সম্পাদকীয়
সম্পাদক
প্রকাশ : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৯:৫০ এএম
২০১৯ সালে প্রথমবার যুব এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে মাত্র
৫ রানের জন্য যে স্বপ্ন ভেঙে গিয়েছিল বাংলাদেশের সেই স্বপ্নের পুনর্জাগরণ ঘটল ১৭ ডিসেম্বর
২০২৩, দুবাইয়ে। ফাইনালে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ১৯৫ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে প্রথমবারের
মতো অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের শিরোপা ঘরে তুলেছেন আমাদের যুবারা। যুব টাইগারদের অনন্য
এই বিজয়ে তাদের অভিনন্দিত করার পাশাপাশি আমরা প্রত্যাশা করি, ভবিষ্যতে তারাই বিশ্ব
ক্রিকেটাঙ্গনে আলো ছড়াবেন। আমরা আশা করি, এই জয়ের প্রেরণা থেকে উজ্জীবিত হয়ে, আগামী
দিনের ক্রিকেটাররা যথাযথ অনুশীলনের মাধ্যমে পরিশীলিত হওয়ার পথ মসৃণ করবেন।
গত বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে ঘিরে ক্রিকেটপ্রেমীদের প্রত্যাশা
হোঁচট খেলেও যুবারা এশিয়া কাপ ক্রিকেটে যে অসাধারণ নৈপুণ্য প্রদর্শন করেছেন তা ক্রিকেট
ইতিহাসে নিঃসন্দেহে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের টুর্নামেন্টে অপরাজিত
চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশের যুবাদের সাফল্য নিশ্চয়ই অংশ হয়ে থাকবে ক্রিকেট ইতিহাসেরও। ২৮৩
রানের লক্ষ্য দিয়ে বাংলাদেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ২৪.৫ ওভারে মাত্র ৮৭ রানে গুঁড়িয়ে
দিয়ে বোলিং-ফিল্ডিংয়ে অসাধারণ নৈপুণ্য প্রদর্শন করেছে তাতেও আমাদের প্রত্যাশার ক্ষেত্র
আরও বিস্তৃত হয়েছে। মারুফ মৃধা, ইকবাল হোসেন ও শেখ পারভেজের বোলিংয়ের তোপের মুখে বিধ্বস্ত
হয়ে পড়েন সংযুক্ত আরব আমিরাতের ব্যাটাররা। টসে জিতে ফিল্ডিং নেন আরব আমিরাতের অধিনায়ক
আয়ান আফজাল খান। আমিরাতের বোলাররা বাংলাদেশের ব্যাটারদের প্রাথমিক পর্যায়ে কিছুটা চেপে
ধরলেও শেষাবধি বাংলাদেশের ব্যাটাররা ক্রিজে দাঁড়িয়ে দাপটে ব্যাট চালিয়ে এই সত্যই ফের
তুলে ধরলেন ক্রিকেট খেলা পূর্ণাঙ্গ টিমওয়ার্ক। বাংলাদেশের যুবাদের মধ্যে আশিকুর রহমান
শিবলির সেঞ্চুরি একই সঙ্গে চৌধুরী মোহাম্মদ রিজওয়ান ও আরিফুল ইসলামের জোড়া হাফ সেঞ্চুরি
সমৃদ্ধ রানের ভিত গড়ে দেয়। নৈপুণ্য দেখা গেছে আমিরাতের ব্যাটারদের ব্যাটের আঘাতে গণ্ডিবদ্ধ
সীমার মধ্যে বল আটকে দিয়ে ফিল্ডিংয়েও।
গত বিশ্বকাপে জাতীয় ক্রিকেট দলটি নিয়ে আমাদের প্রত্যাশার খতিয়ান অনেক
বিস্তৃত ছিল। কিন্তু ক্রিকেটাররা সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি। তবে আমরা মনে করি,
তাতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই, বরং অধিকতর অনুশীলনের মাধ্যমে পরিশীলিত হওয়ার নিরন্তর প্রয়াস
জোরদার করা জরুরি। তর্কাতীতভাবেই বলা যায়, ক্রিকেট বাংলাদেশকে বিশ্বদরবারে ভিন্নমাত্রায়
যেমন পরিচিত করেছে তেমনি বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনে বাঙালি জাতিকেও করেছে গর্বিত। তবে
এটুকুতেই পরিতৃপ্তির ঢেঁকুর তোলার কিংবা থেমে থাকার কোনো অবকাশ নেই। আমরা মনে করি,
ঘরোয়া ক্রিকেট আসরের পরিসর বিস্তৃত করার পাশাপাশি নানা আঙ্গিকে ক্রিকেট নিয়ে গবেষণা
ও পরিচর্যার বিষয়ে অধিকতর গুরুত্বারোপ করা জরুরি। একটা দল সব সময় ভালো খেলবে কিংবা
পারদর্শিতা দেখাবে এমন চিন্তা অমূলক বলেও আমরা মনে করি। বরং আমরা মনে করি, প্রতিটি
ব্যর্থতার ক্ষেত্র চিহ্নিত করে সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছার জন্য উপযুক্ত পরিকল্পনা
গ্রহণ বাঞ্ছনীয়। ক্রিকেট অত্যন্ত শান্ত মাথায় খেলতে হয়, এমন কথার প্রচলন ক্রিকেটের
সেই আদিতেই শোনা গেছে। একই সঙ্গে এ-ও শোনা গেছে, ফুটবলের বিপরীত খেলা তো বটেই ক্রিকেট
এক কথায় সম্পূর্ণ ভিন্ন মেজাজের একটি খেলা।
বিজয়ের মাসে বাংলাদেশের যুবারা যুব এশিয়া কাপের ফাইনালে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন
হওয়ায় আমরা আরও বেশি গৌরবান্বিত ও পুলকিতবোধ করছি। খেলা এবং খেলার বিজয় একটি দেশের
সুপরিচিতির জন্য অন্যতম সহায়ক এবং দেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরিতেও তা ব্যাপক ভূমিকা
রাখে। দেশপ্রেম, নৈতিক মূল্যবোধ, অঙ্গীকার এবং যথাযথ প্রত্যয় যেকোনো কাউকে তার গন্তব্যে
পৌঁছাতে পারে, আমরা এ-ও বিশ্বাস করি। বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটাররাও সমানভাবেই দ্যুতি
ছড়াচ্ছেন। এ-ও আমাদের প্রত্যাশা ও গৌরবের ক্ষেত্র বিস্তৃত করেছে। দলগত সব খেলারই সাফল্য
নির্ভর করে টিম স্পিরিটের ওপর। ক্রিকেটও তা-ই। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিংÑ এই তিন ক্ষেত্রে
ভালো করতে পারলেই সাফল্য হাতের মুঠোয় ধরা দেয়। আমাদের সম্ভাবনা কোনো ক্ষেত্রে কম নয়।
বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে অনেক তারকা ক্রিকেটার ইতোমধ্যে বিশ্বতারকাদের কাতারে শুধু
নাম লেখাননি, হয়েছেন সেরাও। ভবিষ্যতে এই তালিকা আরও দীর্ঘ করার পাশাপাশি গৌরবের মুকুট
ছিনিয়ে আনা মোটেও দুরূহ নয় বলেও আমরা বিশ্বাস করি। আমরা গুরুত্বের সঙ্গে এ-ও স্মরণ
করিয়ে দিতে চাই, ক্রিকেট তো বটেই ক্রীড়াঙ্গনের কোনো পর্যায়েই যাতে কোনো রকম রাজনৈতিক
দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন না ঘটে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্মোহ ও দায়িত্বশীলতার
পরিচয় দিতে হবে।