× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

রাজনৈতিক সংকটের ছায়ায় জনস্বাস্থ্যের সংকট

সম্পাদক

প্রকাশ : ২১ নভেম্বর ২০২৩ ১৭:২০ পিএম

রাজনৈতিক সংকটের ছায়ায় জনস্বাস্থ্যের সংকট

দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এ নিয়ে ভিন্নমত থাকার কথা নয়। চলমান রাজনৈতিক সংকটের ছায়ায় জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে ডেঙ্গুর সংক্রমণ আরও সংকট সৃষ্টি করেছে। এবার বছরের প্রায় শুরুতেই ডেঙ্গুর সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে জনস্বাস্থ্যবিদেরা আগাম সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেছিলেন। তাদের আশঙ্কা যে অমূলক ছিল না বিদ্যমান পরিস্থিতি এরই সাক্ষ্য দিচ্ছে। ২০ নভেম্বর প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৩ লাখ ছাড়িয়েছে। পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টার পরিস্থিতি বিশ্লেষণে দেখা যায়, হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ২৯১ জন এবং প্রাণহানি ঘটেছে ছয়জনের। এ নিয়ে চলতি মাসের ১৯ দিনে ডেঙ্গুতে ২০১ জনের মৃত্যুর খবরও প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর প্রতিবেদনেই রয়েছে। ঢাকার বাইরে অন্যান্য বার ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যার তুলনায় এবারের সংখ্যা অনেক বেশি। ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত এ মাসের পরিস্থিতি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ঢাকায় ১ লাখ ৫ হাজার ৫৫৩ এবং ঢাকার বাইরে ১ লাখ ৯৫ হাজার ৭২০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ তথ্য ১৯ নভেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের।

চলমান হরতাল-অবরোধে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ডেঙ্গু আক্রান্তদের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে অনেক ক্ষেত্রেই প্রতিকূলতার মুখে পড়তে হচ্ছে, এ তথ্যও সংবাদমাধ্যমেরই। আমরা বিস্মিত না হয়ে পারি না, জনস্বাস্থ্যের এত গুরুতর সংকটও রাজনৈতিক সংকটের ছায়ায় ঢেকে আছে এবং এ ব্যাপারে রাজনীতিকদের কোনো শিরঃপীড়া পরিলক্ষিত হচ্ছে না। প্রায় দুই সপ্তাহ আগে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, চলতি বছর ঢাকার বাইরে এ পর্যন্ত যত রোগীর মৃত্যু হয়েছে এর ৪০ শতাংশই ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের। আরও বিস্ময়কর হলো, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের তরফেই পারস্পরিক দোষারোপের মধ্য দিয়ে জনস্বাস্থ্যের এ সংকটের বিষয়ে দায়সারা বক্তব্য মিলছে। এ বছর ডেঙ্গুর সংক্রমণ ও মৃত্যুর যে মর্মন্তুদ বাস্তবতার মুখোমুখি দেশের মানুষ হলো, তার দায় যেন তাদের নিজেদেরইÑ দায়িত্বশীল পক্ষগুলোর দায়িত্বহীন বক্তব্যে তা-ই প্রতীয়মান হয়। নিঃসন্দেহে এমনটি অগ্রহণযোগ্য ও নিন্দনীয়। ডেঙ্গুর সংক্রমণ ক্রমাগত বাড়তে থাকলেও তা প্রতিরোধে যে ব্যবস্থা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর তরফে দৃশ্যমান হয়েছে, তা ‘টোটকা দাওয়াই’র নামান্তর বললে অত্যুক্তি হয় না। আমরা জানি, বিশ্বের সবচেয়ে বসবাস-অনুপযোগী শহর জনঘনত্বের দিক থেকে ঢাকা প্রথম দিকে রয়েছে। এডিস মশার বংশবিস্তারের নানা রকম আদর্শ পরিবেশও এখানে বরাবরই বিদ্যমান। একই সঙ্গে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন শহর কিংবা উপজেলায়ও এবার ডেঙ্গুর যে সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে, তাতে দায়িত্বশীলদের ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটির বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার কোনোই অবকাশ নেই। তারা যতই বলুন, জনসচেতনতায় ঘাটতি রয়েছে; কিন্তু জনগণের ওপর দায় চাপিয়ে তাদের পার পাওয়ার অবকাশ আছে কতটা, নিশ্চয়ই এ প্রশ্নের জবাব দেওয়ার দায়ও তারা উপেক্ষা করতে পারেন না।

মশা নিধন কার্যক্রম ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা দুই ক্ষেত্রেই ব্যর্থতার কারণে বাংলাদেশ এ বছর ডেঙ্গু সংক্রমণ ও মৃত্যুর দিক থেকে বিশ্বের তৃতীয় অবস্থানে থাকার বার্তাও মিলেছে সংবাদমাধ্যমেই। ডেঙ্গু নতুন কোনো বিষয় নয়। কিন্তু ভিন্নতা শুধু এবার বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত এর সংক্রমণ ঊর্ধ্বগামী। ডেঙ্গু প্রতিরোধে কিংবা নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর দায়িত্বশীলদের তরফে বাগাড়ম্বর বই কার্যত যে কাজের কাজ কিছুই হয়নি বিদ্যমান পরিস্থিতি এরও সাক্ষ্যবহ। উপরন্তু আমরা দেখলাম মশা নিধনে ওষুধ আমদানির ক্ষেত্রে তুঘলকি কাণ্ড। আমরা জানি না, এরই বা প্রতিবিধান কতটা কী হয়েছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার দিকটি যদি আমরা পর্যালোচনা করি তাহলে স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয়, এ বছরের জুনে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি বিবেচনায় বিদ্যমান বাস্তবতা জরুরি পরিস্থিতি হিসেবে ঘোষণা করার তাগিদ দিয়ে জনস্বাস্থ্যবিদেরা যে সুপারিশ করেছিলেন তাও আমলে নেওয়া হয়নি। এ সম্পাদকীয় স্তম্ভেই আমরা বলেছিলাম, ডেঙ্গু আক্রান্ত সবার জন্য চিকিৎসার পথ মসৃণ করাসহ চিকিৎসা ব্যয়ের বিষয়ে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়ার তাগিদ দিতে হবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, একদিকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় স্বাস্থ্যসেবার পরিসর কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বাড়েনি, অন্যদিকে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসা ব্যয় সাধারণের নাগালের বাইরে। আমরা পুনরায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়ে যথাযথ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পথনির্দেশনা অনুসরণের আহ্বান জানাই। জনস্বাস্থ্যের এত বড় সংকট কোনোভাবেই উপেক্ষিত থাকতে পারে না। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা