× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

নির্বাচন

শেষ ভালো যার সব ভালো তার

ড. মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী

প্রকাশ : ০৫ জানুয়ারি ২০২৪ ১২:১১ পিএম

ড. মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী

ড. মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী

লেখার শিরোনামের প্রবাদটি সবারই জানা। প্রবাদের মর্মার্থ কালে কালে উত্তীর্ণ হয়ে এসেছে। ব্যক্তি থেকে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে যখনই বড় ধরনের এলোমেলো শঙ্কা, অনিশ্চয়তা, প্রতিবন্ধকতা এবং আশানিরাশার নানা দোলাচলে সবকিছু দোলে, তখন এ প্রবাদের নির্যাসটা মনে রেখে চূড়ান্ত লক্ষ্যে অবিচল থাকাটাই একমাত্র উপায় হতে পারে। আমাদের জাতীয় জীবনে বহুবার বহু সংকট এসেছে। যখনই কেবল নেতৃত্ব শেষ চ্যালেঞ্জটি সাফল্যের সঙ্গে অতিক্রম করতে পেরেছেন, তখনই অশুভকে পরাস্ত করা গেছে, শুভশক্তির বিজয় অর্জিত হয়েছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে রশি টানাটানি শুরু হয়েছে অনেক আগেই। বারবার নানা অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল। নির্বাচন হওয়া-না হওয়া নিয়ে দেশে-বিদেশে নানা শক্তি নানা শঙ্কা ছড়িয়েছে। অজুহাতও তাদের কম নয়। তার পরও আশা করা হয়েছিল সব রাজনৈতিক দলই নির্বাচনে অংশ নেবে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা শেষে কার গলায় বিজয়ের মালা উঠবে তা কেবল তখনই সবাই দেখতে পাবে। কিন্তু বিএনপিসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দল সংবিধানসম্মতভাবে নয় বরং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হওয়া ছাড়া নিজেরা যেমন অংশ নেবে না, সরকারকেও দেশে কোনো নির্বাচন করতে না দেওয়ার অবস্থানে অনড় ছিল। এ নিয়ে সরকারের দিক থেকেও কোনো ধরনের ছাড় না দেওয়ার কথা উচ্চারিত হয়েছিল।

দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতা কিংবা সংলাপের প্রস্তাব বিভিন্ন মহল থেকে দেওয়া হলেও কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি ছিল না, নিজের শক্তি অন্যের চাইতে কম বলে প্রমাণ দিতে চায়নি। এরকম একটি অনড়, অচল অবস্থায় দেশের রাজনীতি নির্বাচন কেন্দ্র করে যখন চলে যায় তখন সাধারণ মানুষের মধ্যে হতাশা এবং নির্লিপ্ততা প্রদর্শন ছাড়া কিছুই করার থাকে না। বিরোধী দলগুলোর ধারণা ছিল তারা সরকারি দলকে একঘরে করে ফেলতে পেরেছে। সুতরাং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে সরকার এবার পদত্যাগ করতে বাধ্য হবে। কিন্তু দেশে এত বড় পরিবর্তনের জন্য গণআন্দোলন সংঘটিত করা ছাড়া সরকারকে বাধ্য করার কোনো বাস্তবতা তৈরি করা সম্ভব হয়নি বিরোধী দলের। তার পরও বিরোধী দল সরকারের পতন ঘটিয়ে নির্দলীয় সরকার গঠনের ধারণা থেকে একচুলও নড়েনি। সরকারি দল বিরোধী দলের দাবি মানার অবস্থানে ছিল না। বিরোধী দলও সরকারকে বাধ্য করতে পারেনি। কিন্তু নির্বাচনের তফসিল সংবিধান মোতাবেক নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা করা ছাড়া দ্বিতীয় কোনো পথ খোলা ছিল না। ১৫ নভেম্বর তফসিল ঘোষিত হওয়ার পরও অনেকে আশা করেছিল বিরোধী দল নির্বাচনে অংশ নেওয়ার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারে। কিন্তু তা-ও ঘটেনি। বিরোধী দল ২৯ অক্টোবর থেকে হরতাল, অবরোধ ডেকে জনজীবন বিপর্যস্ত করতে চেয়েছিল, কিন্তু তা তেমন একটা জমাতে পারেনি।

যাত্রীবাহী বাসে আগুন জ্বালিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হলেও সাধারণ মানুষকে নিবৃত্ত করা যায়নি। রেললাইন কাটাকাটি, উপড়ে ফেলা এবং অগ্নিসংযোগ করে কয়েকজন যাত্রীকে পুড়িয়ে মারার ঘটনা দেশে-বিদেশে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় তোলে। তার পরও যুগপৎ আন্দোলনকারীরা হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি পরিহার করেনি। তবে মাঠে ছোট ছোট কয়েকটি দলের নেতাকর্মী ছাড়া খুব বেশি কাউকে নামতে দেখা যায়নি। বিএনপি এবং যুগপৎ আন্দোলনকারীরা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিলেও আওয়ামী লীগ, ১৪ দল, জাতীয় পার্টিসহ ২৭টি দলের ১ হাজার ৮৯৬ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তবে আওয়ামী লীগ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেউ যেন নির্বাচিত না হতে পারে সেই বিবেচনা থেকে দলীয় মনোনীত প্রার্থী ছাড়াও স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করার সুযোগ করে দেয়। এতে প্রায় প্রতিটি আসনেই আওয়ামী লীগেরই একাধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। জাতীয় পার্টি, তৃণমূল বিএনপি, বিএনএম ছাড়াও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রার্থী থাকায় বেশিরভাগ আসনেই প্রতিদ্বন্দ্বিতার আবহ সৃষ্টি হয়েছে। তফসিল ঘোষণার পর থেকে যুগপৎ আন্দোলনকারীরা হরতাল-অবরোধ ছাড়াও নির্বাচন প্রতিহত করার নানা ধরনের হুমকিধমকি দিয়ে আসছে। তবে বিএনপির কয়েক হাজার নেতাকর্মী ২৮ অক্টোবরের পর থেকে আটক কিংবা আত্মগোপনে থাকায় আন্দোলনে তাদের নেতৃত্ব দৃশ্যমান হতে পারেনি। নামসর্বস্ব কিছু রাজনৈতিক নেতাদের হুংকার এবং বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী আহমেদের অনলাইনে কর্মসূচি ঘোষণা ছাড়া তেমন বেশি কিছু ঘটানো সম্ভব হয়নি।

এত দিন মনে করা হয়েছিল বিএনপিকে ছাড়া নির্বাচনে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা উত্তাপ সৃষ্টি করা সম্ভব হবে না। কিন্তু আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী থাকায় নির্বাচনী উত্তাপ বেশিরভাগ আসনেই লক্ষ করা যাচ্ছে। অন্যদিকে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনটি সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ এবং প্রভাবমুক্ত করার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সেনাবাহিনী, প্রশাসন, বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটসহ বিভিন্ন সংস্থাকে সংগঠিত করার কাজটি এ পর্যন্ত সন্তোষজনকভাবেই গুছিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে বলে মনে হয়। বিদেশি পর্যবেক্ষকদের অনেকেই ঢাকায় এখন অবস্থান করছেন। নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি নিয়ে তাদেরও তেমন কোনো অভিযোগ শোনা যায়নি। সরকারি দল আওয়ামী লীগ নির্বাচন কমিশনকে সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকেও নির্বাচন কমিশনের চাহিদা মোতাবেক সহযোগিতা করা হচ্ছে। প্রশাসনে মাঠ পর্যায়ে কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উত্থাপিত হলে কমিশন আরপিও মোতাবেক শাস্তি কিংবা বদলির ব্যবস্থা তাৎক্ষণিকভাবে নিচ্ছে। প্রার্থীদের মধ্যে যারা যারা এ পর্যন্ত নিয়ম ভঙ্গ করেছেন তাদের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, বেশ কয়েকজনকে অর্থদণ্ডও দেওয়া হয়েছে, মামলা দায়ের হয়েছে কয়েকজনের বিরুদ্ধে। নির্বাচনে কোনো কোনো প্রার্থী এবং তাদের সমর্থকদের মরিয়া হয়ে উঠতে দেখা যাচ্ছে। তাদের প্রতিপক্ষের অফিস এবং সমর্থকদের ওপর হামলা করতেও দেখা গেছে।

৭ জানুয়ারি দেশব্যাপী নির্বাচন হতে যাচ্ছে। তারপরও বিরোধী দল এখনও সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচনের দাবি করেই যাচ্ছে। এ ছাড়া জনগণকে ৭ তারিখের নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে কোথাও কোথাও লিফলেট বিতরণ করতে দেখা যাচ্ছে। এ পর্যন্ত তাদের আন্দোলন নির্বাচন প্রতিহত করার হুংকারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে দেখা গেছে। নির্বাচন এখন একেবারেই ঘরের দরজায় কড়া নাড়ছে। শোনা যাচ্ছে, বিএনপির লন্ডনস্থ শীর্ষ নেতা শনি-রবি দুই দিন সর্বাত্মক হরতাল এবং অবরোধ করার কড়া নির্দেশ দিয়েছেন। বিএনপির সব নেতাকেই তাতে অংশ নিতেও বলা হয়েছে। যারা অংশ নেবেন না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সেনা সদস্যরাও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে থাকবে। আশা করা যাচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গকারী যেকোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে তারা তৎপর থাকবে। অন্যদিকে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাসহ ভোটকেন্দ্রে যারা দায়িত্ব পালন করবেন তাদেরও আইনিভাবে দায়িত্ব পালন করার নির্দেশ দেওয়া আছে। তা ছাড়া প্রতি আসনেই কয়েকজন ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। আওয়ামী লীগ থেকে পরিষ্কার বার্তায় ভোটকেন্দ্রে বেশিসংখ্যক ভোটারকে ভোটদানে উপস্থিত করার কাজে সহযোগিতা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের যে বা যারাই কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা অথবা আইন ভঙ্গ করার চেষ্টা করবেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ম্যাজিস্ট্রেট ও কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা তাদের বিরুদ্ধে যেসব আইনি ব্যবস্থা নেবে আওয়ামী লীগ তা সমর্থন করবে বলে জানিয়ে দিয়েছে।

আওয়ামী লীগ এবং অন্যান্য দলের প্রার্থীরা কোনো ধরনের নিয়ম ভঙ্গ না করে ভোটারদের ভোটের রায় মেনে নেওয়ার মানসিকতা পোষণ করা ছাড়া অন্য কোনোভাবে বিতর্কিত কোনো আচরণ কিংবা কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করলে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মোতাবেক আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার মাধ্যমে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনটি সব ধরনের বিতর্কমুক্তভাবে হতে সাহায্য করবে- এটিই সবাই আশা করে। ৭ জানুয়ায়রির নির্বাচনটি ভালোয় ভালোয় হয়ে গেলে কারও কোনো অভিযোগ ধোপে টিকবে না। দেশে কিংবা বিদেশে যারা এ নির্বাচনের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে দেখছেন, তারাও যদি কোনো নিয়ম ভাঙার অভিযোগ না পান তাহলে সবচাইতে বেশি লাভবান হবে বাংলাদেশ। এ নির্বাচনটি নিয়ে বাংলাদেশকে চাপে রাখার মতলব কোনো কোনো দেশের রয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। নির্বাচনটি শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে হয়ে গেলে তাদেরও কিছু বলার থাকবে না। নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে শেষ করা যেমন ইসির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ, তেমন নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে দেশের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক স্থিতিশীলতা ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করাও সমগুরুত্বপূর্ণ। আমাদের অভিজ্ঞতায় আছে, নির্বাচন পরবর্তী অনেক অপ্রীতিকর ঘটনা সমাজজীবন তছনছ করে দেয়। এ জন্য নির্বাচন কমিশন ও সরকারকে কঠোর ও নির্মোহ অবস্থানে থাকতে হবে।

  • শিক্ষা ও ইতিহাসবিদ। রাজনীতি-বিশ্লেষক
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা