× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

স্মরণ

কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী আব্বাসউদ্দীন

আমিরুল আবেদিন

প্রকাশ : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৪:০৪ পিএম

কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী আব্বাসউদ্দীন

সঙ্গীতের জগতের এক কিংবদন্তি তিনি। ভাওয়াইয়া গানের জনক বলেও পরিচিত। কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী আব্বাসউদ্দীন আহমদ ১৯০১ সালের ২৭ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের কুচবিহার জেলার তুফানগঞ্জ মহকুমার বলরামপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম জাফর আলী আহমদ এবং মায়ের নাম বেগম লুৎফন নেসা। বাবা পেশায় ছিলেন আইনজীবী। গ্রামেরই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবন শুরু করেন। পাশাপাশি চলছিল গানের চর্চা। গানের গলা যেমন তার ভালো ছিল, তেমনি পড়াশোনায়ও ছিলেন ভালো। ১৯১৯ সালে তুফানগঞ্জ হাইস্কুল থেকে আব্বাসউদ্দীন ম্যাট্রিক পাস করে ভর্তি হন রাজশাহী কলেজে। ১৯২১ সালে রাজশাহী কলেজ ছেড়ে কাছের শহরে কুচবিহার কলেজে ভর্তি হন। আইএ পাস করে ভর্তি হন স্নাতকে। তবে বিএ পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হওয়ার পর আর লেখাপড়া করেননি। চলে গেলেন কলকাতায়। গানের জগতে সেখানেই প্রবেশ।

আব্বাসউদ্দীনের শুরুতে ওস্তাদের তালিম নেওয়ার সুযোগ হয়নি। নিজের যোগ্যতা ও প্রতিভা বলে নিজেকে মেলে ধরেন। শুরুতে ছিলেন পল্লীগাঁয়ের একজন গায়ক। যাত্রা, থিয়েটার ও স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান শুনে গানের প্রতি অনুরাগ বাড়ে তার। নিজে নিজে গান গাওয়া রপ্ত করার চেষ্টা করেন। পরবর্তীকালে কিছু সময়ের জন্য ওস্তাদ জমিরউদ্দীন খাঁর কাছে উচ্চাঙ্গসংগীত শিখেছিলেন। রংপুর ও কুচবিহার অঞ্চলের ভাওয়াইয়া, ক্ষীরোল চটকা গেয়ে আব্বাসউদ্দীন খ্যাতি অর্জন করেন। তারপর জারি, সারি, ভাটিয়ালি, মুর্শিদি, বিচ্ছেদী, দেহতত্ত্ব, মর্সিয়া, পালাগান ইত্যাদি গেয়ে জনপ্রিয় হন। দরদভরা সুরেলা কণ্ঠে পল্লী গানের সুর যেভাবে ফুটিয়ে তুলতেন তা আজও অদ্বিতীয়।

বিশ শতকের দ্বিতীয় দশকে আব্বাসউদ্দীন আধুনিক গানের শিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। কুচবিহারে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে আব্বাসউদ্দীনের প্রথম পরিচয় ঘটে। নজরুলও খুব স্নেহ করতেন আব্বাসউদ্দীনকে। কবি সকলের কাছে আব্বাসউদ্দীনকে পরিচয় দিতেন ‘আমার ছোট ভাই’ বলে। প্রায় বিশ বছর তিনি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের সাহচর্যে ছিলেন। আব্বাসউদ্দীন ছিলেন প্রথম মুসলিম গায়ক যিনি আসল নাম ব্যবহার করে এইচএমভি থেকে গানের রেকর্ড বের করতেন। রেকর্ডগুলো বাণিজ্যিকভাবে ভীষণ সফল হয়। তিনি কাজী নজরুল ইসলাম, জসীমউদদীন, গোলাম মোস্তফা প্রমুখের ইসলামী ভাবধারায় রচিত গানেও কণ্ঠ দিয়েছেন।

আব্বাসউদ্দীন ১৯৩১ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত কলকাতায় বসবাস করেন। প্রথমে রাইটার্স বিল্ডিংয়ে ডিপিআই অফিসে অস্থায়ী পদে এবং পরে কৃষি দপ্তরে স্থায়ী পদে কেরানির চাকরি করেন। এ কে ফজলুল হকের মন্ত্রিত্বের সময় তিনি রেকর্ডিং এক্সপার্ট হিসেবে সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করেন। চল্লিশের দশকে আব্বাসউদ্দীনের গান পাকিস্তান আন্দোলনের পক্ষে মুসলিম জনতার সমর্থন আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর ঢাকায় এসে তিনি সরকারের প্রচার দপ্তরে অ্যাডিশনাল সং অর্গানাইজার হিসেবে চাকরি করেন। তৎকালীন পাকিস্তানের প্রতিনিধি হিসেবে আব্বাসউদ্দীন আহমেদ ১৯৫৫ সালে ম্যানিলায় দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় সংগীত সম্মেলন, ১৯৫৬ সালে জার্মানিতে আন্তর্জাতিক লোকসংগীত সম্মেলন এবং ১৯৫৭ সালে রেঙ্গুনে প্রবাসী বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনে যোগদান করেন। অভিনয়েও যুক্ত হয়েছিলেন আব্বাসউদ্দীন। মোট চারটি বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। এই চারটি সিনেমা হলো ‘বিষ্ণুমায়া’ (১৯৩২), ‘মহানিশা’ (১৯৩৬), ‘একটি কথা’ এবং ‘ঠিকাদার’ (১৯৪০)। ঠিকাদার সিনেমাতে আব্বাসউদ্দীন একজন কুলির ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। আব্বাসউদ্দীনের রেকর্ড করা গানের সংখ্যা প্রায় সাতশ। তার লেখা ‘আমার শিল্পী জীবনের কথা’ (১৯৬০) একটি মূল্যবান তথ্যসমৃদ্ধ আত্মচরিত একমাত্র গ্রন্থ। সংগীতে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি মরণোত্তর প্রাইড অব পারফরমেন্স (১৯৬০), শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৭৯) এবং স্বাধীনতা দিবস পুরস্কারে (১৯৮১) ভূষিত হন।

 

·                   সাংবাদিক

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা