিরিখেই শুধু নয়, অতীতের কয়েকটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের প্রেক্ষাপটেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করাই ছিল ইসি ও তাদের সহায়ক শক্তি নির্বাচনকালীন সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। শেখ হাসিনা রেকর্ড গড়ে ইতোমধ্যে নবযাত্রা করেছেন। মন্ত্রিপরিষদ গঠনেও লক্ষ করা গেছে চমক। গত মন্ত্রিসভার অনেক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী এবার মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাননি। আবার নতুন অনেকেই এসেছেন যারা অনেকের কল্পনায়ও ছিলেন না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নবীব-প্রবীণের সমন্বয়ে মন্ত্রিপরিষদ গঠন করে আরেকটি চ্যালেঞ্জ নিলেন।


এবারের নির্বাচনে ভোটের হার তুলনামূলক কম হলেও তেমন কোনো অনিয়মের অভিযোগ ওঠেনি। বিচ্ছিন্ন যে কটি অভিযোগ উঠেছিল এর পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছে। আমরা দেখেছি, নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের কারণে একজন প্রার্থীর প্রার্থিতাও বাতিল করে কমিশন। ওই প্রার্থীর ভোটও গণনা করা হয়নি। অর্থাৎ নির্বাচন পরিচালনায় ইসি বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলো সফলভাবেই মোকাবিলা করতে পেরেছে। তবে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি আরও বেশি হলে নির্বাচনের ঔজ্জ্বল্য বাড়ত। আমরা জানি, বিএনপি ও সমমনা দলগুলো এবার নির্বাচনে অংশ নেয়নি। বিএনপি নিঃসন্দেহে একটি বড় দল। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সক্ষমতার পরিপ্রেক্ষিতে দুটোই বড় দল। আওয়ামী লীগের সঙ্গে লড়াই করার মতো সক্ষমতা বিএনপির রয়েছে বিধায় রাজনীতির মাঠে বিরোধী দল হিসেবে তাদের প্রতি প্রত্যাশাও থাকে বেশি। বিএনপি যেহেতু নির্বাচনে আসেনি তাই তাদের সমর্থকরা ভোট দিতে আসেনি এবং এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে ভোটার উপস্থিতিতেও-এই বক্তব্য সর্বাংশে অমূলক নয়। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে ভোটার বাড়ত, সন্দেহ নেই। ভবিষ্যতে যেন সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব হয় তেমন পরিবেশ গড়ে তোলার বিষয়টি নিয়েও ভাবতে হবে। তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার উপযুক্ত পরিবেশ ছিল, দেশ-বিদেশের নানা মহলের তরফে উঠে আসা এই অভিমত ভবিষ্যতের জন্য নতুন পথ নির্মাণের সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজে লাগানো প্রয়োজন।

অতীতের কয়েকটি নির্বাচনে কারচুপির কিছু অভিযোগ ছিল-এই অভিযোগও তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়ার নয়। অনেকেই নিজের ভোটটি নিজে দিতে পারেননি, এমন অভিযোগ বিভিন্ন মহল থেকে বারবার উত্থাপিত হয়েছে। এবার এমন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অতীতে কারচুপির কারণে নির্বাচন যেমন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল তেমন ভোট দেওয়ার ব্যাপারে ভোটারের আগ্রহও ছিল কম। এবার সে অনাস্থা অনেকাংশে দূর হয়েছে বলে ধারণা করা যায়। বিশেষত কেন্দ্রে তরুণ ভোটারের উপস্থিতি আশা জাগিয়েছে। তরুণ প্রজন্মও রাজনৈতিক মতপ্রকাশে আগ্রহী হয়ে উঠছে, তা দেশের ভবিষ্যতের জন্য মঙ্গলজনক। তরুণ প্রজন্ম যাতে সৃজনশীল ও মেধাভিত্তিক রাজনীতিতে আগ্রহী হয় এবং রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করতে পারে সে ব্যবস্থা সুগম করার বিষয়ে ভাবতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোর নীতিনির্ধারকদের। তরুণদের আগ্রহ দেশপ্রেমের তাড়নায় রূপান্তর করার এ সুযোগ রাজনীতিকদের রয়েছে।

বিদেশি যেসব মহল ও কূটনীতিক দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকটে নগ্নভাবে হস্তক্ষেপ করে; এ বিষয়টি নিয়ে বিদেশিদের মধ্যেই বিতর্ক সৃষ্টি হয়। রাশিয়া, চীন, ভারতসহ কয়েকটি দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোর বাংলাদেশের নির্বাচন ও রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের বিষয়ে সরাসরি বিরোধিতা করে। দেশবিদেশের নানা মহলের নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে অভিমতে আপাতত তারা নীবর, তাও লক্ষণীয়। আগেও বলেছি, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক গড়ার ক্ষেত্রে কোনো একটি দেশের কিছু সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা থাকে। এ এজেন্ডাগুলোর ভিত্তিতেই তারা নানা মন্তব্য করে। আবার অনেক সময় দেশের রাজনৈতিক সংকটে সৃষ্ট শূন্যস্থানের সুযোগও তারা নিয়ে থাকে। নীতিনির্ধারক পর্যায়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলেই তারা ফিরে যায় পূর্বাবস্থায়। এবারও তেমনটিই ঘটেছে। আমাদের রাজনৈতিক সংকট শেষ হয়নি। বিএনপির মতো শক্তিশালী বিরোধী দলের অনুপস্থিতির বিষয়টি নানা মহলে উদ্বেগ তৈরি করেছে। সংসদে তাহলে বিরোধী দল হবে কারাÑ এ প্রশ্ন এখনও রয়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে আমরা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক প্রজ্ঞার সহায়তা নিতেই পারি।

১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তৎকালীন রাজনীতিক আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা একটি ফোরাম গঠন করে বঙ্গবন্ধুর শরণাপন্ন হন। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘৩০টি আসনে অর্থাৎ মোট আসনের ১০ পার্সেন্টে জয়ী না হলে ফোরাম বিরোধী দল হিসেবে স্বীকৃতি পাবে না।’ স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মোট সাতটি আসনে জয়ী হওয়ার পরও বঙ্গবন্ধু তাদের সম্মান দেখিয়েছিলেন। একটি গ্রুপ তৈরি করে দিয়ে বলেছিলেন, সংসদে এই গ্রুপ বিরোধী দল হিসেবে কাজ করতে পারে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ২৯ আসনে জয়ী হলেও এবার পেয়েছে ১১টি। শক্তিশালী বিরোধী দল গঠন করার মতো শক্তিমত্তা দলটির রয়েছে এমনটি প্রতীয়মান হচ্ছে না। তাছাড়া তাদের মধ্যেই ফের বিভাজন দেখা দিয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবার সরকার গঠন করছে। আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা পঞ্চমবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। তার অভিজ্ঞতা এবং মেধার সমন্বয়ে বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট দূরীকরণের সুযোগ রয়েছে। অতীতে আমরা বহুবার সংলাপের আহ্বান জানিয়েছি। এখন নতুন করে সংলাপের দ্বার উন্মোচনের সময় এসেছে। সংলাপের মাধ্যমে সংকট নিরসনের জন্য তিনি পদক্ষেপ নিলে বিদ্যমান সংকট দূর করা কঠিন হবে না বলেই মনে করি। দেশের উন্নয়নে তিনি এমনিতেই ইতোমধ্যে বহু উদ্যোগ নিয়েছেন এবং এর সফলতা দৃশ্যমান। বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট নিরসন করতে পারলে দেশের মানুষ উন্নয়নের সফল একজন দৃষ্টান্তকারীর পাশাপাশি রাজনীতির ইতিহাসে তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তার সাফল্যের মুকুটে যুক্ত হবে আরেকটি নতুন পালক।

আওয়ামী লীগ প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনের আগে জাতির উদ্দেশে ভাষণে বলেছেন, ‘আমরা যদি পুনরায় সরকার গঠন করার সুযোগ পাই তাহলে অতীতের ভুলগুলো শুধরে নেব।’ বিগত তিন মেয়াদে তাদের উন্নয়ন-অগ্রগতির সাফল্যচিত্র দৃশ্যমান। বিশ্বদরবারে বাংলাদেশকে তারা অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন, এ ব্যাপারে বিশ্লেষকদের বিশ্লেষণ রয়েছে। পাশাপাশি তৃতীয় মেয়াদে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতিসহ নানা ক্ষেত্রে সরকারের অসাফল্যের কিছু চিত্রও রয়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার পাশাপাশি সিন্ডিকেটের কারসাজি বন্ধে সরকার কোনো সাফল্য দৃশ্যমান করতে পারেনি। পাশাপাশি দলীয় নেতাকর্মী অনেকের বিরুদ্ধেই অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। আমরা দেখেছি, এবার যারা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন বিশেষ করে ক্ষমতাসীন মহলের মন্ত্রী-এমপি অনেকেরই সম্পদের অস্বাভাবিক স্ফীতি ঘটেছে। তাতে প্রতীয়মান হয় অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে সরকারের ‘শূন্য সহিষ্ণুতা’র অঙ্গীকার থাকলেও তা বাস্তবায়ন করা যায়নি। আওয়ামী লীগ তাদের এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে আরও কঠোর অবস্থান নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

বৈষম্য, জননিরাপত্তা, সামাজিক নানা ক্ষেত্রে অসঙ্গতি, আর্থিক খাতে দুর্নীতি, ঋণখেলাপিদের দৌরাত্ম্য, আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে বৈষম্য ইত্যাদি বিষয়ের নিরসনে চাই সুশাসন। বিগত কয়েক দশকে যারা রাজনীতিকে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির অবলম্বন হিসেবে ব্যবহার করেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতেই হবে। মূল্যস্ফীতি, বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংকটের দরুন জনগণ চাপে-তাপে আছে। দুর্নীতি দমন, রাজনৈতিক সংকট নিরসন এবং আদর্শ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলাÑএ তিনটি বিষয়ে কাজ করলে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ আরও মসৃণ হবে। বিশেষত নির্বাচন কমিশনকে আরও শক্তিশালী করার বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমরা আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী দেশ ভারতের নির্বাচন কমিশন টি এম সেশন-এর গৃহীত পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারি। নতুন সরকারের কাছে প্রত্যাশা অনেক একইসঙ্গে সরকারের সামনে রয়েছে অনেক চ্যালেঞ্জও। তবে সর্বাগ্রে নজর দিতে হবে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সুশাসন নিশ্চিত করার দিকে। 

  • নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ। অধ্যাপক, লোকপ্রশাসন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা