প্রেক্ষাপট
মো. বিল্লাল হোসেন
প্রকাশ : ০৬ জানুয়ারি ২০২৪ ১০:৩৮ এএম
করোনা মহামারির
সময় অনলাইনে নানা ধরনের খাবার অর্ডার দেওয়ার বিষয়টি জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। করোনার
পরও মানুষ অনলাইনে বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট বা দোকান থেকে নানা সময় খাবার অর্ডার করছে।
দেশে অনলাইনে খাদ্যদ্রব্য সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় ফেসবুকে। ফেসবুকে বিভিন্ন পেজ, আইডি
ও গ্রুপের মাধ্যমে বিক্রেতারা ফুড ডেলিভারি সার্ভিস দেন। অনলাইন সার্ভিস হওয়ায় ব্যবসায়ীরা
নানা প্রতারণার আশ্রয় নেন। খাদ্য ব্যবসায় প্রতারণার ক্ষেত্রে সম্প্রতি ভোক্তাদের শব্দফাঁদে
আটকে দেওয়ার অভিযোগ বেশি। নতুন এ ধরনের প্রতারণার ক্ষেত্রে পণ্য বিক্রির সময় বেশকিছু
চটকদার শব্দ ব্যবহার করে ভোক্তাদের আকৃষ্ট করা হয়। ফেসবুকে পণ্য বিক্রির সময় প্রিমিয়াম,
অর্গানিক, হালাল, শতভাগ খাঁটি, বিষমুক্ত, ন্যাচারাল, ভেজালমুক্ত ইত্যাদি শব্দ
দিয়ে প্রচার চালাতে দেখা যায়। ভোক্তারা না বুঝে এবং যাচাইবাছাই না করে এসব শব্দ দ্বারা
আকৃষ্ট হন। যেকোনো দেশেই প্রিমিয়াম, অর্গানিক মানের খাদ্যপণ্য বিপণন বেশ কঠিন। এ ধরনের
খাদ্যপণ্যের মজুদ কম থাকে। তা ছাড়া উৎপাদন, সংরক্ষণ ও প্যাকেটজাত করার বিষয়টি জটিল
হওয়ায় এসব পণ্যের দাম থাকে বেশি। কিন্তু দেশে এসব পণ্যের মানদণ্ড যাচাইবাছাইয়ের সঠিক
সক্ষমতা না থাকায় বিভিন্নভাবে নানা ট্যাগ দিয়ে প্রতারণা চলছে। প্রকৃতপক্ষে আমাদের দেশে
প্রিমিয়াম, অর্গানিক কিংবা শতভাগ বিশুদ্ধ খাবার বাজারে নিয়ে আসা বেশ দুরূহ; ব্যয়বহুলও
বটে। বেশকিছু প্রতিষ্ঠান প্রিমিয়াম কিংবা অর্গানিক খাবার বাজারজাত করছে তবে তার সংখ্যা
খুবই কম। প্রিমিয়াম, অর্গানিক কিংবা শতভাগ খাঁটি শব্দ দিয়ে আসলে কী বোঝায় বা
প্রিমিয়াম, অর্গানিক কিংবা শতভাগ খাঁটি খাদ্যপণ্য হতে গেলে কী কী শর্ত মেনে চলতে হয়
সেসবের কিছুই অধিকাংশ বিক্রেতা জানেন না।
শুধু তাই নয়,
সাম্প্রতিক সময়ে ফাংশনাল ফুডস (যেসব খাবারে ঔষধি গুণ আছে) ও নিউট্রাসিউটিক্যালসের
(যেসব খাবারে পুষ্টি ও ফার্মাসিউটিক্যাল গুণ আছে) বাজার প্রসারিত হচ্ছে খুব দ্রুত।
ফেসবুকেও বিভিন্ন পেজে নানা ধরনের ফাংশনাল ফুডস ও নিউট্রাসিটিক্যালস জাতীয় খাদ্য বিক্রি
হচ্ছে। শুধু বিক্রেতাদের শব্দফাঁদের কৌশলে এ দুটি পণ্য দেদার বিক্রি হচ্ছে অনলাইন মার্কেটে।
আর এ সুযোগ ব্যবহার করে প্রতারণা করছেন অনলাইন ব্যবসায়ীরা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের খাদ্যপণ্যে যেসব প্যাকেজিং
ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার করা হয়, সেগুলো ইকো ফ্রেন্ডলি ঘোষণা দিয়ে সবুজ রঙের আধিক্য
রেখে তৈরি করা হয়; যাতে ক্রেতারা খুব সহজে আকৃষ্ট হয়। সবুজ রঙ চোখের জন্য প্রশান্তিদায়ক
বিধায় আমরা এ রঙ দেখলেই সেদিকে বেশি আকৃষ্ট হই। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিম্নমানের
খাদ্যপণ্য সবুজ রঙের জারে কিংবা প্যাকেটে বাজারজাত করা হচ্ছে। অনলাইন খাদ্য ব্যবসার
জন্য আমাদের দেশে নির্দিষ্ট কোনো সরকারি নীতিমালা নেই কিংবা আইন নেই, যার মাধ্যমে এসব
নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আবার যেটুকু নীতিমালা আছে তা-ও অধিকাংশ অনলাইন খাদ্য ব্যবসায়ী
অনুসরণ করছেন না।
অনলাইন ব্যবসা বিশেষত খাদ্য ব্যবসার জন্য নির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন জরুরি। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন্স, বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি ও গবেষণা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর যূথবদ্ধভাবে কাজ করতে পারে। পাশাপাশি অনলাইনে চটকদার বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পড়ে ভোক্তারা যেন প্রতারিত না হয় সেজন্যও সচেতনতামূলক কার্যক্রম বাড়াতে হবে।