× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

জননিরাপত্তা

নির্বাচন কমিশনের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ

মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশীদ

প্রকাশ : ০৬ জানুয়ারি ২০২৪ ১০:৪৫ এএম

মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশীদ

মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশীদ

রাত পোহালেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আমরা জানি, বিএনপি নেতৃত্বাধীন কয়েকটি দলের বর্জন এবং আওয়ামী লীগসহ নিবন্ধিত বেশিরভাগ দলের অংশগ্রহণে এ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। পাশাপাশি এও সত্য, নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক সংকটের ছায়াও দৃশ্যমান। দেশবিদেশের নানা মহল তো বটেই, জাতিসংঘসহ কোনো কোনো দেশের সরকারেরও আমাদের এ নির্বাচন ঘিরে বাড়তি আগ্রহ লক্ষ করা যাচ্ছে। ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টায় কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী নির্বাচনী প্রচারকাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু লক্ষ করা গেছে, প্রচারের শুরু থেকে প্রায় শেষ পর্যন্ত সংঘাত-সহিংসতা কম ঘটেনি। দুঃখজনক হলেও সত্য, হতাহতের মর্মন্তুদ চিত্রও পরিলক্ষিত হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে নির্বাচন নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করা ইসির জন্য নিঃসন্দেহে বড় চ্যালেঞ্জ। ২০২৩ বিদায়ি বছরের ২৯ ডিসেম্বর থেকে ঢাকাসহ সারা দেশে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় বিজিবির মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ১ হাজার ১৫১ প্লাটুন সদস্য কাজ করছে। একই সঙ্গে গত ৩ জানুয়ারি থেকে সেনা, নৌ, বিমান ও কোস্টাল গার্ডের সদস্যরাও শান্তিশৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে মাঠে রয়েছেন। ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত সড়ক, নৌ ও আকাশ পথের শান্তিশৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে তারা দায়িত্ব পালন করবেন। অর্থাৎ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজনে জননিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে।

নির্বাচনের প্রচারকেন্দ্রিক সংঘাত-সহিংসতা জনমনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সৃষ্টি করেছে। অন্তর্ঘাতমূলক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও ঘটেছে। নির্বাচন কমিশনের তরফে এ নিয়ে উদ্বেগও লক্ষ করা গেছে এবং এর নিরসনে তাদের চেষ্টাও আছে কিন্তু সুফল দৃশ্যমান হয়নি। ফলে জননিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ার পাশাপাশি নির্বাচনী পরিবেশ মারাত্মকভাবে উৎকণ্ঠাও তৈরি করেছে। নির্বাচনে সংঘাত-সহিংসতার সিংহভাগ ঘটনা ঘটে আচরণবিধি লঙ্ঘনের কারণ থেকে। প্রকৃতপক্ষে এবারের নির্বাচনী প্রচারেও তা-ই দেখা গেছে। এ প্রেক্ষাপটে অধিকারের মাঠ সবার জন্য সমতল করার বিকল্প নেই, এ কথা এ স্তম্ভে আগেও লিখেছি। এবার দলীয় প্রতীকের অধীনে আসা প্রার্থী তো বটেই, নির্বাচনী ময়দানে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যা সংসদীয় আসনের প্রায় সমান। নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে, এমনটিই দাবি বিভিন্ন মহলের। যারা বর্জন করেছে তারা অতীতে ধাপে ধাপে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করলেও নির্বাচনের আগে তাদের তেমন কোনো কার্যক্রম-কর্মসূচি দৃশ্যমান হয়নি। তবু হরতাল-অবরোধে অনাকাঙ্ক্ষিত অনেক ঘটনাই ঘটেছে। যারা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে তাদের একাংশের কর্মী-সমর্থকরা জড়িয়েছে সংঘাত-সহিংসতায়। এ সংঘাত-সহিংসতা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকেন্দ্রিক, তাও আগেই বলেছি। আবার অনেক স্থানে তৃতীয় কোনো পক্ষের ইন্ধনেও সংঘাত-সহিংসতা ঘটেছেÑএমন খবরও সংবাদমাধ্যমে দেখেছি। মূলত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করার রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে সংঘাত-সহিংসতা উস্কে দেওয়া হচ্ছেÑবিভিন্ন মহলের এ দাবি উপেক্ষা করার নয়। তবে সবকিছু ডিঙিয়ে এখন নির্বাচনসংক্রান্ত বিষয়গুলো চূড়ান্ত পর্যায়ে। আগামীকাল সকালে ভোটগ্রহণ পর্বে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় থাকবে এবং ভোটাররা নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে গিয়ে স্বাধীনভাবে নিজেদের মতামতের প্রতিফলন ঘটাবেÑশুভবোধসম্পন্ন সবারই প্রত্যাশা এমনটি।

নির্বাচনী বৈতরণী পেরিয়ে বিজয়ী হওয়ার চেষ্টা সব প্রার্থীরই থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। প্রার্থী তো বটেই, তাদের কর্মী-সমর্থকরাও এ ব্যাপারে তৎপর। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করে কীভাবে জয়ী হওয়া যায়Ñএমন একটি ভাবনা থাকায় অনেক প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা আবেগের বশে জড়িয়ে পড়েন সংঘাত-সহিংসতায়। তবে আমাদের প্রত্যাশা নির্বাচন কমিশনসহ তাদের সহযোগী সব পক্ষের জোরালো সহযোগিতায় অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো কিছু ঘটার অবকাশ থাকবে না। সহিংস পরিস্থিতি এড়াতে প্রার্থীদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। সংঘাত-সহিংসতা পরিহার করে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন আয়োজনের সদিচ্ছার বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর দায় রাজনৈতিক দলগুলোর নীতিনির্ধারকদের। যারা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন তাদের সংঘাত-সহিংসতা এড়ানোর কঠোর নির্দেশনা থাকুক দলের নীতিনির্ধারকদের তরফে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে যারা লড়ছেন তাদের কর্মী-সমর্থকদেরও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়ানোর ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। নির্বাচনে অংশীজন সবার মনোভাব যদি উদার হয় এবং নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সব পক্ষ যদি দায়িত্ব পালনে নিষ্ঠ থাকে তাহলে পরিবেশ বৈরী হয়ে ওঠার কোনো কারণ নেই। নির্বাচনের দিন কোথাও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির উদ্ভব হলে কমিশনকে নির্মোহ কঠোর অবস্থান নিয়ে প্রতিবিধান নিশ্চিত করতে হবে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে বিভিন্ন মহলের অপপ্রচার চালানোর বিষয়েও সচেতন মহল জ্ঞাত। বিভ্রান্তিকর তথ্য ভোটারদের মনে নানা ধরনের শঙ্কা জাগিয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে দ্রুত এসব বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে দিচ্ছে একটি পক্ষÑএমন খবরও সংবাদমাধ্যমেই দেখেছি। নির্বাচনের প্রতি যেন মানুষের আস্থা কমে যায় এবং নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য না হয় সেজন্য এখনও তারা অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেÑএ অভিযোগও আছে। যারা এ অপতৎপরতা চালাচ্ছে তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা জরুরি। সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশনের সামনে যে কটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে তার মধ্যে এটিও গুরুত্বপূর্ণ। সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশনের দৃঢ়প্রত্যয় রয়েছে। সরকার তাদের সহায়ক শক্তি হিসেবে ভূমিকা রাখছে। আমরা দেখছি, প্রশাসন ও সরকারের তরফে নির্বাচন কমিশনের যে সহযোগিতা পাওয়ার কথা তা এখন পর্যন্ত অব্যাহত আছে। তবে নির্বাচনকালীন জননিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যে ভূমিকা রাখবে, তার চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন কমিশনের কঠোর নজরদারি।

নতুন বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের প্রথম দিনে দেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, নতুন করে সংগঠিত হচ্ছে জঙ্গি সংগঠন জেএমবি। নির্বাচনকালীন রাজনৈতিক সংকট ও অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে তারা নাশকতার ছক কষছে- এমন অভিযোগও নানা মহল থেকে উঠে এসেছে। দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রভাবিত করার জন্য জঙ্গি সংগঠনগুলোকে নানাভাবে ব্যবহার করা হয়- এ অভিযোগ বহু পুরোনো। আমরা দেখেছি, সহিংসতার দায় কোনো রাজনৈতিক পক্ষই নিতে চায় না। ইতোমধ্যে হরতাল-অবরোধ কিংবা নির্বাচনী প্রচারকেন্দ্রিক যেসব মর্মস্পর্শী ঘটনা ঘটেছে, এর দৃষ্টান্তযোগ্য প্রতিকার অনেক ক্ষেত্রেই নিশ্চিত করা যায়নি। নির্বাচনের দিন জঙ্গিদের ব্যবহার করে জননিরাপত্তায় বিঘ্ন ঘটানোর আশঙ্কা রয়েছেÑএমন বক্তব্যও কেউ কেউ দিয়েছেন। জঙ্গিদের রয়েছে আলাদা স্বার্থ। জঙ্গি কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য তাদের পৃষ্ঠপোষকতা চাই। একটি পক্ষ পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে নির্বাচন আয়োজনে বিঘ্ন ঘটাতে সংঘাত-সহিংসতামূলক পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য তাদের ব্যবহার করতে পারেÑএ আশঙ্কা অমূলক নয়। এভাবে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দায় জঙ্গিদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া সহজ হবে। মনে রাখতে হবে, দেশে জঙ্গি সংগঠনগুলো বিচ্ছিন্ন হলেও নিষ্ক্রিয় নয়। তবে বৃহৎ পর্যায়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করার মতো সংগঠিত শক্তি তাদের নেই। বিগত কয়েক বছরে জঙ্গি দমনে সরকারের কঠোর অবস্থান ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। জঙ্গিদের কঠোরভাবে দমনের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রতিনিয়ত অভিযান চালাচ্ছে। ফলে দেশ অস্থিতিশীল ও অকার্যকর করার জন্য তাদের অপতৎপরতা কমে এসেছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও বড় পরিসরে নাশকতা করার সক্ষমতা জঙ্গি সংগঠনগুলোর আছে বলে আমি মনে করি না। তার পরও কোনো কিছুই সন্দেহের বাইরে রাখা ঠিক নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গোয়েন্দা ইউনিটকে তাই শ্যেনদৃষ্টি রাখতে হবে। জঙ্গি সংগঠনগুলো কোথায়, কীভাবে সংগঠিত হচ্ছে কিংবা তাদের পরিকল্পনার ক্ষেত্র চিহ্নিত করে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। নির্বাচনের পর জনজীবনে বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করার মতো অতীতে অনেক ঘটনাই ঘটেছে। এ বিষয়গুলোয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত দায়িত্বশীল সবাইকে তো বটেই, সরকারকেও বাড়তি নজর রাখতে হবে।

আমাদের প্রত্যাশা, নির্বাচন কমিশন, সরকার ও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সব পক্ষের যূথবদ্ধতায় নির্বাচন প্রশ্নমুক্তভাবে সম্পন্ন হবে। অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সজাগ থাকতে হবে নিজ নিজ ক্ষেত্রে, যাতে তাদের অদূরদর্শিতায় কিংবা হীনস্বার্থে জীবনবৈরী পরিস্থিতির উদ্ভব না হয়। জননিরাপত্তার ব্যাপারে অবশ্যই কঠোর নজরদারি-তদারকির বিকল্প নেই। ভোটারের নিরাপত্তা ও স্বার্থরক্ষায় নির্বাচন কমিশন, সরকার ও সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে। সব মিলিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করা ইসির সামনে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নির্বাচন যাতে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে বাড়তি উপসর্গ সৃষ্টি না করে এ ব্যাপারে কমিশনের অনমনীয় অবস্থান জরুরি। আমরা বিশ্বাস করি, নির্বাচন কমিশন, সরকার ও দায়িত্বশীল সব পক্ষ স্বচ্ছতার ব্যাপারে প্রশ্নমুক্ত ভূমিকা পালনে সক্ষমতার পরিচয় দেবে। নির্বাচন প্রশ্নমুক্ত করতে পারলে বিদ্যমান অনেক সমস্যার সমাধান হবে এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসার পথ সুগম হবে- এ অভিমত অমূলক নয়। আমরা সর্বাংশে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রত্যাশা করি।

  • নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও নির্বাহী পরিচালক, ইনস্টিটিউট অব কনফ্লিক্ট ল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা