জন্মদিন
নাসির আহমেদ
প্রকাশ : ০১ জানুয়ারি ২০২৪ ১০:২৪ এএম
অধ্যাপক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান
আজ ১ জানুয়ারি অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামানের ৯১তম জন্মদিন। ঢাকাস্থ জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমির (নায়েম) প্রাক্তন পরিচালক, স্বাধীনচেতা ও সংস্কৃতিবান ব্যক্তিত্ব, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং ঔপনিবেশিক প্রশাসন সংস্কার আন্দোলনের পথিকৃৎ অধ্যাপক আসাদুজ্জামানের জন্ম মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার বর্ধিষ্ণু ও ঐতিহ্যবাহী সাহেবরামপুর গ্রামে। তার পিতা মরহুম হাজী আব্দুর রহমান রাঢ়ি এবং মা মরহুমা জোবেদা খানম।
ইউনাইটেড ইসলামিয়া-মাদারীপুর হাইস্কুল থেকে ১৯৫২ সালে মেট্রিক এবং স্থানীয় মাদারীপুর কলেজ থেকে ১৯৫৪ সালে আইএ পাস করেন। ১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় অনার্সসহ মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। স্কুলে পড়ার সময় তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্নেহ ও সান্নিধ্য লাভের বিরল সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন। ১৯৫৮ সালের সেপ্টেম্বরে ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজ ও আনন্দমোহন কলেজে প্রবেশের মধ্য দিয়ে আসাদুজ্জামানের শিক্ষকতা জীবনের শুরু। অতঃপর রংপুর কারমাইকেল কলেজ ও ঢাকার জগন্নাথ কলেজে বাংলা বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অধ্যক্ষ হিসেবে ১৯৮০ সাল থেকে মাদারীপুর সরকারি কলেজ, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ, নরসিংদী সরকারি কলেজ ও টাঙ্গাইলের সাদত বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে কর্মরত ছিলেন। ১৯৯৪ সালে অবসরের পর ১৯৯৫-৯৬ পর্যন্ত ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে শহীদ আনোয়ার গার্লস কলেজে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন।
কৈশোরে আসাদুজ্জামান সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার প্রতি আকৃষ্ট হন। ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষ অনার্সে ভর্তি হওয়ার পর সেকালের একমাত্র সাহিত্যপত্র মাসিক মোহাম্মাদীতে তার বেশ কিছু ছোটগল্প ও প্রবন্ধ প্রকাশ পায়। ১৯৫৬-৫৭ সালে আরও কিছু ছোটগল্প প্রকাশিত হয়। কিন্তু সরকারি চাকরিতে যোগদানের পর অনিবার্য এক দায়িত্ববোধ থেকেই তিনি রাষ্ট্রীয় প্রশাসনব্যবস্থায় অনভিপ্রেতভাবে প্রচলিত কলোনিয়াল প্রথাপদ্ধতি, নানা বৈষম্য ও অসঙ্গতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। প্রতি জেলায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির শাসন কায়েম এবং রাষ্ট্রস্বীকৃত জাতীয় পরিচয়পত্রের প্রবর্তন, প্রশাসন থেকে বিচার বিভাগকে পৃথকীকরণ, জাতীয় সার্ভিস সিস্টেমকে ২০০ বছরের বন্দিদশা থেকে মুক্ত করার মানসে প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের জন্য সমমানে ও সমমর্যাদার (ইকুয়াল র্যাংক অ্যান্ড স্ট্যাটাস) বিষয়ভিত্তিক প্রয়োজনীয়সংখ্যক ক্যাডার সার্ভিস গঠন, প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে জনস্বার্থে তথ্য সেবাকেন্দ্র স্থাপন ও একটি করে কৃষিভিত্তিক গণগ্রন্থাগার স্থাপন এবং দারিদ্র্য বিমোচনে বেকারদের কর্মক্ষম করে তোলার জন্য প্রতিটি থানায় একটি করে কারিগরি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট স্থাপন, বাংলাদেশের পরিচয়বর্জিত সরকারি ক্যালেন্ডারে বাংলা দিনক্ষণ, মাস-বর্ষ সংযোজন, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে প্যাকেজভিত্তিক পাস-ফেল রহিতকরণ, আন্তঃ ও বহিঃপরীক্ষায় গড় নম্বরে পরীক্ষার্থীর চূড়ান্ত ফলাফল নির্ধারণ, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাকে বৈষম্যমুক্তকরণে সব শিক্ষার্থীর বাধ্যতামূলকভাবে অনুসরণীয় (একীভূত শিক্ষা) একই সিলেবাস সিস্টেমের প্রবর্তন এবং প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার নতুন স্তরবিন্যাস ইত্যাদি প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন, যার প্রায় অধিকাংশই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সরকার কর্তৃক গৃহীত হওয়ায়, এসবের বেনিফিশিয়ারি এখন দেশের সমুদয় জনগোষ্ঠী।
জনগণের ক্ষমতায়ন এবং স্বাধীন দেশের উপযোগী একটি যৌক্তিক বৈষম্যহীন প্রশাসনব্যবস্থা প্রবর্তনের লক্ষ্যে তিনি যেভাবে সংগ্রাম করে চলেছেন এবং এই বয়সেও সক্রিয় আছেন, তার দৃষ্টান্ত বিরল। জনপ্রশাসনে অসাধারণ অবদান রাখার জন্য সরকার কর্তৃক ২০১৭ সালে দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত হন। উল্লেখ্য, স্বাধীনতা পদক প্রতিষ্ঠার কাল (১৯৭৭) থেকে ২০২৩ পর্যন্ত দীর্ঘ ৪৫ বছরে অধ্যাপক আসাদুজ্জামানই একমাত্র ব্যক্তি, যিনি জনপ্রশাসনে এই পুরস্কার লাভ করেন। একজন অনুরাগী ছাত্র হিসেবে স্যারের জন্মদিনে তার সুস্বাস্থ্য এবং দীর্ঘায়ু কামনা করছি।