× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বিজয়ের বায়ান্ন বছরে আমাদের আশাবাদ

কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ

প্রকাশ : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ০০:২৮ এএম

আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ১১:০০ এএম

বিজয়ের বায়ান্ন বছরে আমাদের আশাবাদ

১৬ ডিসেম্বর ২০২৩। বাংলাদেশের ৫৩তম বিজয় দিবস। এই দিনে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা এবং সব মুক্তিযোদ্ধাকে। আরও স্মরণ করি যারা ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে সব অধিকার-স্বাধিকার ও স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্মদান করেছেন বা ত্যাগ-তিতিক্ষার মাধ্যমে অবদান রেখেছেন, তাদের সবাইকে। বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শী নেতৃত্বে তাদের সবার নানাভাবে বিশেষ অবদানের জন্য বাংলাদেশ স্বাধীন হয়, দখলদারমুক্ত হয়।

মুক্তিযুদ্ধের সময় বিধ্বস্ত অর্থনীতি এবং সমাজ পুনর্গঠন প্রক্রিয়া বঙ্গবন্ধু শুরু করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অনুসরণে। মানবকেন্দ্রিকতাকে সামনে রেখেÑ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্প, নারী, শিশু উন্নয়নসহ সব খাতেই মানুষ ও সমাজের অগ্রগতির দিকে তিনি নজর দেন। চক্রান্তকারীরা নির্মমভাবে হত্যা করার আগপর্যন্ত যে সাড়ে তিন বছর সময় তিনি পেয়েছিলেন সেই সময়েই তিনি দেশের আর্থসামাজিক অগ্রগতির একটি ভিত তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর তিরোধানের পর আর্থসামাজিক উন্নয়নে মানবকেন্দ্রিকতা থেকে পুঁজিকেন্দ্রিকতায় রূপান্তর প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। সেই ধারাবাহিকতায় সমাজতন্ত্রের, এমনকি ন্যায়বিচারের বিষয় সংবিধানে থাকলেও দেশ বিকাশের বাস্তব ধারা থেকে তা নির্বাসিত হয়ে যায়। পুঁজিবাদের বিস্তারে প্রচেষ্টা চললেও ১৯৮০ ও ১৯৯০-এর দশকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সীমিত থেকে যায়। ১৯৮০-এর দশককে হারিয়ে যাওয়া দশক হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়ে থাকে। উন্নয়ন বাজেটের পুরোটাই ওই দশকজুড়ে সাধারণত বৈদেশিক সহায়তানির্ভর ছিল এবং জাতীয় উৎপাদনে গড় বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল মাত্র ৩ দশমিক ৮। ১৯৯০-এর দশকে বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রথমার্ধে ৪ দশমিক ২ শতাংশ এবং দ্বিতীয়ার্ধে ৫ দশমিক ১ শতাংশ। ২০০০-এর দশকে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫ দশমিক ৮ শতাংশ, কিন্তু ধারাবাহিকতা ছিল না, ওঠানামা করেছে। অবশ্যই ওই দশকগুলোতে বিভিন্ন আর্থসামাজিক সূচকে কিছু উন্নতি হয়েছে, তবে দেশ নিম্ন আয়ের বেড়াজালে আটকে থেকে যায় এবং এগিয়ে চলার ক্ষেত্রে তেমন গতি সৃষ্টি হয়নি, যার ভিত্তিতে উল্লেখযোগ্য কোনো লক্ষ্যের নিশানা নির্ধারণ করে সে পথে অগ্রসর হওয়া যেতে পারে।

২০১০ সাল থেকে দেশে এক অভূতপূর্ব উন্নয়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়। এর একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলোÑ জাতীয় উৎপাদনে বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হারে ধারাবাহিকভাবে উন্নতি। প্রথম পাঁচ বছর এই হার ছিল ৬ শতাংশের ওপর, পরবর্তী তিন বছর ৭ শতাংশের ওপর এবং ২০১৮-১৯ সালে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশে উন্নীত হয়। এই ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়ে ২০২০ সালের গোড়ার দিকে আবির্ভূত কোভিড-১৯ মহামারির কারণে, যা আরও জটিল হয় ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে আরম্ভ হওয়া ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ।

কোভিড-১৯ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ যে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে তা সবারই কম-বেশি জানা বলে আমি মনে করি। কোভিড-১৯ ও ইউক্রেন যুদ্ধের সম্মিলিত অভিঘাত থেকে উত্তরণ প্রক্রিয়া বাংলাদেশে ভালোভাবে শুরু হয়। ২০২২-২৩ সালে জাতীয় উৎপাদনে প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশের ওপর হলেও ২০২৩-২৪ সালের সর্বশেষ প্রাক্কলিত হার ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। উল্লেখ্য দেশে আর্থসামাজিক সহনশীলতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে, বিশেষ করে বিগত এক যুগে, উল্লেখযোগ্য সংযোজনের মধ্যে রয়েছে কৃষি খাতে স্থিতিশীল অগ্রগতি, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক বিকাশ, অবকাঠামোগত উল্লম্ফন যথাÑ পদ্মা সেতুসহ সারা দেশে উন্নতমানের সড়ক নেটওয়ার্ক, ঢাকায় মেট্রোরেল, চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীতে তলদেশ টানেল, দেশের সর্বত্র বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং দেশবাসীর মধ্যে ব্যাপকভাবে উন্নয়নমনস্কতা ও অনুশীলনের বিকাশ। এই বাস্তবতায় সময় সময় যেসব সমস্যা দেখা দিতে পারে এবং দিয়ে থাকে সেগুলো অতিক্রম করে এগিয়ে চলা সহজতর হচ্ছে।

বর্তমানে বাংলাদেশ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সম্মুখীন। এগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার তহবিলে অধোগমন এবং টাকার অবমূল্যায়ন, ব্যাংকিং খাতে অস্থিরতা এবং খেলাপি ঋণের উচ্চহার ইত্যাদি। গৃহীত কোনো পদক্ষেপের ফলে কোনো খাতে সুফল পাওয়া গেলেও অন্য কোনো খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফলতে পারে। উল্লেখ করা যায় যে প্রশাসনিক ব্যবস্থার মাধ্যমে আমদানি কমানোর ফলে দেশের চলতি হিসাবে বেশ উন্নতি হয় তবে উন্নয়ন আমদানি সঙ্কুচিত হয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন উৎপাদন খাতে এবং দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) অনাকাঙ্ক্ষিত বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। তাই সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন খাতের বাস্তবতা যথাযথভাবে বিশ্লেষণ করে পদক্ষেপগুলো এমনভাবে বিন্যাস করা উচিত যাতে সার্বিক ফলাফল ইতিবাচক হয় এবং উন্নয়ন পথপরিক্রমণ ভবিষ্যতে আরও গতিশীল হয়।

ইতোমধ্যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। যেমন নোট ছাপানো বন্ধ করা হয়েছে, ঋণের ক্ষেত্রে সুদের হার বৃদ্ধি, টাকার বিনিময়হারে সমন্বয় ইত্যাদি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে খানিকটা হলেও সুফল পরিলক্ষিত হচ্ছে। যেমন মূল্যস্ফীতি একটু কমেছে। সার্বিক মূল্যস্ফীতি অক্টোবর (২০২৩) মাসে ছিল ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ, নভেম্বরে কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৪৯ শতাংশে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি একই সময়ে ১২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ১০ দশমিক ৭৬ শতাংশে নেমেছে। এই মূল্যস্ফীতিও অনেক বেশি, তবে তা হ্রাসের ধারায় যে এসেছে সেটা ইতিবাচকভাবেই দেখতে হবে। যাই হোক, মূল সমস্যাগুলো চিহ্নিত আছে সরকারিভাবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে এবং অন্যান্য ক্ষেত্রেও আশা করা যায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ঘোষিত তারিখ অনুযায়ী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর তিন সপ্তাহ বাকি। নির্বাচন সামনে রেখে দেশে এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতি বিরাজমান। তবে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে। সে রকম হলেই ভালো। নির্বাচনের পর সমস্যাগুলোর সমাধানে নতুন সরকারকে প্রচেষ্টা জোরদার করতে হবে। তবে বাংলাদেশে অনেক ক্ষেত্রে সমস্যার উদ্ভব ঘটে এবং বিদ্যমান সমস্যা আরও গভীর হয় যে একটি বিশেষ কারণে তা হলো বিভিন্ন খাতে দুষ্টচক্রের (তথাকথিত সিন্ডিকেট) উপস্থিতি ও দৌরাত্ম্য। এই দুষ্টচক্র ভাঙতে পারলে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করা সহজতর হবে, কেননা তখন গৃহীত নীতি ও কর্মসূচির সঠিক বাস্তবায়ন সম্ভব হবে এবং প্রতিষ্ঠানগুলোও দায়িত্ব পালনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে। ধারণা করা যায়, এই প্রক্রিয়ায় সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিন্যাস ও চলমানতার লক্ষ্য অর্জনে সাবলীল হবে এবং সুসংহত ও ত্বরান্বিত ধারায় দেশের এগিয়ে চলা সম্ভব হবে নির্ধারিত লক্ষ্যগুলোর পানে : যথা ২০৩০ সাল নাগাদ টেকসই উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন, ২০৩১ সালে উচ্চ মাধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়া এবং ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত স্মার্ট কল্যাণ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ। বিজয়ের ৫২ বছর পুর্তিতে এই আশাবাদ ব্যক্ত করতে চাই।

সবার প্রতি রইল ৫৩তম বিজয় দিবসের অশেষ শুভেচ্ছা।


লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, সমাজচিন্তক, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ এবং স্বাধীনতা পুরস্কার ও একুশে পদকে ভূষিত।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা