বিশ্বকাপ ফুটবল ২০৩৪
ইকরামউজ্জমান
প্রকাশ : ২১ নভেম্বর ২০২৩ ১৭:১৪ পিএম
মধ্যপ্রাচ্যের আরব বিশ্বে আবার বিশ্বকাপ ফুটবল উৎসবের আয়োজন নিশ্চিত এটা বলা যায়। ২০২২ সালে কাতার বিশ্বকাপের পর এবার ২০৩৪ সালে বিশ্বকাপে এককভাবে স্বাগতিক দেশ হওয়ার জন্য বিডিংয়ের শেষ তারিখ পর্যন্ত যেহেতু আর কোনো দেশ উৎসাহ দেখায়নি। তাতে বলা যায়, ২০৩৪ বিশ্বকাপ ফুটবল উৎসব হতে যাচ্ছে আরব বিশ্বে অর্থনীতিতে সমৃদ্ধতার দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা দেশ সৌদি আরবে। আনুষ্ঠানিকভাবে ফিফার গভর্নিং বোর্ড অবশ্য এ বিষয়ে তাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা জানায়নি। ফিফা সৌদি আরবের বিডিংয়ের সব নথিপত্র এখন পরীক্ষানিরীক্ষা করছে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য।
২০৩৪ সালের জন্য ওশানিয়ার অস্ট্রেলিয়া একপর্যায়ে উৎসাহ দেখিয়েছিল ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরকে সম্পৃক্ত করে। শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া বিভিন্ন যৌক্তিক কারণে বিডে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থেকেছে। এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন (এএফসি)-এর শতভাগ সমর্থন নিয়ে সৌদি আরব বিডে অংশ নিয়েছে। এএফসি থেকে বলা হয়েছে, সৌদি আরবের বিজয় এশিয়ান ফুটবল ঐক্যের জয়। সৌদি আরবে বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজনের মাধ্যমে মহাদেশের ফুটবল আরেক ধাপ এগিয়ে গেল। এশিয়ার প্রথম বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় ২০০২ সালে। দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান ছিল যৌথভাবে স্বাগতিক দেশ। এরপর ২০২২ সালের শীতে অনুষ্ঠিত হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের কাতারে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ। এবার তৃতীয় আসর দি এশিয়ার সৌদি আরবে ২০৩৪ সালে। বিশ্বকাপে ফুটবল আয়োজনের জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত আধুনিক ক্রীড়াকাঠামো, সহজ যোগাযোগব্যবস্থা, সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো দেশের শক্ত অর্থনীতি, সরকার এবং সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন ও সহযোগিতা। বিশ্বকাপ আয়োজনের কয়েক বছর ধরে প্রস্তুতি পর্ব এবং এরপর সুষ্ঠুভাবে সমাপ্তিই শেষ কথা নয়! এরপর বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজনের জের বহন করতে হবে দেশের জনসাধারণকে কয়েক বছর ধরে। গত বছর কাতারে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় শীতকালে। তাতে ইউরোপের বিভিন্ন লিগের খেলা বাধ্য হয়ে বিরত রাখতে হয়েছে, কিছু তাড়াহুড়া করে সম্পন্ন করা হয়েছে। ফলে খেলোয়াড়রা পর্যাপ্ত বিশ্রাম পাননি। সৌদি আরবে গ্রীষ্মের গরমে বিশ্বকাপ আয়োজন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সৌদি আরবে গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা অনেক সময় ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়। এত গরমে ফুটবল খেলা বা দর্শকরা খেলা উপভোগ করতে পারবেন না। সৌদি আরবে অবশ্য কিছু জায়গায় আবহাওয়া খুব চমৎকার। তা ছাড়া এখন তো স্টেডিয়ামে তাপ নিয়ন্ত্রণ করাও সম্ভব। সম্প্রতি এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন সৌদি অ্যারাবিয়ান ফুটবল অ্যাসসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট। তিনি জানিয়েছেন সৌদি আরব সামার ও উইন্টারে যেকোনো সময় ফুটবল আয়োজনে প্রস্তুত।
কাতার বিশ্বকাপ ঘিরে প্রচুর সমালোচনা ও তর্কবিতর্ক করেছে পশ্চিমা মিডিয়ায় কয়েক বছর কাতারের সাংগঠনিক সামর্থ্য, আরব বিশ্বের সংস্কৃতি, রীতিনীতি ও সামাজিক অনুশাসন নিয়ে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফিফা জানিয়েছে, কাতার বিশ্বকাপ সবচেয়ে সফল বিশ্বকাপ। আয়োজন ও অর্থনৈতিক দিক থেকে। ফিফার আয়ের পুরোনো রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। ফিফার আরও পর্যবেক্ষণ হলো, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ফুটবলরসিকরা কাতারে আতিথেয়তায় মুগ্ধ। তারা ফুটবল উৎসব উপভোগ করেছে। সৌদি আরব কয়েক বছর ধরে সব খেলাধুলার প্রতি বিশেষ নজর দিয়েছে। ১৯৭৬ সালে শুরু হয় তাদের প্রিমিয়ার ফুটবল লিগ। তাদের ক্লাব ফুটবলের এখন রমরমা অবস্থা। প্রতিটি ক্লাবের পেছনে আছেন একঝাঁক বিত্তশালী ক্লাব সংগঠক। সৌদি ক্লাবগুলোয় বিশ্বের অনেক ফুটবল তারকার ভিড় বাড়ছে। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, নেইমার সবাই বেজায় খুশি সৌদি প্রিমিয়ার লিগে খেলতে পেরে। অর্থ সব সময় কথা বলে। সৌদি প্রিমিয়ার লিগ আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বিভিন্নভাবে অনেক রেকর্ডের জন্ম দেবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। অনেক কিছুতে ছাড়িয়ে যাবে ইউরোপের অনেক ক্লাবকে।
সৌদি আরবে ফুটবলের জনপ্রিয়তা এখন তুঙ্গে। কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে পরাজিত করে অনেক বড় হইচইয়ের জন্ম দিয়েছে সৌদি আরব। এরপর বিশ্বকাপে এগিয়ে যেতে না পারলেও ঠিকই এ বিজয়কে 'ক্যাপিটাল' করতে সক্ষম হয়েছে দেশটি। তারা ফুটবলে সংস্কার সাধন ছাড়াও ক্লাব ফুটবল সংস্কৃতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন সাধন করছে। সৌদি আরব এখন থেকেই ২০৩৪ বিশ্বকাপ সামনে রেখে জাতীয় দল গঠনের পরিকল্পনা সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে। সৌদি আরব তাদের রক্ষণশীল অবস্থান থেকে অনেক সরে এসেছে। তারা পর্যটন ও বিদেশি বিনিয়োগকে গুরুত্ব দিচ্ছে। ২০১৯ সাল থেকে সৌদি আরব অমুসলিম পর্যটকদেরও ভিসা দিচ্ছে। কাতারের পর সৌদি আরব আরেকটি মুসলিম দেশ যারা ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজন করতে যাচ্ছে। তারা বিশ্বাস করছে, ফুটবলের নির্মল বিনোদন অনেক সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম।
৪৮ দেশের বিশ্বকাপ এককভাবে আয়োজন করবে সৌদি আরব। যারা ভাবছেন সৌদি আরবকে অনেক নতুন ক্রীড়াকাঠামো তৈরি করতে হবে বিশ্বকাপের জন্য, তা কি সময়মতো, ফিফার চাহিদা অনুযায়ী করা সম্ভব হবে? আত্মবিশ্বাসী সৌদি অ্যারাবিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের মুখপাত্র জানিয়েছেন, সবকিছুই সৌদি আরব সম্ভব করবে সময়মতো। মানবাধিকার, গণতন্ত্রহীন সমাজ, নারী স্বাধীনতা নিয়ে পশ্চিমাদের ভ্রান্ত ধারণাগুলোর জবাব তারা পাবেন যারা এসব বিষয় নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। কারণ সামগ্রিকভাবেই পালটে গেছে প্রেক্ষাপট। সৌদি আরবের সামাজিক মূল্যবোধ এবং সাম্যময় সমাজে ফুটবলের উৎসব স্মরণীয় করে রাখার সব উদ্যোগ নেওয়া হবে ।