× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

কৃষিপণ্য

হাঁসের ডিম পাড়া ও বাগডাশের ভক্ষণ

মহিউদ্দিন খান মোহন

প্রকাশ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ১১:৫৯ এএম

মহিউদ্দিন খান মোহন

মহিউদ্দিন খান মোহন

১৯ ডিসেম্বর প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর একটি বিশেষ প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘ডিম পাড়ে হাঁসে, খায় বাগডাশে’। প্রতিবেদনে বাক্যটিকে একটি প্রবচন উল্লেখ করলেও এর আরও একটি পরিচিতি রয়েছে। আমরা যখন স্কুলছাত্র, বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলোর সাংস্কৃতিক ফ্রন্টের শিল্পীদের কণ্ঠে একটি গান শুনতামÑ ‘ডিম পাড়ে হাঁসে, খায় বাগডাশে/হুনছনি ভাই হুনছনি, বুঝছিনি ভাই বুঝছনি?.../এক গেরামের গরিব চাষি কালা মিয়া নাম/সবার মুখের ভাত জোগাইতে ক্ষেতে ঝরায় ঘাম/তার ছাওয়াল কান্দে ক্ষুধার জ্বালায়/মহাজনরা হাসে/ডিম পাড়ে হাঁসে, খায় বাগডাশে।’ এখানে বাগডাশ বলতে বাঘের মতো দেখতে ক্ষুদ্রকায় এক প্রকার বন্য জন্তুকে বোঝানো হয়েছে। গ্রামাঞ্চলের জঙ্গলে এ প্রাণীটি দেখা যায়। গানটিতে আমাদের দেশের গরিব চাষিরা কীভাবে শোষিত হয় তা রূপক অর্থে তুলে ধরা হয়েছে। আমাদের যারা খাদ্যের জোগানদাতা, সেই কৃষক সারা বছর এক বেলা-আধবেলা খেয়ে কোনোমতে বেঁচে থাকে। ইতোমধ্যে আমরা দরিদ্র দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে এসেছি। প্রবেশ করতে যাচ্ছি মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায়। কিন্তু এ অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় যাদের অবদান সবচেয়ে বেশি, সেই চাষিদের ভাগ্যের কি খুব এটা হেরফের হয়েছে?

প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর ওই প্রতিবেদনটি অত্যন্ত বস্তুনিষ্ঠ সন্দেহ নেই। প্রতিদিন যারা থলে হাতে বাজারে যায়, তাদের উল্লিখিত প্রতিবেদনের গূঢ়তা সম্পর্কে ব্যাখ্যা করে বলার দরকার পড়ে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রতিটি কৃষিপণ্য যে দামে শহর-বন্দর-গঞ্জের বাজারে বিক্রি হচ্ছে, তা স্পর্শ করতে ক্রেতাকে পকেটের টাকাকে মই বানিয়ে সে উচ্চতায় পৌঁছাতে হচ্ছে। প্রতিবেদনটির বিশেষত্ব হলো, তাতে প্রতিটি পণ্যের উৎপাদন খরচ ও বাজারে বিক্রির দাম এমনভাবে তুলে ধরা হয়েছে, যাতে মাঝখানের শুভংকরের ফাঁকিটি খালি চোখেই দৃষ্টিগোচর হয়। প্রতিবেদনের বিস্তারিত এখানে পুনরুল্লেখ অপ্রয়োজনীয়। তবু দুয়েকটি উপস্থাপন করছি বিষয়টি অনুধাবনে সহৃদয় পাঠকবর্গের সুবিধা হবে ভেবে। যেমন পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ কেজিপ্রতি ৩৩ টাকা ৪ পয়সা। আর বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়। রসুনের উৎপাদন ব্যয় ৫০ টাকা ৫২ পয়সা, বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা কেজি। সরকারের সংস্থা কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের হিসাবমতে, গত এক বছরে দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২০০ শতাংশ অর্থাৎ দ্বিগুণ। আর রসুনের (দেশি) বড়েছে ৯১ দশমিক ৬৭ শতাংশ এবং আমদানিকৃত রসুনের দাম বেড়েছে ৬৫ দশমিক ৫২ শতাংশ। অথচ গত বছর এ দুটি পণ্যের দাম ছিল যথাক্রমে ৪০-৪৫ ও ৭০-৮০ টাকা। আদার দাম গত বছর ছিল ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি।

এখন শীত মৌসুম। আমাদের দেশে এ মৌসু্ম শাকসবজির জন্য প্রসিদ্ধ। কিন্তু ভোক্তা এখন সবজির বাজারে গেলে এ পৌষের প্রচণ্ড শীতেও শরীরে তীব্র গরম অনুভব করবেন। ৫০-৬০ টাকার নিচে কোনো সবজিতে হাতই দিতে পারবেন না। লাউ, যে সবজিটি এ মৌসুমে আমাদের দেশের মানুষের কাছে এক পরম উপাদেয় খাবার, ১০০ টাকার নিচে আপনি তাকে ছুঁতেও পারবেন না। নিত্যপণ্যের এ ‘মূল্যসন্ত্রাসে’র কাছে ক্রেতাসাধারণ অসহায়। কিছু অর্থলোভী মানুষের সৃষ্ট এ দুর্যোগ থেকে তাদের রক্ষার যেন কেউ নেই। অথচ এসব বিষয় দেখভাল করার জন্য সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তি ও সংস্থা রয়েছে। কিন্তু তারা যেন কুম্ভকর্ণের সার্থক উত্তরপুরুষ। এত হইচই, এত সমালোচনা, কিন্তু তাদের নিদ্রাভঙ্গ হয় না! আড়মোড়া ভেঙে যদিওবা কখনও জেগে ওঠেন, এমনসব কথা বলেন যে বিস্ময়ে হতভম্ব হতে হয়। এই তো কিছুদিন আগে হাঁস-মুরগির ডিম উচ্চলম্ফ দিয়েছিল। আমি নিশ্চিত এমন লাফ যদি আমাদের অ্যাথলেটরা বিশ্ব অলিম্পিকে দিতে পারত, নির্ঘাত স্বর্ণপদক করায়ত্ত হতো। তখন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হলো, আমদানি করে ডিমের এ লাফালাফি বন্ধ করা হবে। শুধু ডিমই নয়, পেঁয়াজ-রসুন, আদা-হলুদ, তেল-ডাল যখন যেটার দাম বাড়ে, বলা হয় আমদানি করে মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা হবে।

অবস্থাটা এমন যে, আমদানি এখন দ্রব্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণের ধন্বন্তরির রূপ লাভ করেছে! আবার মূল্যবৃদ্ধির দায়ভার চাপানো হয় ‘সিন্ডিকেট’ নামে মনুষ্যসৃষ্ট এক অদৃশ্য শক্তির ওপর। এটি এখন বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ দায়িত্বশীলদের মুখরক্ষার বর্ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবচেয়ে বিস্ময়কর হলো, তারা সিন্ডিকেটকে দায়ী করলেও এর বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেন না। এর কারণ আমজনতার অজানা। প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর প্রতিবেদনে কৃষিপণ্যের উৎপাদন খরচ ও খুচরা মূল্যের মধ্যে যে আসমান-জমিন ফারাকের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে, তার পেছনেও রয়েছে সিন্ডিকেট। মহাজন, ফড়িয়া আর মজুদদারের সম্মিলিত কারসাজিতেই এ অরাজক অবস্থা। অথচ এর অবসানের কোনো উদ্যোগ নেই! বাণিজ্যমন্ত্রী মহোদয় তো একবার বলেই বসলেন, সিন্ডিকেটের কারণেই পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। তার এ সরল স্বীকারোক্তিকে শ্রদ্ধা না জানিয়ে উপায় নেই। তবে জনগণ মন্ত্রীর কাছ থেকে অসহায় স্বীকারোক্তি নয়, অরাজকতা নিরসনে দৃঢ় পদক্ষেপ আশা করে। আরেকটি বিষয় লক্ষ করা গেছে। কোনো দ্রব্যের দাম বেড়ে গেলেই বাণিজ্যমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে পণ্যের নতুন মূল্য নির্ধারণ করে দেন, কমানোর বা পূর্বাবস্থায় রাখার জন্য চাপ দেন না। এখানে তিনি কার স্বার্থ দেখেনÑ জনগণের, না ব্যবসায়ীদের?

কথা শুরু করেছিলাম কৃষিপণ্যের দাম নিয়ে। উৎপাদন এবং ভোক্তা পর্যায়ে দামের যে আকাশপাতাল ব্যবধান এর মাঝখানে রয়েছে মধ্যস্বত্বভোগী চক্র। এ শ্রেণিটিই নানা কারসাজিতে দেশে উৎপাদিত কৃষিপণ্যের দাম উপগ্রহের মতো মহাকাশে নিক্ষেপ করে থাকে। বিষয়টি ওপেন সিক্রেট হলেও এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার কেউ আছে, এমনটি মনে হয় না। তার ওপরে রয়েছে উৎপাদিত পণ্য গ্রাম থেকে শহরে আসার পথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্য ও পরিবহন শ্রমিকদের চাঁদাবাজি। ফলে যে হাঁসেরা দেশের ক্ষেতখামারে ফসল নামের ডিমটি পাড়ছে, তা খেয়ে ফেলছে সিন্ডিকেট ও এর সহযোগী বাগডাশেরা। হাঁসদের কপালে কিছুই জুটছে না। হতাশার কথা হলো, এ নিয়ে যতই বলা হোক, লেখা হোক অবস্থা থাকবে ‘যথা পূর্বং তথা পরং’। কারণ এসব যাদের দেখার কথা, তারা আছেন ‘চোখ থাকিতে অন্ধ’ হয়ে!

  • সাংবাদিক ও রাজনীতি-বিশ্লেষক
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা