× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

গুজবের তাওয়ায় ফের তাপ!

মোস্তফা কামাল

প্রকাশ : ২৭ নভেম্বর ২০২৩ ১৮:৩৮ পিএম

গুজবের তাওয়ায় ফের তাপ!

অধরা থেকে নিজেদের শক্তিমত্তা দেখিয়েই যাচ্ছে গুজববাজরা। সরকারের হুঙ্কার এবং মাঝেমধ্যে কিছু অ্যাকশনে তারা দমছে না। বড় জোর দম নেয়। আবার চাঙ্গা হয় বীরবিক্রমে। আজ এটা, কাল সেটা দিয়ে দেশকে এবং দেশের রাজনীতিকে ভাসিয়ে দেয় গুজবের ফানুসে। গুজব কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে ফেসবুক, ইউটিউব ও হোয়ার্টসঅ্যাপের মতো জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া। ঢোলে বাড়ির মতো দেশে নতুন করে গুজবের হাটটি জমে মার্কিন ভিসানীতি ঘোষণার পর। নির্বাচন সামনে রেখে গুজবের তাওয়ায় নতুন করে তাপ দেওয়া হচ্ছে। রটানো হচ্ছে এন্তার রসালো কিচ্ছা। 

বলার অপেক্ষা রাখে না, বেশিরভাগ গুজবই সরকারকে টার্গেট করে আবর্তিত। উদ্দেশ্য সরকারকে বিব্রত করা, দেশকে উত্তাল করা। আর তা করতে গেলে দরকার মানুষকে বিভ্রান্তিতে ফেলা। গুজবের আয়োজকরা এতে কম-বেশি সফলও হচ্ছে। সরকারের দিক থেকে এসব গুজব-অপপ্রচার শক্ত হাতে ঠেকানোর হুঙ্কার থাকলেও সাফল্য কম। এর বিপরীতে গুজববাজরা বেশ সংগঠিত, যূথবদ্ধ। তাদের শক্ত গাঁথুনি দেশে-বিদেশে দুই জায়গায়ই। টার্গেট করে ব্যক্তিগত বিষয়াদি থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজনীতি, অর্থনীতি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, দেশের চিন্তাশীল মানুষকে নিয়ে ছড়ানো হচ্ছে রগরগা কল্পকাহিনী। 

তাদের রুখতে প্রশাসনের বাইরে কাজ করছে আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন-সিআরআইর টিম। সরকারবিরোধী অপপ্রচারের বিরুদ্ধে জবাব, তথ্য এবং সরকারের উন্নয়নচিত্র জানান দিচ্ছে তারা। কিন্তু গুজবের জোয়ারদৃষ্টে তা অনেকটাই অকুলান। বিপরীতে গুজব রটনাকারীদের কাজের আওতা বিস্তর-ব্যাপক। রাজনীতি, ধর্ম, কূটনীতি, অর্থনীতি এমনকি শিক্ষা-খেলাধুলা সেক্টরও বাদ দেয় না তারা। পদ্মা সেতুতে মানুষের কল্লার জন্য ছেলে ধরা সন্দেহে বেশ কজনকে গণপিটুনিতে হত্যা, ব্যাংক রিজার্ভ শেষ, বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার মতো হয়ে গেছে থেকে শুরু করে সরকার পতনের দিন-তারিখ পর্যন্ত বাজারজাত করে ছাড়ে তারা। দিন শেষে তারা ব্যর্থ হলেও সময়ে সময়ে সফল হয়েছে। মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পেরেছে। দেশে অস্থিরতা তৈরি করতে পেরেছে। আবার তাদের গুজব ক্যারিশমায় মুগ্ধ ও সাময়িক পুলকিত বিরোধী দলও কিছুদিন পুলক পেয়েছে। পরে মাঠে মার খেয়েছে। 

হাওয়ায় ভাসাতে গিয়ে তাদের শেষতক তলিয়ে দিয়েছে গুজববাজরা। তলের খবরকেও তারা আরও তলিয়ে দিয়েছে। ওপরে ওপরে ঘটনার ঘনঘটার মাঝে দেশের ভেতর ও বাইরের কিছু ইউটিউবার নানা গরম কথায় মুখরোচক ব্যাখ্যায় দর্শক বাড়িয়ে নিজেদের ব্যবসা লুটেছে কয়েক দিন। আন্দোলনেরও সাড়ে সর্বনাশ করেছে। অক্টোবরে দেশ নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়বে বলে কী বিভ্রান্তই না করা হয়েছে মানুষকে। এর জেরে আন্দোলনের স্পিড এবং স্পিরিট দুই-ই হারিয়েছে। একদিকে রাজনৈতিক কর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আক্ষরিক অর্থেই মার খেলেন, আরেক দিকে ইউটিউবারদের দূরে বসে ঘি মধু খেয়ে নিরাপদ জীবনযাপন নিশ্চিত হলো। 

মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস দিল্লি গেছেন মর্মে উত্তেজনায় কত কনটেন্ট বানিয়ে ছেড়েছে ইউটিউবার ও ফেসবুকার সম্প্রদায়ের একাংশ। এরা কার পক্ষে বা বিপক্ষে বোঝা মুশকিল। বিভক্তি তৈরি ও টিকিয়ে রাখায় কামিয়াবি এ সম্প্রদায়টি অবশ্য আওয়ামী লীগ-বিএনপি ছাড়া আর কাউকে দেখে না। এর মাঝে চরম দৃষ্টান্ত রেখেছেন ভারতীয় সাংবাদিক চন্দন নন্দী। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহে সরকার পতন, স্যাংশন, ভিসা বাতিলের তথ্য দিয়ে গেছেন একের পর এক, তার সবশেষ ঘোষণা ছিলÑ ৩ নভেম্বর শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছাড়ছেন। এর প্রচার-প্রসারে কোমর বেঁধে নেমেছিল বিএনপি। চন্দন নন্দীতে অতি উল্লসিত হয়ে পরে বুঝতে বুঝতেই তারা কেবল চোখে অন্ধকার দেখেছে। তারা বুঝে উঠতে পারেননি চন্দন নন্দী জার্নালিজম করেননি, করেছেন সেনসেশনালিজম। 

তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ প্রবাহ মানুষের পারস্পরিক যোগাযোগ সহজ করেছে। এখন পৃথিবীর এক প্রান্তের মানুষ অন্য প্রান্তের চেনাজানা আপনজন বা অপরিচিত কোনো মানুষের সঙ্গে ভাবের আদান-প্রদান ও তথ্যের বিনিময় করতে পারে খুব সহজেই। প্রযুক্তির এই উন্নয়ন মানুষের জীবনকে সহজ ও সাবলীল করেছে। গোটা মানবজাতিকে গতিশীল করেছে। কিন্তু একই সঙ্গে তথ্যের অবাধ প্রবাহ মানুষকে বিভ্রান্তও করছে। একটি শ্রেণি স্বার্থ হাসিলের জন্য সমাজে ভুল ও মিথ্যা কিংবা আংশিক মিথ্যা ছড়িয়ে দিচ্ছে। সমাজে ভয়ভীতি ও আতঙ্কের সৃষ্টি করছে। 

পজিশন-অপজিশন কারও জন্যই গুজব শুভ নয়। এতে সাময়িক কোনো পক্ষের পুলক মিলতে পারে, কিন্তু আখেরে তা বুমেরাং হয়। বড় ক্ষতিটা হয় দেশ ও সমাজের। এ কারণেই সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার ও অপপ্রচার রুখতে শক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি উঠেছে বহু দিন আগে থেকেই। কিছু কিছু সোশ্যাল মিডিয়া ও অনলাইন প্ল্যাটফর্ম পরিণত হয়েছে গুজবনির্ভর অপপ্রচারের আখড়ায়। একের পর এক কল্পকাহিনী জন্ম দিয়ে তা ভাইরাল করছে দেশ-বিদেশে। নামে-বেনামে তাদের ইউটিউব চ্যানেল, আইপি টিভি, অনলাইন পোর্টালের ছড়াছড়ি। পেজ, গ্রুপ, ইভেন্ট খুলে যে যার ইচ্ছামতো মনের মাধুরী মিশিয়ে নানা অপপ্রচারে লেগে আছে। তথাকথিত ব্রেকিং নিউজের নামে সকাল-বিকাল নানা গুজবের ভিডিও বানানো হচ্ছে। হঠাৎ আবিষ্কৃত এসব গায়েবি খবর তৈরি করে নিমেষেই ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এসব অপপ্রচার সরল ও নিরীহ জনগণকে প্রভাবিত করছে। সরল মানুষ না বুঝে তাদের বিশ্বাস করছে। এসবের নেপথ্যে যে বড় ধরনের ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম জড়িত তা তাদের বোধগম্য নয়। অনেকের মধ্যে নিজের বিশ্বাস প্রচারের প্রবণতা দেখা যায়, যারা প্রচারিত কোনো সংবাদ নিজের মত, মতবাদ ও দৃষ্টিভঙ্গির অনুকূলে হলে তা যাচাইয়ের প্রয়োজন বোধ করে না। পাওয়ামাত্রই প্রচার শুরু করে। সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত অনেক সংবাদের সঙ্গে সামাজিক স্বার্থ জড়িত থাকে। এসব সুযোগই নিচ্ছে গুজববাজরা।

শক্ত হাতে না ধরলে এ চক্রকে রোখা কঠিন। ভুয়া আইডি এবং বিদেশি প্রতিষ্ঠান ও বিদেশ থেকে পরিচালিত হওয়ার কারণে সোশ্যাল মিডিয়ায় সংঘটিত অপরাধ দমনে আমাদের স্থানীয় আইন সেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা সম্ভব হয় না। বাস্তবতা বুঝেই তারা সামনে আগোয়ান। সাইবারজগতের বিস্তার দ্রুতগতিতে বাড়ছে। দিন যত যাচ্ছে কোটি কোটি মানুষ এর সঙ্গে সংযুক্ত হচ্ছে। বাংলাদেশে মোবাইল প্রযুক্তির ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। ইন্টারনেট সুবিধা সহজীকরণ হয়েছে। এর ভালো দিকের সঙ্গে মন্দ দিক বেশি যোগ হয়ে গেছে। এমন সম্ভাবনাকে নিয়ে আসা হয়েছে শঙ্কার বিষয়ে। সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকায় থাকা তথ্যপ্রযুক্তি যথেষ্ট এগিয়ে রয়েছে। নতুন নতুন প্রযুক্তি এখন সবার হাতে, মোবাইল, ইন্টারনেটÑ সবকিছুই। তথ্যপ্রযুক্তি সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে সাইবার ক্রাইম কিংবা প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধও বাড়ছে। 

তাদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার। গুজব ছড়ানোর পেছনে প্রধান উদ্দেশ্য মানুষকে বিভ্রান্ত করা, আতঙ্কিত করা। আবার এ কথাও সত্য, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ও মিথ্যাচার অথবা অপরাধ শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়, এটা বৈশ্বিক সমস্যা। বিশ্বের অনেক দেশকেও এই সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। কেবল আজকে নয়, ভবিষ্যতেও সাইবারজগতের কী ধরনের বিস্তার ঘটবে, তা এখনই ভাবতে হবে। এ ভাবনা ভর করেছে উন্নত বিশ্বেও। বিভিন্ন দেশে এরই মধ্যে সার্ভিস প্রোভাইডার হিসেবে ইউটিউব-ফেসবুক, টুইটারের মতো সোশ্যাল মিডিয়াকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। তারা রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আসায় গুজব ও সামাজিক অস্থিরতার লাগাম টানা সম্ভব হচ্ছে। যে নেতিবাচক সংবাদের সঙ্গে সমাজ, জাতি ও উম্মাহর স্বার্থের সম্পর্ক নেইÑ শুধু ব্যক্তিগত রাগ, ক্ষোভ ও অভিমান থেকে হয়ে থাকে, তা প্রচার করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

পর্দার আড়ালে বা কথিত তলে তলের আসল খবর তাৎক্ষণিক জানা যায় না। জানতে অনেক সময় লেগে যায়। কখনও কখনও মাস-বছর পরও সব ঘটনার নেপথ্য জানা হয় না। তলের বাইরে মানে ওপরের সব কথা বা তথ্য বুঝতেও অনেক সময় গড়িয়ে যায়। এর ফাঁকে গুজবের আজাবে কত অঘটন ও সর্বনাশ ধেয়ে আসে তার কোনো ইয়ত্তা থাকছে না। আজ এতে কেউ লাভবান, কাল আরেকজন। যোগ ফলে কেউই এ থেকে চূড়ান্ত লাভবান নয়, নিরাপদও নয়। 

লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট; ডেপুটি হেড অব নিউজ, বাংলাভিশন 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা