পরিপ্রেক্ষিত
মাহজাবিন আলমগীর
প্রকাশ : ২১ নভেম্বর ২০২৩ ১৭:১১ পিএম
নির্বাচন ব্যবস্থা ও সরকার পরিবর্তনের লক্ষে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর আহ্বানে ইতোমধ্যে কয়েক দফায় হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালিত হলো। তাদের ভাষায়, তা অত্যন্ত সফল হয়েছে। কিন্তু গণতান্ত্রিক অধিকারের নামে চলমান আন্দোলনে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় বাসে আগুন লাগানো হয়, যা ব্যাপকভাবে জনমনে শঙ্কা বাড়িয়েছে। শঙ্কা নিয়েই মানুষ কর্মক্ষেত্রে যাচ্ছে। কিন্তু নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনায় শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে যেতে প্রতিকূলতার মুখে পড়ছে অনেক ক্ষেত্রে। ফলে তাদের শিক্ষাজীবনে ব্যাঘাত ঘটছে। স্কুলগুলোতে বার্ষিক পরীক্ষার আর বেশি সময় বাকি নেই। কোথাও কোথাও শুরুও হয়েছে। অনেক বিদ্যালয়ে অবরোধ কর্মসূচির জন্য পরীক্ষার সময় পেছানো হয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনে ক্ষতি ক্রমেই বাড়ছে। রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের জন্য রাজনৈতিক দলগুলো কর্মসূচি দি দিতে পারে। কিন্তু রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের নামে জ্বালাও-পোড়াও মেনে নেওয়া। যায় না। জনগণ যদি স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ না নেয় তাহলে তাদের অংশগ্রহণ করানোর জন্য গঠনমূলক উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। মনে রাখা বাঞ্ছনীয়, বাসে আগুন লাগিয়ে কিংবা অবরোধ করে রাজনৈতিক কর্মসূচি সফল করা সম্ভব নয়।
অতীতেও লাগাতার অবরোধ অবরোধ কর্মসূচি বাস্তবায়নে অগ্নিসন্ত্রাস করে আন্দোলনকারীরা তাদের দাবি আদায় করতে পারেনি। এবারও পারবে তেমনটি কিন্তু নয়। অগ্নিসংযোগে যানবাহনে আগুন জ্বলছে। জনমনে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। সম্পদ বিনষ্ট হচ্ছে। ইতোমধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হয়েছে। আন্দোলনকারীরা জানিয়েছে তারা আরও কঠোর কর্মসূচিতে যাবে। জনমনে শঙ্কা বাড়িয়ে ও জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করে এমন কর্মসূচি আর কত কঠোর হতে পারে? দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি জনজীবনে দুর্ভোগ বাড়িয়েছে। খাদ্যপণ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার নাগালের বাইরে। মানুষের এই দুরবস্থা নিয়ে বিরোধী দলগুলোর কর্মসূচি দৃশ্যমান নয়! ক্ষমতার লিঙ্গায় দেশবাসীকে জিম্মি করে ক্ষমতায় যাওয়া কিংবা টিকে থাকা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সিদ্ধ নয়। অবরোধ কর্মসূচি ক্ষয়ক্ষতির চিত্র স্ফীত করছে। তারপরও হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে। জাতীয় সম্পদের অপচয় এবং দেশবাসীকে শঙ্কা-আতঙ্কের মুখে ঠেলে দেওয়া ছাড়া কার্যত কোনোই রাজনৈতিক সাফল্য আন্দোলকারীরা দেখাতে পারছে না।
শাসক বদলের রাজনীতিতে সাধারণ মানুষের কোনো প্রাপ্তি আছে বলে তো মনে হয় না। আমাদের অভিজ্ঞতা কিন্তু তাই বলে ক্ষমতায় থাকা এবং ক্ষমতায় যাওয়ার দ্বন্দ্ব-সংঘাতে আমরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি। নির্বাচনে একদল জিতবে অপর দল হারবে। এটাই তো গণতান্ত্রিক ব্যবস্তার রীতি। যে অবস্থা চলছে তাতে আমরা তো যে বৃত্তে ছিলাম ও আছি, এর ফল তো ভালো হতে পারে না। আমাদের সামনে প্রকৃতই কোনো দিশা আছে বলে হয় না। ক্ষমতা বদলের বিদ্যমান রাজনীতি আমাদের সমষ্টিগত মানুষের অতীতেও ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারেনি, আগামীতেও পারবে ঙ্কিনা এ নিয়ে বিতর্ক হতেই পারে। প্রয়োজন বিদ্যমান ব্যবস্থার বদল। জনশান্তি, নিরাপত্তা ও জনঅধিকার নিশ্চিত করার দায় রাজনীতি সংশ্লিষ্ট সবার। শংকার আগুন নেভাতেই হবে।