× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ভূমি ব্যবস্থাপনা

কৃষিজমির সুরক্ষা নিশ্চিতকরণের দায়

মো. অহিদুর রহমান

প্রকাশ : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ১০:০০ এএম

মো. অহিদুর রহমান

মো. অহিদুর রহমান

বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ এখনও কৃষিনির্ভর। এ দেশের অর্থনীতি এখনও নির্ধারিত হয় কৃষির উৎপাদনের হ্রাসবৃদ্ধির ওপর। কিন্তু দিন দিন দেশের কৃষিজমি চলে যাচ্ছে অকৃষি খাতে। নতুন বসতভিটা, রাস্তাঘাট, অবকাঠামো, ইটভাটা, কলকারখানা, নগরায়ণে ভূমির অবক্ষয় হচ্ছে বেশি। ভূমি অবক্ষয় চলতে থাকলে ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশে কোনো কৃষিজমি থাকবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে খোদ সরকারি সংস্থা পরিবেশ অধিদপ্তর। সংস্থাটি বরাতে প্রকাশ প্রতি বছর বাংলাদেশে ১ শতাংশ হারে কৃষিজমি নষ্ট হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশে কোনো কৃষিজমি থাকবে না। জনসংখ্যা বাড়ছে কিন্তু বাড়ছে না জমি।

বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ঘরবাড়ি, নগরায়ণ, রাস্তাঘাট নির্মাণসহ নানা কারণে প্রতি বছর দেশের প্রায় ৮০ হাজার হেক্টর জমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে। অর্থাৎ প্রতিদিন ৭০০ হেক্টর বা প্রতি বছর শতকরা ১ ভাগ হিসেবে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ কমে যাছে। আরও কিছু সংস্থার প্রতিবেদনে কৃষিজমি হ্রাসের ভয়াবহ তথ্যটি নিশ্চিত হওয়া গেছে। জাতীয় ভূমি ব্যবহার নীতি ২০১০ এবং ‘কৃষিজমি সুরক্ষা ও ভূমি জোনিং আইন ২০১০’ অনুসারে কৃষিজমি কৃষিকাজ ছাড়া অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না। কোনো কৃষিজমি ভরাট করে বাড়িঘর, শিল্পকারখানা, ইটভাটা বা অন্য অকৃষি স্থাপনা কোনোভাবেই নির্মাণ করা যাবে না উল্লেখ করে একটি আইন আছে।

দ্বিধাহীনভাবে বলা যায়, আমাদের ভূমি ব্যবস্থাপনা কোনো সুশৃঙ্খল ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে নেই। জমি আছে বলেই স্বাধীনতার ৫২ বছরে খাদ্য উৎপাদন বাড়িয়ে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া সম্ভব হয়েছে। কৃষির এ শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে অন্যসব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন সহজতর হচ্ছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা আর অস্থিরতার মধ্যেও দেশকে অনেকটা স্বাভাবিক রাখছে কষি। সঙ্গত কারণেই কৃষিজমির সুরক্ষা জরুরি। তাই জমির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে জাতীয় ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা ও নীতিমালা জরুরি। কৃষিজমি অকৃষি কাজে ব্যবহারের প্রবণতা কঠোরভাবে রুখতে হবে। কৃষিনির্ভর বাংলাদেশে কৃষিজমির সুরক্ষা ব্যর্থ হলে টিকে থাকা কঠিন হবে। কৃষিজমির সুরক্ষা নিশ্চিতকরণের দায় বহুপক্ষের।

বঙ্গবন্ধুর কাছে অগ্রগণ্য ছিল কৃষি। কৃষক আর কৃষিজমি বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে এটিই ছিল তাঁর অন্যতম উন্নয়নদর্শন। কৃষির অবকাঠামো পুনর্নির্মাণ, উচ্চফলনশীল বীজের সরবরাহ, আধুনিক সেচযন্ত্রের আমদানি, ভর্তুকি বা বিনামূল্যে কৃষি উপকরণ সরবরাহ, কৃষকের বিরুদ্ধে ১ লাখ সার্টিফিকেট মামলা প্রত্যাহার, কৃষিঋণের ব্যবস্থা এবং কৃষকের জন্য ন্যায্যমূল্য ও রেশন সুবিধা চালুর মতো উদ্যোগগুলো শুরু করেছিলেন বঙ্গবন্ধুই। ‘কৃষি দেবে খাবার, কর্মসংস্থান’ বঙ্গবন্ধু মনে প্রাণে তা বিশ্বাস করতেন। বাংলাদেশ সব সময়ই কৃষিনির্ভর। কৃষিই আমাদের অর্থনীতির প্রাণ।

কৃষিজমি সুরক্ষায় প্রস্তাবিত আইন ও নীতিমালা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় দেশের সব ধরনের কৃষিজমি রক্ষা ও সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে একটি সুনির্দিষ্ট সর্বজনীন গ্রহণযোগ্য জাতীয় নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। নির্দিষ্ট শিল্পাঞ্চলের বাইরে কৃষিজমির ওপর যত্রতত্র ছোটবড় শিল্পকারখানা, বাণিজ্যিক পার্ক, বাগানবাড়ি নির্মাণ বন্ধে আইন প্রণয়ন ও তার সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। কৃষিজমিতে ইটভাটা নির্মাণ, বেচাকেনা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ ঘোষণা করতে হবে। কৃষিজমিতে কীট-বালাই নাশক ব্যবহারের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। জৈব চাষ পদ্ধতি ব্যবহারের জন্য কৃষককে সরকারিভাবে আরও সহযোগিতা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে এবং এ বিষয়ে কৃষককে আরও উৎসাহিত করতে হবে। হাওর, বাঁওড়, বিল, জলাশয়, জলমহালে প্রকৃত মৎস্যজীবী, নদীজীবী ও মাছ চাষিদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এগুলোয় পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।

কৃষিজমি নষ্ট করে অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ বন্ধ করতে হবে। কৃষিজমির প্রাণরক্ষায় গতিহীন, মরে যাওয়া এবং হাজামজা সব ছোট নদনদী, খাল পুনঃখননের ব্যবস্থা করতে হবে। কৃষি খাসজমি, জলমহাল বন্দোবস্তে জেলে-ভূমিহীনদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। সরকারি কৃষি খাসজমি কোনোভাবেই বিক্রি করা চলবে না। পতিত জমি কৃষিজমিতে পরিণত করতে ব্যবস্থা নিতে হবে। দ্রুতই দেশে ‘ল্যান্ড ব্যাংক’ স্থাপন করে কৃষিজমিতে যেকোনো ধরনের শিল্পকারখানা স্থাপনে নিরুৎসাহ করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আবাদি জমির অপরিকল্পিত ব্যবহার বন্ধে সরকারকে হতে হবে কঠোর। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় প্রশাসনকে শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে হবে। অপচয় হওয়া জমির বড় অংশে চাষাবাদ করা গেলে তা ভবিষ্যৎ খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে ভূমিকা রাখবে। কৃষিজমির ব্যবহার বাড়াতে জোরালো উদ্যোগের বিকল্প নেই। পাশাপাশি ফসলবিন্যাস, পরিকল্পনা অর্থাৎ বিজ্ঞানভিত্তিক চাষাবাদকেই কৃষি উৎপাদনের গতি অব্যাহত রাখার একমাত্র উপায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষিজমির অপরিকল্পিত ব্যবহার বন্ধে বারবার কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে যাচ্ছেন। এর পরও বন্ধ হচ্ছে না আবাদি জমির অপরিকল্পিত ব্যবহার।

কৃষিজমির মালিকরা আগে মূলত বর্গাচাষির হাতে চাষাবাদের ভার ছেড়ে দিতেন, তবু চাষাবাদের সঙ্গে তাদের কিছুটা হলেও সম্পৃক্ততা থাকত। কয়েক বছরে দেশের কৃষিতে নাটকীয় পরিবর্তন এসেছে। চাষের সঙ্গে জমিমালিকের সম্পর্কই থাকছে না। অপরিকল্পিত রাস্তা নির্মাণে প্রতি বছর মেট্রোপলিটন এলাকায় ৫.২৬, আরবান এলাকায় ৫.২৬, পেরি-আরবান এলাকায় ১৯.০৫ ও গ্রামীণ এলাকায় ১০ শতাংশ কৃষিজমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে। প্রতি বছর এ খাতে নষ্ট হচ্ছে মোট ৯.৬০ শতাংশ কৃষিজমি। অপরিকল্পিত ঘর নির্মাণে প্রতি বছর মেট্রোপলিটন এলাকায় ৫৯.৬৫, আরবান এলাকায় ৫৫.২৬, পেরি-আরবান এলাকায় ৫২.৩৮ ও গ্রামীণ এলাকায় ৫০ শতাংশ কৃষিজমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে। এ হিসাব অনুযায়ী প্রতি বছর এ খাতে নষ্ট হচ্ছে ৫৪.৮০ শতাংশ কৃষিজমি। অপরিকল্পিত কারখানা নির্মাণে প্রতি বছর মেট্রোপলিটন এলাকায় ৫.২৬ ও গ্রামীণ এলাকায় ২.৫ শতাংশ কৃষিজমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে। অর্থাৎ প্রতি বছর এ খাতে নষ্ট হচ্ছে ২.৬৭ শতাংশ কৃষিজমি।

মানুষ দিন দিন বাড়ছে। জমি দিন দিন কমছে। তা ছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রতি বছর কমছে ফসলের উৎপাদন। আমাদের কৃষিজমি আর কোনোভাবেই নষ্ট করা যাবে না। ফসলি জমি বাঁচাতে হবে। আমাদেরও বাঁচতে হবে।

  • পরিবেশকর্মী ও আঞ্চলিক সমন্বয়কারী, বারসিক
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা