× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

জননিরাপত্তা ও নির্বাচন

সহিংসতা গণতান্ত্রিক রাজনীতির ভাষা নয়

মোহাম্মদ আলী শিকদার

প্রকাশ : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ১০:১৩ এএম

মোহাম্মদ আলী শিকদার

মোহাম্মদ আলী শিকদার

জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন সম্ভব নয় এবং এমন আন্দোলন কখনও জনসমর্থনও পায় না। রাজনৈতিক কর্মসূচির মাধ্যমে রাজনৈতিক দল তাদের বক্তব্য, অবস্থান এবং কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিকতা জনগণ বা ভোটারকে জানানোর চেষ্টা করে। তবে রাজনৈতিক কর্মসূচি সহিংসতার পথে এগুলে তা জনগণকে সম্পৃক্ত করার বদলে আরও রাজনীতিবিমুখ করে তোলে। দেশের সিংহভাগ মানুষ শান্তিপ্রিয়। শান্তিপ্রিয় বলেই তাদের সহনশীলতা অনেক বেশি। যেকোনো সংকটময় পরিস্থিতিতে তারা সমন্বয়ের মাধ্যমে টিকে থাকে। অর্থনৈতিক ও বৈশ্বিক সংকটের ক্ষেত্রে এ সহনশীলতা থাকলেও রাজনৈতিক সহিংসতা কিংবা সামাজিক অস্থিরতা সাধারণ মানুষ মেনে নেয় না। এজন্য যারা সহিংস রাজনৈতিক পথ অনুসরণ করে, সাধারণ মানুষ তাদের সমর্থন করে না। ৭ ডিসেম্বর প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢিলেঢালা অবরোধেও অর্থনীতির নানা ক্ষতি হচ্ছে। বিএনপি, জামায়াত ও তাদের মিত্র দলগুলোর দশম দফায় ডাকা ৪৮ ঘণ্টার সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচির প্রথম দিনেও জনজীবন স্বাভাবিক ছিল। রাজধানীতে যানবাহন চলাচলও ছিল স্বাভাবিক। বিভিন্ন যানবাহনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও কর্মতৎপরতা থামাতে পারেনি।

অর্থাৎ সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচি মানুষ পরিত্যাগ করেছে। কিন্তু জীবনের ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি তো হচ্ছেই। একই দিন একই পত্রিকায় ভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মানুষের মনে বিরাজ করছে আতঙ্ক। এ স্তম্ভেই নিকট অতীতে লিখেছিলাম, দেশের সিংহভাগ মানুষ শান্তিপ্রিয় এবং তাদের স্ববিরোধী রাজনীতিকরা দুর্বল শ্রেণির মনে করেন। কিন্তু তাদের মনে হবে শান্তিপ্রিয় বলেই তাদের সহনশীলতা অনেক বেশি। যারা সহিংস রাজনৈতিক পথ অনুসরণ করে, সাধারণ মানুষ তাদের সমর্থন করে না। এবারও তা-ই ঘটেছে। তার পরও জননিরাপত্তা নিয়ে বড় শঙ্কা রয়ে গেছে। আতঙ্ক রয়ে গেছে আগুনে। এ ব্যাপারে সরকার ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার মুখ্যত দায়দায়িত্ব যাদের অর্থাৎ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের আইনানুগ আরও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ৪০ দিনে ২৫৫ যানবাহনে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ৫ ডিসেম্বর রাত ১২টা থেকে ৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ১৯ ঘণ্টায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ১০টি যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়। এতে ক্ষতি হয়েছে আটটি বাস ও দুটি ট্রাকের। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, রাজধানীসহ দেশজুড়ে সতর্ক পাহারায় ছিলেন পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও আনসার সদস্যরা। অবরোধ চলার সময় ঢাকায় ২০ প্লাটুন ও সারা দেশে ১৫৪ প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন ছিলেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে রাজধানীতে ১৩০টিসহ সারা দেশে মোতায়েন ছিল র‍্যাবের ৪২২টি টইল দল। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ছিল কঠোর পুলিশি নিরাপত্তা। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে দূরপাল্লার গণপরিবহন ও পণ্যবাহী পরিবহনকে এসকর্ট দিয়ে নিরাপদে গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দিয়েছে র‌্যাব। নাশকতা ও সহিংসতা প্রতিরোধে বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশনসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে ছিল গোয়েন্দা নজরদারি। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নজরদারির মধ্যেও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে যানবাহনে। তাতে প্রতীয়মান হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থান নিলেও তদারকি এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে ঘাটতি ছিল এবং আছে।

বিগত কয়েক দিনে রাজধানীর ব্যস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কে যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা আরও ঘটেছে। এ ক্ষেত্রে সুষ্ঠু তদারকি ও পর্যবেক্ষণের অভাব অনেকাংশে দায়ী। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সতর্ক অবস্থানই পর্যাপ্ত নয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সড়কে বা পয়েন্টে অবস্থান নিতে হয়। বাদ রয়ে যায় অলিগলি বা পাড়ামহল্লার নানা অংশ। দুর্বৃত্তরা মূলত এ ফাঁকা অংশগুলোতেই অবস্থান নিয়ে থাকে। তারা সুযোগের অপেক্ষায় থাকে এবং আচমকা অগ্নিসংযোগ করে পালিয়ে যায়। ঘনবসতিপূর্ণ আমাদের দেশে পাড়ামহল্লার প্রতিটি পয়েন্টে টহল নিশ্চিত করা সম্ভব নয়, এও অসত্য নয়। আমাদের সক্ষমতার অভাবের বদলে ঘাটতিই বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায় কোনো না কোনো ক্ষেত্রে। কিন্তু যখন এই ঘাটতি থাকে তখন কৌশলের আশ্রয় নিতে হয়। আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন স্তরে ঘাটতি সত্ত্বেও নানা সময় সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছেন বাহিনীর সদস্যরা। বিশেষত প্রযুক্তির ব্যবহারে এখন খুব সহজেই অনেক কিছুর সুরাহা করা যায়। টহলের ক্ষেত্রে প্রতিটি এলাকার সিসিটিভি ক্যামেরার সমন্বয়মূলক ব্যবহার করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। প্রতিটি এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংরক্ষণ এবং তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পর্যবেক্ষণ করলে দুর্বৃত্তদের শনাক্ত করা কঠিন কিছু হবে না।

নিষেধাজ্ঞার পরও পানির বোতলে বিক্রি হচ্ছে পেট্রোল-অকটেন। পাড়ামহল্লা এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে মূল সড়কের ধারে টায়ার বা মেকানিকের দোকানের সামনে টেবিলের ওপর সারি সারি পানির বোতলে পেট্রোল-অকটেন বিক্রি করা হয়Ñএ খবরও উঠে এসেছে সংবাদমাধ্যমে। যাদের লাইসেন্স নেই বা যেসব বাইকের কাগজপত্র ঠিক নেই, সেসব বাইকের চালকরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে পেট্রোল-অকটেন এ পানির বোতলে কেনেন। কিন্তু অবরোধ-হরতালের নামে কর্মসূচি চলাকালে একটি মহল পেট্রোলবোমা কিংবা ককটেল ছুড়ে যানবাহনে আগুন লাগাচ্ছে। এভাবে পেট্রোল-অকটেন বিক্রি বন্ধ করার বিষয়ে আরও মনোযোগ বাড়ানো দরকার। বিশেষত কোনো এলাকায় যদি এভাবে খোলা জ্বালানি তেল বিক্রি হয় তাহলে নাগরিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানাতে হবে। খোলা পেট্রোল বিক্রির বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মনোযোগ আরও গভীর করা দরকার। পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। জনসংখ্যাবহুল এ দেশে সবখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সমান মনোযোগ দেওয়া সম্ভব নয়। সেজন্য পাড়ামহল্লা-আবাসিক এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে হবে। পাশাপাশি সন্দেহভাজন কাউকে দেখলে অবশ্যই পুলিশকে অবহিত করতে হবে। বিএনপি ফের অবরোাধের ডাক দিয়েছে। এমতাবস্থায় জননিরাপত্তায় মনোযোগ আরও বাড়াতে হবে।

অবরোধের ফলে জনজীবনের কর্মতৎপরতা বন্ধ হয়নি, কিন্তু অগ্নিসন্ত্রাসের আতঙ্ক রয়ে গেছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সড়কে ও পরিবহন খাতে। স্বাভাবিক দিনগুলোয় গণপরিবহন যেভাবে যাতায়াত করে, হরতাল-অবরোধের সময় সেভাবে করে না। শঙ্কা-আতঙ্কের কারণে পর্যটন খাতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এর ফলে জাতীয় আয়ে অভিঘাত লাগছে। রাজনীতিকরা এরও দায় এড়াতে পারেন না। সন্ত্রাস দমনে আইন রয়েছে। আইনের ভিত্তিতে বিচারকার্য পরিচালনা করতে হবে। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার বিকল্প নেই। প্রযুক্তির ব্যবহারে এবং তদন্ত সাপেক্ষে তাদের খুঁজে বের করতে হবে। আগেই বলেছি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রযুক্তিগত সক্ষমতাও রয়েছে এবং এখন তা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। যেসব জায়গায় যানবাহনে আগুন লাগানো হচ্ছে, সেসব এলাকা চিহ্নিত করতে হবে। যেখানে দুর্বৃত্তদের তৎপরতা বেশি সেখানে নজরদারি, টহল ও প্রযুক্তির ব্যবহারে দুর্বৃত্তদের শনাক্ত করার ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে টহল বা অভিযানের সময় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ যেন না হয় সেদিকে মনোযোগ রাখা সমভাবেই গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণ মানুষ যেন অভিযোগ করতে পারে এবং কোনো ধরনের বাধার সম্মুখীন না হয়, তা-ও নিশ্চিত করতে হবে। ঢিলেঢালা অবরোধ বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ঢিলে দেওয়ার কোনো অবকাশ নেই। বরং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সার্বক্ষণিক কৌশলগত পর্যবেক্ষণ রাখতে হবে। যেকোনো প্রাণ মূল্যবান। জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের সর্বপ্রধান দায়িত্ব।

গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে আন্দোলন অসিদ্ধ নয়। কিন্তু কোনো আন্দোলন কর্মসূচিই যাতে জনঅধিকার, নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে না দাঁড়ায় এর দায়দায়িত্ব আন্দোলনকারী রাজনৈতিক দলের নীতিনির্ধারকদেরই নিতে হবে। জনসম্পদ কিংবা রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করার মতো কদর্যতা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না

  • অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ও নিরাপত্তা-বিশ্লেষক
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা