× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

পাঠ্যবইয়ে ভুল-অসঙ্গতি কি থাকবেই

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ০৬ জানুয়ারি ২০২৪ ১০:৪৮ এএম

আপডেট : ০৭ জানুয়ারি ২০২৪ ১৬:৫২ পিএম

পাঠ্যবইয়ে ভুল-অসঙ্গতি কি থাকবেই

বছরের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যের পাঠ্যবই তুলে দেওয়া সরকারের দূরদর্শী ভাবনার প্রতিফলন এবং কৃতিত্ব। কিন্তু এ ক্ষেত্রে যে ব্যাধি জেঁকে আছে তা হলো, ভুল ও অসঙ্গতি। ৫ জানুয়ারি প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এবারও পাঠ্যবইয়ে বড় ভুল দৃশ্যমান। তৃতীয় শ্রেণির ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বইয়ের তৃতীয় মলাটে অন্য পাঠ্যপুস্তকের প্রচ্ছদ দৃশ্যমান হয়েছে সাতক্ষীরায় বই বিতরণের পর। বিষয়টি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হলে ওই জেলার প্রায় ১ হাজার ৯৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বইটি তুলে নেওয়া হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, বিনামূল্যে পাঠ্যবই প্রকাশনার ক্ষেত্রে সুচারু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না কেন? প্রায় প্রতি বছরই দেখা যাচ্ছে, পাঠ্যবইয়ে অনেক ক্ষেত্রেই ভুল আর অসঙ্গতির ছড়াছড়ি। এবারের ঘটনায় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃপক্ষ (এনসিটিবি) জানিয়েছে, এ ভুল করেছে ছাপাখানা। তাই বইগুলো উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে, শিগগিরই দেওয়া হবে নতুন বই। আমাদের স্মরণে আছে, গত বছরও ভুল এবং নানা বিতর্কের মুখে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ বইটি প্রত্যাহার করেছিল এনসিটিবি।

খ্রিস্টীয় বছরের প্রথম দিন উৎসব করে সরকার শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ করে। এ উৎসব শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনে বাড়তি আনন্দমুখর অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু সরকারের এ সাফল্য প্রায় প্রতি বছর প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটির কারণে। কয়েক বছর ধরে এ নিয়ে এত আলোচনা-সমালোচনার পরও ভুল-অসঙ্গতি দূর হচ্ছে না। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন দাঁড়ায়- মানসম্মত ও নির্ভুল পাঠ্যবই প্রণয়ন কি অসাধ্য বিষয়ে পরিণত হলো? প্রায় প্রতি বছরই পাঠ্যবইয়ে কোনো না কোনো ভুল হচ্ছে। আর সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা ভুল স্বীকার করে বিবৃতি দেন, দুঃখ প্রকাশ করেন এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে এটাই যেন স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হয়েছে। এনসিটিবির তরফে পাঠ্যবইয়ে ভুল ও অসঙ্গতির ব্যাপারে প্রায় প্রতি বছরই যেসব খোঁড়া যুক্তি দাঁড় করানো হয় তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমাদের বোধগম্য নয়, যেসব লেখক ও পর্যালোচকের যোগ্যতা-দক্ষতা-আন্তরিকতা প্রশ্নবিদ্ধ তারা এত বড় কর্মযজ্ঞের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পান কী করে? ভুল-অসঙ্গতির পাঠ্যবই নিঃসন্দেহে প্রজন্মের সর্বনাশের হেতু। মানসম্মত ও ত্রুটিমুক্ত বই না হলে শিক্ষার্থীরা ভুল শিক্ষা নেবে এটাই স্বাভাবিক। প্রজন্মের জন্য এ আত্মঘাতীমূলক বিষয়টি কী করে জিইয়ে আছে?

দেশে নিশ্চয়ই নির্ভুল কিংবা মানসম্মত বই লেখার মতো যোগ্য মানুষের অভাব নেই। অভিযোগ আছে, যোগ্যদের দূরে রেখে অযোগ্যদের এমন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করার পেছনে স্বার্থান্বেষী মহলের কারসাজি রয়েছে। পরিবর্তিত বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে যথাযথভাবে গড়ে তুলতে যে শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যবই দরকার তাতে যদি ঘাটতি থাকে তাহলে এর বিরূপ ফল কত ভয়াবহ হতে পারে এর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ নতুন করে নিষ্প্রয়োজন। সরকার নানা প্রতিবন্ধকতা ডিঙিয়েও বছরের প্রথম দিন বিনামূল্যে বই বিতরণের কাজটি সফলভাবে সম্পন্ন করে এলেও পাঠ্যবই প্রণয়নে সংশ্লিষ্ট কতিপয় দায়িত্বশীলের অপরিণামদর্শী কর্মকাণ্ডে তা কখনও কখনও ম্লান হয়ে পড়ছে। এমন ভুল ও অসঙ্গতির জন্য যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া বাঞ্ছনীয়। পাঠ্যবইয়ে ভুলের জন্য প্রথমত দায় লেখক ও সম্পাদনার মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে যারা যুক্ত তাদের। পাশাপাশি এ কর্মযজ্ঞ তদারকির বিভিন্ন পর্যায়ে যারা যুক্ত রয়েছেন তাদেরও দায় এড়ানোর কোনো অবকাশ নেই। বই চূড়ান্ত করার আগে যাদের হাতে বইয়ের পাণ্ডুলিপি পাঠানো হয় এবং ডাকা হয় কর্মশালায়, তাদেরও দায় এড়ানোর অবকাশ নেই। ভুল ও অসঙ্গতিপূর্ণ পাঠ্যবই সমন্বয়হীনতার বিষয়টিও সামনে নিয়ে আসে। আমরা আশা করব, এনসিটিবি কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীলরা ভুল স্বীকার করে কিংবা পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে দায় শেষ করার চেষ্টা না করে কীভাবে নির্ভুল পাঠ্যবই প্রণয়ন করা যায়, এ ব্যাপারে মনোযোগ গভীর করবেন।

এনসিটিবি কর্তৃপক্ষের উচিত পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন ও সংশোধনের জন্য হাতে যথেষ্ট সময় রাখা। একই সঙ্গে এ বিশাল কর্মযজ্ঞের জন্য আর্থিক বরাদ্দের পরিমাণও বাড়ানো জরুরি। আমরা জানি, অনেক বিশিষ্টজন যাদের ভুল সংশোধনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তারা তাদের সম্মানি ফিরিয়ে দিয়েছেন আর্থিক পরিমাণ গ্রহণযোগ্য না হওয়ার কারণে। এ দৈন্য ঘোচানো জরুরি। যেখানে উপযুক্ত বিনিয়োগ প্রয়োজন সেখানে এমন কার্পণ্য কিংবা অদূরদর্শিতা নিশ্চয়ই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বিনামূল্যের পাঠ্যবই প্রকল্পে অনেক ক্ষেত্রেই আর্থিক অস্বচ্ছতার অভিযোগও আছে। অভিযোগ খতিয়ে দেখে এরও প্রতিবিধান জরুরি।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা